সৈকত মাইতি, তমলুক: যাকে বলে রীতিমতো ভরাডুবি। লোকসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যজুড়ে যখন সবুজ আবিরে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মাতছে, সেখানে তমলুক লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফল দেখে 'অনুশোচনা'য় কান্নায় চোখের জল বাঁধ মানছে না দলীয়কর্মী-সমর্থকদের অনেকেরই। জেলা শিল্প শহর হলদিয়া থেকে শুরু করে তমলুক, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল, নন্দকুমার প্রায় সমস্ত বিধানসভা এলাকাতেই রাজ্যের শাসক দলের ভোট ব্যাঙ্কে ধস রীতিমতো কপালে চিন্তায় ভাঁজ ফেলেছে শীর্ষ নেতৃত্বের।
উল্লেখযোগ্যভাবে জেলা সদর শহর অর্থাৎ যে তমলুক বিধানসভা থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একাধিকবার রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হয়েছিলেন অধ্যাপক সৌমেন কুমার মহাপাত্র, সেই বিধানসভাতেই প্রায় ২০ হাজার ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে পরে তৃণমূল। আর এই পার্থক্যই যেন ভরাডুবির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দলের কাছে। ফলে বিগত দিনে একাধিক পর্যালোচনা বৈঠক সভা থেকে ঐক্যের বার্তা দিয়ে সংগঠনকে সঙ্ঘবদ্ধ করার চেষ্টা হলেও সেটা যে একেবারে বিফলে গেছে তা বলাই বাহুল্য। উঠে আসছে একাধিক অন্তরঘাতের অভিযোগ। আর তাতেই রীতিমতো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে লোকসভা নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীকে। একরাশ এমন অভিযোগ তুলে রীতিমতো শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই সোশাল মিডিয়ায় জুড়ে সরব দলের অনুগত সৈনিকরা।
[আরও পড়ুন: কীভাবে জমি দখল করে টাকা হাতাতেন শাহজাহান? নয়া তথ্য ইডির চার্জশিটে]
জানা গিয়েছে, তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মোট ৭টি বিধানসভা রয়েছে। যার মধ্যে শিল্প শহর হলদিয়া বিধানসভাতেই নিকটবর্তী বিজেপি প্রার্থীর থেকে প্রায় ২১ হাজার ৩০১ ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এভাবেই তমলুক বিধানসভা এলাকায় ১৮ হাজার ২১৭, ময়নাতে ৯ হাজার ৫৪৮, মহিষাদল ৯ হাজার ৬৩১, নন্দীগ্রামে ৭ হাজার ২৯৮, কোলাঘাট অর্থাৎ পূর্ব পাশকুড়া বিধানসভায় ২ হাজার ৬১৮ এবং নন্দকুমারে ৭ হাজার ৩৪২ ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। এমনকি পোস্টাল ভোটেও ১ হাজার ৭৭৮ ভোটে পিছিয়ে পড়ে শাসক দল তৃণমূল। আর তাতেই খুব সহজেই জয়ের পথ সুগম হয় বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা সদর শহর তমলুক বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপির তুলনায় তৃণমূল পিছিয়ে পড়ে প্রায় ২০ হাজার ভোটে। যেখানে ২০২১ সালেই বিধানসভা নির্বাচনে তমলুকে প্রায় ৫৭০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী সৌমেন কুমার মহাপাত্র। তবে যে, প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধান গড়ে এতটা ভরাডুবির কারণ হয়ে দাঁড়াবে এই তমলুক বিধানসভা, সেটা যেন কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূলের নিচু তলার দলীয় কর্মী সমর্থকরা। রীতিমতো দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে সোশাল মিডিয়া জুড়ে সরব হয়েছেন দলেরই একাংশ। যদিও এ বিষয়ে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "দলের মধ্যে এই ফলাফল বিশ্লেষণ চলছে। কীভাবে আমরা প্রায় সব কটি বিধানসভা তেই পিছিয়ে পড়লাম তা নিয়ে দলীয় স্তরে পর্যালোচনা করেই সমস্তটা বলতে পারব। তবে এখনই কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।"