সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে নেমেছে আন্দ্রে রাসেলদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উলটো দিকে পাপুয়া নিউ গিনির (Papua New Guinea Cricket Team) মতো অ্যাসোসিয়েট দেশ। জয় তো শুধু সময়ের অপেক্ষা রস্টন চেজদের জন্য। জয় এল ঠিকই, তবে পুরোদস্তুর পরীক্ষা নিলেন পিএনজি-র আসাদ ভালারা। কোথাও যেন একটা সুপ্ত বার্তাও রইল ক্রিকেটবিশ্বের জন্য। তার পর যদিও হারতে হয়েছে উগান্ডার কাছে। কিন্তু তাঁদের উন্মাদনায় বিন্দুমাত্র চিড় খাচ্ছে না।
আর পাঁচটা অ্যাসোসিয়েট দেশের যাত্রা যেরকম হয়, পাপুয়া নিউ গিনির পথও আলাদা কিছু ছিল না। পরিকাঠামোর সমস্যা, আর্থিক অভাব সবই ছিল সঙ্গে। অথচ উৎসাহে কোনও অভাব নেই। হাজারও আগ্রহী মুখ ক্রিকেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভারত হোক বা অস্ট্রেলিয়া, যে কোনও জার্সি পেলেই মাঠে নেমে পড়েন তাঁরা। সেই দেশ প্রথমবার বিশ্বকাপের সুযোগ পেল ২০২১-র টি-টোয়েন্টির যুদ্ধে।
[আরও পড়ুন: ‘আমার স্যুট তৈরি…’, শেষ ম্যাচের আগে কেন একথা বললেন সুনীল ছেত্রী?]
প্রথম ম্যাচটা কারওর ভোলার কথা নয়। ওমানের সঙ্গে লড়াইয়ের আগে পাপুয়া নিউ গিনির প্লেয়াররা কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্লেয়াররা। ১৯৭৩-এ আইসিসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর এতগুলো বছর অপেক্ষা করা তো মুখের কথা নয়। এবছরও দেখা গেল একই দৃশ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নামার আগেও প্রত্যেকের চোখে জল। আর তার পরই রাসেলদের একপ্রকার শাসন করলেন পাপুয়া নিউ গিনির প্লেয়াররা।
এই সাফল্যের কৃতিত্বের দাবিদার কে? সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ঘুরে আসতে হবে হানুয়াবাদা গ্রামে। এই গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন জাতীয় দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার। সমুদ্রের মাছ ধরাই তাঁদের প্রধান জীবিকা। আর সময়-অসময়ে নেমে পড়ে ব্যাট বল হাতে। ভারতের সঙ্গে আলগোছে একটা মিল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। পার্থক্য হল ভারতের মতো সাপ্লাই লাইন নেই। পেশাদারিত্ব তো অনেক দূরের কথা। শুধুই ভালোবাসার জন্য খেলে যাওয়া। সেটাই তাঁদের অক্সিজেন জুগিয়েছিল কোভিডের সময়। চূড়ান্ত দুঃসময়ে তাঁদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলত একমাত্র ক্রিকেট। পোর্ট মোরেসবাই থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত গ্রাম থেকে ১৪ জন আছেন পাপুয়া নিউ গিনির ১৭ জনের স্কোয়াডে।
হানুয়াবাদা যদি দেশের ক্রিকেট রাজধানী হয়, তাহলে রাজা-রানিও থাকা উচিত। তাঁরাও আছেন। পাপুয়া নিউ গিনি পুরুষ দলের অধিনায়ক আসাদ ভালা এবং মহিলা দলের পাউকে সিয়াকা। এই দম্পতিই বর্তমানে দেশের ক্রিকেটের মুখ। ভালা পাপুয়া নিউ গিনির সর্বোচ্চ রানস্কোরার। সিয়াকাও অধিনায়ক ছিলেন দীর্ঘদিন। পৃথিবীর প্রায় ৩০টি দেশে ঘুরে বিভিন্ন দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন তাঁরা। আর আছে আমিনি পরিবার। প্রায় তিন প্রজন্ম ধরে যাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। এখন উত্তরাধিকার সামলাচ্ছেন চার্লস আমিনি। তাই এগারোজন মাঠে নামলে শুধু একটা দল খেলে না, দেশের মানুষরা দেখে একটা একান্নবর্তী পরিবারকে। গ্রামের কাদা রাস্তা থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চ, রূপকথার 'রাজা-রানি'কে দেখেই ক্রিকেটের জন্য এগিয়ে আসছে নতুন প্রজন্ম।