shono
Advertisement

জাঙ্ক ফুডে বাড়ছে হৃদরোগ! সুস্থ থাকতে কী করবেন? জেনে নিন চিকিৎসকের পরামর্শ

খাদ্যাভ্যাস বদলাতে পারলেই হার্টের অসুখ অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব।
Posted: 07:24 PM Jul 05, 2023Updated: 09:48 PM Jul 05, 2023

জাঙ্ক ফুডে বাড়ছে হৃদরোগ! সুস্থ থাকতে কী করবেন? কলম ধরলেন  অধ্যাপক ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আজিজুল হক। 

Advertisement

অতি প্রচলিত একটা কথা, ‘ডু ইওর পার্ট, কেয়ার ফর ইওর হার্ট।’ অর্থাৎ হার্টের যত্নের যে যে মোক্ষম দাওয়াই আমজনতার হাতে রয়েছে সেগুলো ঠিকমতো মানলেই হার্ট ভাল রাখা সম্ভব। সোজা কথায়, কিছু নিয়ম যদি আমরা ঠিকমতো মেনে চলি, তাহলে আচমকা মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে না। কিন্তু ক’জনই বা সব জেনে বুঝে, পরিণতি অনুমান করেও সব মেনে চলে বলুন তো!  

স্থূলতার নেপথ্যে রয়েছে ফাস্ট ফুড।

সবচেয়ে অবাক লাগে, রোগী চেম্বারে এসে ভয়ানক সমস্যার কথা বলছেন, এদিকে রাতে কী খান জিজ্ঞাসা করলে বলেন, সপ্তাহে ২-৩ দিনই রেস্তোরাঁর থেকে আনিয়ে। অসুস্থ, রান্না করতে কষ্ট। এদিকে বাইরের খাবার খেয়ে চলেছে। এতে করে কি হার্ট ভাল থাকবে? তাই শুরুতেই একটা ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া প্রয়োজন। ২০১৫ সালে শুধুমাত্র স্থূলতার কারণে পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৪ কোটি মানুষ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই স্থূলটার নেপথ্যে রয়েছে ফাস্ট ফুড। আজ সকলে চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্কস, পিৎজা, বার্গার, রোল মুড়ি-মুড়কির মতো খাচ্ছেন।

[আরও পড়ুন: গ্যাস, অম্বল, বুকে জ্বালা, পেটের সমস্যায় জীবন জেরবার, এই ভুলগুলি করছেন না তো?]

শুধু কিশোর-কিশোরীরা নয়। চল্লিশ থেকে ষাট। বাদ যাচ্ছেন না কেউ। সকলের মধ্যেই এই ফাস্ট ফুড খাওয়ার অভ্যেস গজিয়ে উঠেছে। চিন্তার বিষয় হলো এই ফাস্টফুডগুলোয় কোনও পুষ্টিকর উপাদান নেই। ফলে এগুলো খেতে উপাদেয় এবং সুস্বাদু হলেও শরীরের উপকার কিচ্ছু করে না। আজকাল প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যাপক চাহিদা। বাড়ির খুদে সদস্য আলুই খাবে। কিন্তু সেটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। আলুসিদ্ধ নয়। ছাঁকা তেলে ভাজা এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে ক্যালোরি প্রচুর। এদিকে সারাদিন তেমন কোনও পরিশ্রমও নেই। শিশু, অভিভাবক সকলেই কম্পিউটারের সামনে বসে। এক্সারসাইজ করলে শরীরের ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। কিন্তু যখন পরিশ্রম করছেন না শুধু ফাস্ট ফুড খেয়েই চলেছেন তখনই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালোরি (Calorie) শরীরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। একবার পড়াশোনা করে জেনে নিতে পারেন কোন খাবারে কতটা ক্যালোরি। আর তাহলেই বুঝবেন ফাস্ট ফুডের বিপদ। একটি মাঝারি মাপের আটার রুটিতে থাকে ৭০ ক্যালোরি। আর ছাঁকা তেলে ভাজা আলুর পুর ভরা মাঝারি মাপের শিঙাড়াতে থাকে ১২৩ ক্যালোরি। বুঝতেই পারছেন ভাজাভুজি খাওয়ার বিপদ।

