ন্যায্য দামে ওষুধ কেনার উপায় আর নেই। শেষ কপর্দক খরচ করে একমাত্র সান্ত্বনা ওষুধ কিনে বাড়ি আসা। তা আসল-নকল যাই হোক না কেন!
শ্রীরামকৃষ্ণ ‘স্টার থিয়েটার’-এ দেখতে এসেছেন গিরিশ ঘোষের কলকাতা-কঁাপানো নাটক ‘চৈতন্যলীলা’। শুনেছেন বিনোদিনী দাসী চৈতন্যলীলায় এমন অভিনয় করেছেন, মনে হচ্ছে, তিনিই নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্য। শ্রীরামকৃষ্ণ নাটক দেখছেন, অানন্দে কঁাদছেন আর ক্রমাগত বলছেন– আহা, আসলে-নকলে যে এক হয়ে গেছে গো, এক হয়ে গেছে।
এখন তেমনই আসলে-নকলে এক হয়ে যাওয়ার লীলা চলছে। থিয়েটারে-সিনেমায় নয়– ওষুধের দোকানে। বাংলা কঁাদছে আনন্দে নয়– সর্বনাশের দুঃখে। আসল আর নকল ওষুধে মিলেমিশে একাকার। এহেন দুঃস্বপ্নের মধে্য আরও এক দুর্যোগ ঘনিয়ে এল ওষুধের বাজারেই। কেউ বলছে ৭৪৮টি, কেউ বলছে ৯০০টি, ওষুধের দাম বেড়ে গিয়েছে সম্প্রতি। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির সূচক অনুসারে, ওই সমস্ত ওষুধের ‘এমআরপি’-র উপর ১.৭৪ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধিতে রাজি হয়েছে ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিকাল প্রাইসিং অথরিটি’।
তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের কথা ভেবে ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’ সংগঠনের মুখপাত্র শঙ্খ রায়চৌধুরী এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বলেছেন, ওষুধের দাম বাড়ানোর এই আচমকা সিদ্ধান্ত কারণ জানা নেই। অথচ বেছে-বেছে এমন সব ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে– যা মানুষের এখন প্রত্যহ প্রয়োজনীয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, রাতারাতি দাম বেড়ে যাওয়া এই অতি প্রয়োজনীয় ওষুধগুলোর মধে্য রয়েছে জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন, ম্যালেরিয়া, ক্যানসার, সর্পাঘাত, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ, গর্ভনিরোধক পিল, ব্যাকটিরিয়া-সংক্রমণ, ঘুমের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক এমনকী ব্লাডপ্রেশার থেকে জলাতঙ্কের ওষুধ।
ওষুধের চড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাঙালি এখন ওষুধের দোকানে যেতে ভয় পাচ্ছে। সবাই খুঁজছে, কোন দোকানে কত বেশি ছাড়। কিন্তু এ-কথাও ঠিক, ওষুধের বাণিজে্য এই যে ছাড়ের প্রতিযোগিতা চলছে, তা কিন্তু মানবিকতা, দয়া বা সৌহার্দের পরিচায়ক নয়। ‘ডিসকাউন্ট’ কিন্তু ওষুধ-বাণিজে্য এক কপট মুখোশ, যার পিছনে লুকিয়ে বাণিজি্যক ছকের নির্মমতা। অনেক দোকানে এমন ছাড় বা ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়, যা অবিশ্বাস্য ও অবাস্তব। সেসব দোকানেই অাসলে-নকলে সর্বনেশে একাকার। সস্তায় ওষুধ কিনে যখন সেই নকল ওষুধে রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়, অসুখ হাতের বাইরে চলে যায়, তখন অনুশোচনার কান্না ছাড়া গৃহস্থর সংসারে আর কী থাকে? ওষুধের দাম যখন মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস তুলছে তখন তো তাকে ‘ছাড়’-এর অনিশ্চিত অন্ধকারে পা ফেলতে হবেই। এমন অবস্থায় কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না দেখিয়ে কেন্দ্র আরও বাড়িয়ে দিল অপরিহার্য ওষুধের দাম। ফলে সাধারণ মানুষকে কি আরও নিশ্চিতভাবে ঠেলে দেওয়া হল না দেশজোড়া ওষুধ-বাণিজে্যর কপটতা, অসাধুতা, মিথ্যাচারের করাল গ্রাসে।