অভিষেক চৌধুরী, কালনা: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহান ব্যক্তিদের আবক্ষ মূর্তি বসে। প্রথম প্রথম সেই মূর্তির দেখভাল করেন অনেকে। তার পর অবহেলিতভাবে পড়ে থাকে সেই সমস্ত মূর্তি। কালনায় কিন্তু তার উলটো ছবি। গত ৫ বছর ধরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের (Kazi Nazrul Islam) আবক্ষ মূর্তির দেখভাল করে চলেছেন এক শিক্ষক। নিয়মমাফিক সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে নিজের হাতে ধুয়েমুছে সাফ করেন সেই মূর্তি। যা এককথায় নজিরবিহীন।
কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী হোক কিংবা মৃত্যুদিন, বিশেষ দিনগুলিতে একসময়ে তাঁর কবিতা পাঠের মধ্য দিয়েই জেগে উঠত পূর্ব বর্ধমানের শহর কালনা (Kalna)। পুবের আকাশ ফরসা হতেই কচিকাঁচাদের সঙ্গে নিয়ে শহরের রাস্তায় পাঠ করতেন কবি নজরুলের কবিতা। নিয়মিত না হলেও এখনও কবিতা পাঠ করেন ৬৭ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দীপঙ্কর সাহা। শুধু বিদ্রোহী কবির কবিতা পাঠই নয়, কবির আবক্ষ মূর্তিকে সযত্নে পরিষ্কার করে দেবতা জ্ঞানে পুজো করে চলেছেন তিনি। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার কবির ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনের প্রাক্কালে সোমবার সকাল থেকেই মূর্তিকে পরিষ্কার করেন তিনি। ধূপ-ধুনো দিয়ে কার্যত পুজো সেরেছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে ছাড়াই নবান্নে লোকায়ুক্ত ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়ে আলোচনা, নাম প্রস্তাব মমতার]
এপ্রসঙ্গে দীপঙ্কর সাহা বলেন, “কবি নজরুলের কবিতা, সংগীত, দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা জোগায়। আমার মা শান্তি সাহা ও মাসিদের নজরুল প্রেম, কবিতা পাঠ, নজরুল গীতি শুনে মোহিত হয়ে পড়তাম। আর এতেই মনের খিদে মিটে যেত। সেই ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতেই তাঁর মূর্তি পরিষ্কারের কাজ নিজের ইচ্ছাতেই করি।”
কালনা শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁসারি পাড়ার বাসিন্দা দীপঙ্কর সাহা। সাত বছর আগে হাই স্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কবিতা পাঠ থেকে নিজেকে বিরত রাখেননি। বাড়িতে কবির ছোট একটি মূর্তি রেখে নিয়মিত তাঁকে স্মরণ করতেন প্রাক্তন শিক্ষক। ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট কালনা শহরের অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের সামনেই কবি নজরুল ইসলামের আবক্ষ একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি বসানো হয়। তারপর থেকেই নিজের ইচ্ছেতেই ৫ বছর ধরে নিয়ম করে প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ও সন্ধেয় সাবান, শ্যাম্পু ও জল দিয়ে সেই মূর্তি নিজের হাতে ধুয়ে মুছে সাফ করেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘পেট্রল-ডিজেলে সেস কমায়নি, রাজ্যের ঘাড়ে বোঝা চাপাচ্ছে কেন্দ্র’, রাজস্বে ক্ষতি নিয়ে তোপ মমতার]
রামেশ্বর শা নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “প্রায় দিনই ওই শিক্ষক সন্ধের সময় এসে কবির মূর্তিতে প্রণাম জানিয়ে ধূপ দেখান। পাঁচ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহেই উনি মূর্তিটিকে নিজের খরচে শ্যাম্পু, সাবান দিয়ে ধোয়ার কাজও করেন। মণীষীদের মূর্তি সংরক্ষণে ওঁর এই কাজ খুবই উল্লেখযোগ্য।”
কালনা শহরে বিভিন্ন মণীষীদের মূর্তি বসানোয় উদ্যোগী তরুণ সেনের তৎপরতায় নজরুলের মূর্তিটি বসানো হয়। তিনি বলেন, “মূর্তিটি বসানোর পর থেকেই বছরভর সযত্নে তাঁর রক্ষণাবেক্ষণ করেন নজরুল পাগল দীপঙ্কর সাহা। একসময় বিদ্রোহী কবির অনুষ্ঠানগুলিতে কচিকাঁচাদের নিয়ে শহরের রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন। তাঁর কবিতা পাঠে মুখরিত হয়ে উঠত এই শহর।”