সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গুজরাটে (Gujarat) বিজেপি যে সপ্তমবার ক্ষমতায় ফিরবে, সেটা কমবেশি সকলেরই জানা ছিল। নজর ছিল দু’টি বিষয়ের দিকে। এক, বিজেপি ঘোষণামতো ১৫০ আসনে পৌছাতে পারে কিনা? দুই আম আদমি পার্টি (Aam Aadmi Party) নাকি কংগ্রেস, দ্বিতীয় স্থানে কে শেষ করে। ফলাফলের পর দেখা যাচ্ছে বিজেপি দেড়শো পেরিয়ে গিয়েছে। আর কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থান কোনওরকমে ধরে রাখতে পারলেও ভোট শতাংশ এবং আসনসংখ্যা দুটিতেই বিরাট ধস নেমেছে। কংগ্রেস (Congress) নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই গুজরাটে দলের এই বিরাট পরাজয়ের জন্য দায়ী করছে আম আদমি পার্টিকে। তাদের দাবি, বিজেপির বি টিম-ই গুজরাটে বিজেপির এ টিমকে জিতিয়ে দিল।
বস্তুত, গুজরাটে বিজেপির এই বিরাট জয়ের জন্য আপ এবং কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটি অনেকাংশেই দায়ী। কিন্তু আপের আগমনই যে গুজরাটে কংগ্রেসের ধরাশায়ী হওয়ার একমাত্র কারণ, সেটা বললে বোধ হয় ভুল হবে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, কংগ্রেসের এই ভরাডুবির জন্য অনেকাংশে কংগ্রেস নিজেরাই দায়ী। আর টানা ২৭ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা কাটিয়ে ওঠার জন্য অবশ্যই বিজেপিকে কৃতিত্ব দিতে হবে। দেখা যাক সম্ভাব্য কারণগুলি।
[আরও পড়ুন: তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে বিপত্তি, রেললাইনে আটকে গেলেন তরুণী, তারপর…]
১। আপের আগমনে ছত্রভঙ্গ কংগ্রেস। গুজরাটের রাজনীতিতে প্রথমবার এত প্রবলভাবে ঝাঁপিয়েছিল তৃতীয় কোনও দল। সেটাই বিজেপির পক্ষে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালে কংগ্রেস এবং বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি টক্করের সময় কংগ্রেস পেয়েছিল ৪১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোট। এবারে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের সেই ভোটে বড়সড় থাবা বসিয়েছে আপ। বিরোধী পরিসর কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, আম আদমি পার্টি ভোট পেয়েছে ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে কংগ্রেস আপের দ্বিগুণের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছে। তাঁদের প্রাপ্ত ভোট সাড়ে ২৭ শতাংশ। আর বিজেপি পেয়েছে প্রায় ৫২.৭ শতাংশ।
২। খাতায় কলমে আপ মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট পেলেও তাঁদের প্রচারের বহরে বড়সড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের। আপ গুজরাটের প্রচারে প্রতি মুহূর্তে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে, কংগ্রেস বিজেপিকে রুখতে ব্যর্থ। গেরুয়া শিবিরকে রুখতে পারে তারাই। কেজরিওয়ালরা (Arvind Kejriwal) এমন ভাব করেছেন যেন, মোদির রাজ্যে একমাত্র তারাই বিজেপির চ্যালেঞ্জার। অথচ, তৃণমূল স্তরে তাঁদের সংগঠন সেভাবে ছিল না। তাতেই সাধারণ, দোটানায় টানা ভোটাররা বিভ্রান্ত হয়েছেন। আপ এবং কংগ্রেসের দোটনার মধ্যে অনেক ‘ফ্লোটিং ভোটার’ই ঝুঁকে গিয়েছেন বিজেপির দিকে। সেকারণেই বিজেপির ভোট এবারে প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
৩। গুজরাট বিজেপির হিন্দুত্বের আতুড়ঘর। নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই সেরাজ্যে ক্ষমতায় বিজেপি। মোদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর হিন্দুত্বের জিগির যত বেড়েছে, বিজেপির প্রভাব তত বেড়েছে। আজও সেরাজ্যে হিন্দুত্বই বিজেপির (BJP) মূল অস্ত্র। তাছাড়া অবশ্যই ব্র্যান্ড মোদি বিজেপির জয়ের অন্যতম বড় ফ্যাক্টর। গুজরাটে বিজেপির মূল অস্ত্র যদি হিন্দুত্ব হয়, তাহলে ব্র্যান্ড মোদি হবে ব্রহ্মাস্ত্র। গুজরাটিরা মনে করেন মোদি গুজরাটের অস্মিতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: গুজরাটের ভোটের ফল নিয়ে ব্যস্ত, সুকান্তর সঙ্গে বৈঠক বাতিল করলেন অমিত শাহ]
৪। কংগ্রেসের প্রচারে ঢিলেমি। গুজরাটে যেন ভোটের আগেই হেরে বসেছিল কংগ্রেস। প্রচারে আপ এবং বিজেপি যেভাবে ঝাঁপিয়েছিল, তার ধারেকাছে ছিল না কংগ্রেস। বস্তুত, সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সেভাবে অস্তিত্বই দেখা যায়নি হাত শিবিরের। ২০১৭ সালে রাহুল গান্ধী কার্যত গোটা গুজরাট চষে ফেলেছিলেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও প্রচারে দেখা গিয়েছিল। এবারে রাহুল শেষদিকে নমো নমো করে গোটা তিনেক সভা করেছেন, প্রিয়াঙ্কা সেটাও করেননি। আসলে দলের যে ভরাডুবি হতে চলেছে, সেটা জানতেন কংগ্রেস নেতারা। সেজন্যই হারের দায় যেন শীর্ষ নেতাদের উপর না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে চায়ছিল হাত শিবির।
৫। ২০১৭ সালে কংগ্রেসের পক্ষে একটা হাওয়া তৈরি হয়েছিল। ওবিসি, দলিত, পাটিদারদের একটা সামাজিক জোট তৈরি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও শেষমেশ বিজেপিকে হাত শিবির হারাতে পারেনি। এবারে প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা থাকলেও সেভাবে কোনও হাওয়া বা ন্যারেটিভ তৈরি হয়নি।