ছাঁকা তেলে ভাজা আলুর পুর ভরা মাঝারি মাপের শিঙাড়াতে থাকে ১২৩ ক্যালোরি।

শশা, গাজর, পিঁয়াজের স্যালাড কিন্তু স্বাস্থ্যকর। তবে সেই স্যালাডে স্বাদ আনতে অনেকে আবার নানাভাবে সাজান। সেটাও বিপদ। তখন স্যালাড খাওয়া হলেও ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মেয়োনিজেও থাকে মারাত্মক ক্যালোরি।

প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ক্যালোরি খেলে ওজন বাড়তে থাকে দ্রুত। গবেষণা বলছে ৩৫-৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন হার্ট অ‍্যাটাকের অন‍্যতম কারণ। আসলে, স্থূলতা ধমনিতে ফ্যাট জাতীয় পদার্থ বাড়িয়ে তোলে। হৃদপিণ্ডে রক্ত ​​বহনকারী শিরাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে। ক্রমশ তা সরু সরু হতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখনই ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাক দেখা যায়। পরিবারে যদি হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকে তবে প্রক্রিয়াজাত হিমায়িত খাবারগুলি বাদ দিন। কমাতে হবে চিনি, নুন। কারণ এতেও অত্যধিক মাত্রায় ক্যালোরি থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার নরম পানীয় ও সোডাযুক্ত পানীয়তে চিনির মাত্রা অনেকটাই বেশি থাকে। আর চিনিতে ক্যালোরির পরিমাণ সাংঘাতিক।

মরশুমি শাক-সবজি ও ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে।

হার্ট ভাল রাখতে মরশুমি ফল, শাক-সবজি খান। বিদেশি কিউয়ি ফল না খেয়ে বর্ষায় আনারস, জ্যৈষ্ঠে আম, কাঁঠাল খান। অবশ্যই পরিমিত। মরশুমি শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন (Vitamin), খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে। এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ধমনির কার্যকারিতা বাড়ায় নাইট্রেট সমৃদ্ধ শাক-সব্জি। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে টম‌্যাটোর (Tomato) জুড়ি মেলা ভার। স্যালাডে অবশ্যই টমেটো রাখুন। টমেটোতে লাইকোপিন নামক একটি পদার্থ রয়েছে। যা হার্টের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হার্ট অ্যাটাক ঠেকিয়ে রাখতে পারে। হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার একান্ত জরুরি। পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খেলে তা শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমায়। এ ছাড়াও শিরা-ধমনিতে চাপ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। তার জন্য দামী দামী খাবার কেনার প্রয়োজন নেই। অত্যন্ত সাধারণ সবুজ শাক-সবজি, মাশরুম, কড়াইশুঁটি, টম‌্যাটো, কলাতেই রয়েছে সেই প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম।

টমেটোতে থাকা লাইকোপিন নামক পদার্থ হার্টের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হার্ট অ্যাটাক ঠেকিয়ে রাখতে পারে।

শুধু খাদ্যাভ্যাস বদলাতে পারলেই হার্টের (Heart) অসুখ অনেকটাই রুখে দেওয়া সম্ভব। ভরপেট খেয়ে অসুস্থ হওয়ার চেয়ে, কম খেয়ে সুস্থ থাকা অনেক ভাল উপায়। টেস্টি খাবার খাওয়া মানেই ভাল খাওয়া নয়। কতটা পুষ্টি মিলছে, সেটাই আসল হার্টের জন্য। জীবন তো একটাই!

[আরও পড়ুন: শাঁখ বাজাতে জানেন? তাহলে শরীরের এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পেতে পারেন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement