সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজকের ছোট ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তির জালে এতটাই জড়িয়ে পড়েছে যে, মাঠের খেলাধুলো তাদের জীবন থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে যোগাসন তাদের জীবনে এক নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে।
'যোগ' শুধু শারীরিক ব্যায়াম নয়। এটি মন ও শরীরের এক সুষম সংযোগ। বাচ্চাদের যদি ছোটবেলা থেকেই যোগাসনে অভ্যস্ত করানো যায়, তাহলে এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।
প্রথমত, যোগাসন বাচ্চাদের শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি তাদের পেশি, হাড় মজবুত ও সুগঠিত করে তোলে। শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। একটানা মোবাইল বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার ফলে যে কুঁজো হয়ে বসার প্রবণতা বা ঘাড় ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়, যোগাসন তা প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিভিন্ন 'আসন' যেমন বৃক্ষাসন, ত্রিকোণাসন, বা ভুজঙ্গাসন দেহের ভারসাম্য এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয় বৃদ্ধিতে সহায়ক।
দ্বিতীয়ত, যোগাসন বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে এবং মানসিক অস্থিরতা কমায়। 'প্রাণায়াম' বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে শান্ত করে, স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়। আজকের প্রতিযোগিতামূলক জীবনে বাচ্চাদের উপর পড়াশোনার যে চাপ, তা সামলাতে যোগাসন তাদের মানসিক শক্তি জোগাবে। এর ফলে তাদের একাগ্রতা বৃদ্ধি পাবে এবং পড়াশোনায় আরও ভালো ফল করতে পারবে।
তৃতীয়ত, যোগাসন বাচ্চাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। যোগের নিয়মিত অনুশীলন তাদের মধ্যে ধৈর্যের জন্ম দেয়। নিজেদের শরীরের প্রতি আরও সচেতন ও যত্নবান করে তোলে। যোগাসনের কঠিন ভঙ্গিমা আয়ত্ত করতে পারলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। দলবদ্ধভাবে যোগ অনুশীলন করলে সামাজিক দক্ষতাও বাড়ে।
যদি যোগাসনকে খেলার ছলে বা গল্প বলার ঢঙে বাচ্চাদের শেখানো যায়, তাহলে তারা খুব সহজেই আগ্রহী হয়ে উঠবে। প্রাণবন্ত ছবি, মজার নামযুক্ত আসন, ছড়া বা গানের মাধ্যমে পরিবেশন এবং সর্বোপরি শিক্ষকের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ছোটদের আকর্ষণ করবে। অল্প বয়সী বাচ্চাদের জন্য যোগের ক্লাসগুলো মজাদার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। যেদিন থেকে তারা যোগের উপকারিতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবে, সেদিন থেকে নিজেরাই এর প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হবে।
সুতরাং শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, মানসিক শান্তি ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য বাচ্চাদের যোগাসন শেখানো এখন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ আবেদন। সময়ের এই দাবি বাচ্চাদের একটি সুস্থ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে।