সুলয়া সিংহ: তার কোনও নাম নেই। সে পরিচিত ভাইজান নামেই। রিয়েল লাইফের পর রিলেও সেই ‘ভাইজান’ রূপেই আবির্ভাব সলমন খানের। রোম্যান্স, অ্যাকশন, দুষ্টের দমন আর দেশপ্রেম- তাঁকে যেভাবে দেখতে অভ্যস্ত দর্শকরা, সেভাবেই কারও ভাই তো কারও জান হয়ে উঠলেন সিনেমাজুড়ে। তাও আবার একেবারে দেশি মেজাজে।
দক্ষিণী চিত্রনাট্যের উপর বহু হিন্দি সিনেমা হয়েছে আগে। সলমন নিজেও করেছেন। তবে তারকাখচিত বিগ বাজেটের বলিউড ছবিতে দক্ষিণী ঘরানাকে ওতপ্রতভাবে মিলে যেতে বড় একটা দেখা যায় না। সেই শাহরুখ খানের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ বক্সঅফিসে ঝড় তুলেছিল। এবার ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জানে’ও মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল বলিউড ও দক্ষিণ। দক্ষিণী ছবির রমরমাই কি কারণ? হতেই পারে। নাহলে সলমনের ছবিতে অতিথি হিসেবে রামচরণের নাচ বেশ অবাক করার মতোই।
[আরও পড়ুন: শিক্ষার পর এবার পুরসভা দুর্নীতিতেও সিবিআই তদন্ত, নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের]
এবার একটু ছবির কাহিনিতে আসা যাক। সলমনের ইদের উপহার ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ (Kisi Ka Bhai Kisi Ki Jaan)। ট্রেলার দেখে খানিকটা ‘ওয়ান্টেড’ ছবির ধাঁচ আঁচ করা গিয়েছিল। তবে এ ছবিতে পুলিশের কোনও অস্তিত্ব নেই। রয়েছে গুন্ডা, বিধায়ক, গ্যাংস্টার আর হিরো। হাততালি আর শিশ দেওয়ার মাঝে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সলমনের গ্র্যান্ড এন্ট্রিতেই তাঁর ভক্তদের উত্তেজনার পারদ চড়ে যায় চড়চড় করে। ছবিতে দিল্লির এক বসতি বাঁচানোর দায়িত্ব সলমনের কাঁধে। অনাথ ভাইজানের তিন ভাই। সকলেই এলিজিবল ব্যাচেলার। তবে ভাইজান বিয়ে করতে চায় না বলে ভাইদের প্রেমও পরিণয়ে বদলাচ্ছে না। তাই ভাইজানের জন্য পাত্রীর খোঁজ শুরু হয়। ভাগ্য সহায়, পাত্রীও মেলে। তবে প্রেম কাহিনির আসল টুইস্ট হল দক্ষিণী পাত্রী অর্থাৎ পূজা হেগড়ের দাদা দগ্গুবতী ভেঙ্কটেশ। তার জীবনের নানা চড়াই-উতরাই নিয়েই এগোয় দ্বিতীয়ার্ধ। বোনের বিয়েতে কি শেষমেশ সে রাজি হয়? আর নিজের বসতি কি বাঁচাতে পারে ভাইজান? এসব নিয়েই ছবি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ ছবিতে ঠিকঠাক কোনও ক্লাইম্যাক্সই নেই। সবটাই যেন জানা। এমনকী শেষ দৃশ্যে সলমন কীভাবে শার্টটি খুলবেন, সেটিও।
খানদের এখন নতুন ট্রেন্ড হয়েছে দীর্ঘ ছবি তৈরি। প্রয়োজন না হলেও যতক্ষণ স্ক্রিনে থাকা যায় আর কী। এ ছবিটি ২ ঘণ্টা ২৪ মিনিটের। যদিও কোনও দরকার ছিল না। বারবার গল্পে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একগুচ্ছ গান। সলমনকে সে সব গানে নাচানোরও কোনও প্রয়োজন ছিল না। তবে অ্যাকশন তুখোড়। বলা ভাল সলমনোচিত। মেট্রোর ভিতরের অ্যাকশন দৃশ্য দেখতে মন্দ লাগে না। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’র দৃশ্য মনে করিয়ে দিয়েও হাততালি কুড়িয়েছেন পরিচালক ফারহাদ সামজি।
এবার প্রশ্ন করতে পারেন কেন এই ছবি দেখবেন? সলমন ফ্যান হয়েও ‘রাধে’ ও ‘অন্তিম’ দেখে যদি হতাশ হন, তাহলে এই ছবি অন্তত আপনার মনোরঞ্জন করবে। তবে সলমনের এবার বোঝা উচিত, লুক বদলালে বা দক্ষিণী সাজে সেজে উঠলেও তাঁর চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে। একহাতে গাড়ি তুলে কিংবা উড়ে গিয়ে ভিলেনকে ঘুসি মেরে আর বেশিদিন দর্শকদের মন কাড়া যাবে না। এবার অন্যভাবে ভাবতেই হবে।