দিব্যেন্দু মজুমদার: চুম্বক রহস্যের পর্দাফাঁস। করোনা টিকা (Corona Vaccine) নেওয়ার পর শরীর নাকি চুম্বকে পরিণত হচ্ছে। তাতেই আকর্ষিত হচ্ছে স্টিলের চামচ, ধাতুর পয়সা, হাতা, খুন্তির মতো জিনিস। এমন একাধিক খবর মিলেছিল। শিলিগুড়ির নেপাল চক্রবর্তী, তেহট্টের প্রবীর মণ্ডল, বসিরহাটের শংকর প্রামাণিক এই কারণেই রাতারাতি খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। সেই রহস্যের কিনারা হল। দেখা গেল, শরীরে পাউডার মাখিয়ে দিলেই আর কোনও কিছু আটকে থাকছে না। সুতরাং ভ্যাকসিনের সঙ্গে দেহে তৈরি হওয়া ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনটাই জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি রায়গঞ্জ ব্লকের রায়পুর এলাকা থেকে খবর আসে করোনা টিকা নেওয়ার পরই ওই এলাকার কয়েকজনের শরীরে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। চামচ, হাতা, খুন্তি, চাবির রিংয়ের মতো জিনিস আটকে যাচ্ছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছান সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। প্রত্যেকের শরীরে পাউডার লাগানো হয়। তাতেই কেল্লাফতে। দেখা যায়, কারও গায়ে আর কিছু আটকে থাকছে না।
[আরও পড়ুন: ‘মধুচক্রের নায়ক প্রবীর ঘোষালকে তৃণমূলে ফেরানো যাবে না’, পোস্টারে ছয়লাপ কোন্নগর]
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে শরীর চুম্বকে পরিণত হওয়ার এই তত্ত্বকে হাতে কলমে পরীক্ষা করে উড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের হুগলি জেলার সংগঠকদের অন্যতম অমিত মুখোপাধ্যায়ও। সোমবার অমিত বাবু তার মতের সমর্থনে হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখান যে এই চৌম্বক তত্ত্বের পিছনে কোভিশিল্ডের কোনও ভূমিকা নেই। এদিন মানুষের মনে চৌম্বক তত্ত্বের এই ভ্রান্ত ধারণা ভাঙাতে তিনি নিজের শরীর ও তার স্ত্রীর শরীরে কিছু পয়সা আটকে দেখান। তিনি বলেন তার কোভিডের দু’টো ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গিয়েছে কিন্তু তাঁর স্ত্রী রীতা মুখোপাধ্যায় কোনো ভ্যাকসিন নেননি। তাহলে দু’জনের শরীরে কি করে ধাতব বস্তু আটকে থাকল- এই প্রশ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক সহজ ব্যাখ্যা দেন অমিতবাবু। তিনি বলেন, “শরীরে ধাতব বস্তু আটকে থাকাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। বস্তুর আসঞ্জন বলের ফলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। দুটি ভিন্ন বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের অনুগুলোর মধ্যে আসঞ্জন বল কাজ করার জন্য আকর্ষণের কাজ করে। পাশাপাশি শরীরের ঘাম এবং অন্যান্য ক্ষরণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই শরীরে ধাতব পদার্থ গুলি আটকে থাকে।”
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য আরেক সদস্য সৌরভ চক্রবর্তী জানান, অতিমারী পরিস্থিতিতে কিছু মানুষ এই ধরনের খবর রটিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। প্রশাসনের এঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো ফিজিক্সের অধ্যাপক সুখেন দাস জানিয়েছিলেন, কিছু চিকিৎসায় রোগীকে ড্রাগের সঙ্গে কোনও ম্যাগনেটিক মেটেরিয়াল খাওয়ানোর পরে বাইরে থেকে ম্যাগনেটিক (Magnet) ফিল্ড অ্যাপ্লাই করে চিকিৎসা করা হয়। যেটা পজিট্রন এমিসন টোমোগ্রাফি এবং কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি বা পেট সিটি স্ক্যানে করা হয়। কিন্তু টিকা নেওয়ার পর শরীরে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হওয়ার ঘটনার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।