অভিরূপ দাস: ভাইরাসের সংক্রমণে কাজ করছে না মায়ের যকৃৎ! সেই অসুখ যেন বাসা না বাঁধে জঠরের সন্তানের মধ্যেও। গর্ভাবস্থায় মায়ের হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থাকলেও তা যেন শিশুর মধ্যে প্রবাহিত না হয়, সেই লক্ষ্যে এমটিসিটি বা মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন শূন্য করতে কড়া প্রহরা প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে। ২০২৬-এর ডিসেম্বরের মধ্যে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি আর সিফিলিসের ক্ষেত্রে মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন শূন্য করা লক্ষ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের।
অতি সম্প্রতি শহরের এক কর্মশালায় তেমনই বার্তা দিলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. স্বপন সোরেন। কর্মশালায় হাজির ছিলেন ডা. পল্লব ভট্টাচার্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হেপাটাইটিস এবং যৌনবাহিত অসুখ সংক্রান্ত উপদেষ্টা ডা. পো লিন চান, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. ডিসিএস রেড্ডি-সহ সরকারি হাসপাতালের একাধিক আধিকারিকরা। মায়ের থেকে শিশুর এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ঠেকাতে স্টেট টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। তার উপদেষ্টা ডা. পল্লব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দেশের মধ্যে প্রথম বাংলায় তৈরি হয়েছে মায়ের থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমণ ঠেকানোর এই মডেল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তা প্রশংসিত হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে গর্ভবতী মায়েরা চেকআপ করাতে আসেন। তাঁদের স্ক্রিনিংয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। যদি দেখা যায়, মা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত সেক্ষেত্রে প্রসবের ২৭ সপ্তাহে বিশেষ ওষুধ চালু করা হচ্ছে।
কী কী প্রক্রিয়ায় ঠেকানো যাবে মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন? তার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে স্বাস্থ্যদপ্তরে কাজ শুরু হয়েছে আগেই। এবার তৈরি হচ্ছে একটি ম্যাথমেটিক্যাল মডেল। উদ্দেশ্য কী? "আমরা কলোন মডেল তৈরি করছি। তাতে দেখা হবে কাঙ্ক্ষিত জায়গার চেয়ে আমরা কত দূরে আছি", জানিয়েছেন ডা. পল্লব ভট্টাচার্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও সমস্ত গর্ভবতী মায়ের এইচআইভি পরীক্ষা, এইচবিএসজি বা হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বাংলায় এইচআইভি পজিটিভ মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ প্রায় ষোলো আনা ঠেকানো গিয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত তিন-চার বছরে একজনও পজিটিভ মায়ের সন্তান পজিটিভ হয়ে জন্মায়নি। বাকি ভাইরাসঘটিত রোগের ক্ষেত্রেও ইমিউনিটির পাঁচিল তুলে সন্তানের মধ্যে রোগ সংক্রমণ ঠেকানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
