সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘অ্যাট দ্য স্ট্রোক অফ দ্য মিডনাইট আওয়ার’… স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে জওহরলাল নেহরু (Pandit Jawaharlal Nehru) যখন তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিচ্ছেন গোটা দেশ তখন মেতে উঠেছিল উৎসবে। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার অন্যতম কারিগর ‘জাতির জনক’ মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) সেই সময় কোথায় ছিলেন? সেদিনের লালকেল্লায় তিনি ছিলেন না। আগেই জানিয়েছিলেন, ”আমি ১৫ আগস্ট আনন্দে মেতে উঠতে পারব না।” শেষ পর্যন্ত সেদিন তাহলে কোথায় ছিলেন গান্ধী?
মহাত্মা গান্ধী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন ”আমি ১৫ আগস্ট আনন্দে মেতে উঠতে পারব না। আমি কোনও প্রতারণা করতে পারব না। তবে একই সঙ্গে আমি আপনাদের উৎসব করতে বারণ করব না। দুর্ভাগ্যবশত যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তাতে ভারত ও পাকিস্তানের ভবিষ্যতের সংঘাতের বীজ লুকিয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কী করে প্রদীপ জ্বালাতে পারি?”
[আরও পড়ুন: রাশিয়ার রানি পাগল ছিলেন প্রেমে! জারের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ওঠা রাসপুতিন আজও রহস্যময়]
এই বিবৃতি থেকে স্বাধীনতার আনন্দের মধ্যেও দেশভাগের যন্ত্রণাবিদ্ধ গান্ধীকে চিনে নেওয়া যায়। লালকেল্লার আলোকজ্জ্বল উৎসব থেকে দূরে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন ‘জাতির জনক’? ঐতিহাসিক নথি বলছে, সেই দিনটায় গান্ধী ছিলেন কলকাতায়। কেবল সেই দিনটায় নয়, ওই সময় বছরখানেক বাংলাতেই ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা দিবসের সময় উত্তর কলকাতার মিঁয়াবাগানের (আজকের বেলেঘাটা) মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল হায়দারি মঞ্জিলে ছিলেন গান্ধী।
আসলে ১৯৪৬ সালে শুরু হওয়া দাঙ্গার আগুন নেভাতে সেই সময় বাংলায় ছিলেন মহাত্মা। নোয়াখালিতে (অধুনা বাংলাদেশ) যে ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা থামাতে নতুন করে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। আর তাই ১৯৪৭ সালের ৯ আগস্ট কলকাতায় আসেন গান্ধী। সেই সময় মুসলিম লিগের নেতা সুরাবর্দি তাঁকে অনুরোধ করেন কিছুদিন এই শহরেই থেকে যেতে। তাঁর কথা মেনে নেন গান্ধী। ১ সেপ্টেম্বর তিনি শুরু করেন সত্যাগ্রহ। ৭৩ ঘণ্টার অনশনের উদ্দেশ্যই ছিল দাঙ্গা থামানো। শেষ পর্যন্ত দাঙ্গাকারীরা হাতের অস্ত্র তাঁর পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে অনুরোধ করেন অনশন বন্ধ করতেন। এভাবেই দেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির শুরুর সেই দিনগুলোয় উৎসবে না মেতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা স্তিমিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী।