শম্পালী মৌলিক: ব্যক্তিগতভাবে ‘অ্যাভিয়েশন ড্রামা’ ঘরানার ছবি দেখতে পছন্দ করি। তাই সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রানওয়ে ৩৪’ ছবিটি নিয়ে আগ্রহ ছিল। তার উপর অমিতাভ বচ্চন এবং অজয় দেবগণ প্রধান চরিত্রে এই ছবিতে। সুতরাং প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার টান ছিলই। কিন্তু যতটা আগ্রহ নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম, সেই প্রত্যাশা পূরণ হল না সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে।
অজয় দেবগণের পরিচালক হিসাবে তৃতীয় ছবি ‘রানওয়ে ৩৪’ (Runway 34)। এর আগে তিনি ‘ইউ মি অউর হাম’ এবং ‘শিবায়’-এর মতো ছবি বানিয়েছেন। তৃতীয় ছবিতে এসেও পরিচালনার উৎকর্ষের গ্রাফটা প্রায় ঊর্ধ্বমুখী হল না বলা চলে। অথচ চমৎকার বিষয় এবং দুর্ধর্ষ অভিনেতাদের বেছে নিয়েছেন অজয়। সাম্প্রতিক অতীতে ‘নীরজা’, ‘বেল বটম’ কিংবা বাংলায় ‘ককপিট’ দেখেছেন দর্শক। অজয়ের ছবির গল্পের একটা ক্লাইম্যাক্স পয়েন্ট প্রথমার্ধেই দেখানো হয়ে যায়, অন্য ছবিগুলোর সঙ্গে তফাত এখানে।
কীরকম? অজয় (Ajay Devgan) একজন দক্ষ পাইলট বিক্রান্ত খান্নার চরিত্রে। স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সুখের সংসার তার। ছবির শুরুতে দেখা যায় রাতভর পার্টি করে সক্কাল সক্কাল সে এয়ারপোর্ট পৌঁছে যায় এবং কাজে যোগ দেয়। দুবাই থেকে কোচিতে উড়ান চালনার ভার তার। সঙ্গে ফার্স্ট অফিসার তানিয়া (রকুলপ্রীত সিং)। কোচি পৌঁছনোর আগেই আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে। প্রায় ৩৫ হাজার ফিট উঁচুতে ঝড়জলের মধ্যে মারাত্মক টারব্যুল্যান্সের মধ্যে পড়ে প্লেন। ১৫০ জন যাত্রীর জীবন তখন বিক্রান্তের হাতে। তার সাহস-বুদ্ধিমত্তা এবং ভাগ্যের হাতে ঝুলে রয়েছে এতগুলো প্রাণের ভবিষ্যৎ। প্লেন যেখানে নামার কথা, সেখানে নামতে পারে না ‘ভিজিবিলিটি’ কম হওয়ার দরুন। বিক্রান্তকে অন্যদিকে চলে যেতে বলা হয়। বিক্রান্ত যায় সেই পথে। সেখানেও খারাপ আবহাওয়ার দাপট অব্যাহত। কর্তৃপক্ষ এবার পাইলটকে ফের অন্যপথে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু বিক্রান্ত যায় না। বরং আকাশে ঘুরপাক খেয়ে সময় নিয়ে, আগের নির্দেশিত জায়গাতেই ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করতে থাকে। তাকে যে রানওয়েতে নামতে বলা হয়, সেখানে না নেমে সিদ্ধান্ত নেয় ৩৪ নম্বর রানওয়েতেই নামবে যাত্রীদের নিয়ে।
এখানে বোঝা যায় ছবির নামকরণের উদ্দেশ্য। এবার কীভাবে বিমান নামে সেটা প্রথামার্ধে দেখা যায়। দ্বিতীয় পর্বে বিক্রান্ত এবং তানিয়ার বিচার চলে। যে কেন পাইলট উড়ান-কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করার ঝুঁকি নিয়েছিল। আবির্ভূত হন মিস্টার বচ্চন (Amitabh Bachchan), তদন্তকারী উকিল নারায়ণ বেদান্তের ভূমিকায়। অমিতাভের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। তবে তাঁকে আমরা এমন আইনজীবীর চরিত্রে আগেও পেয়েছি। এই কোর্টরুম পর্বটাই দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে চলে। যাঁরা ক্লিন্ট ইস্টউড পরিচালিত টম হ্যাংকস অভিনীত ‘সালি’ ছবিটি দেখেছেন, তাঁরা জানেন এটি একটি অনবদ্য অ্যাভিয়েশন ড্রামা। তুলনার প্রশ্ন নেই। কিন্তু ওই ছবিটির কথা মনে পড়লে এই হিন্দি ছবিটি আর ভাল লাগা মুশকিল। মিস্টার বচ্চনের জন্যই ছবির দ্বিতীয়ার্ধ আকর্ষণীয়। ভাল অভিনয় করেছেন অজয় এবং রকুলপ্রীতও, কিন্তু কিছুতেই নাটকটা তেমন জমে না। এখানেই ছবির খামতি। ছোট্ট চরিত্রে বোমান ইরানিকে ভাল লাগে। ছবির দৈর্ঘ্য কম হতে পারত। পরিচালক অজয় দেবগণের কাছে আরও ভাল ছবির অপেক্ষায় রইলাম।