সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রবাদ আছে, শূন্য শুধু শূন্য নয়। কিন্তু রাজনীতির আঙ্গিনায় শূন্য যে শুধুমাত্র শূন্যই, তা বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে বামেরা। একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে লাল পার্টি। বাংলার বিধানসভা ও লোকসভায় বাংলার কোনও প্রতিনিধি নেই তাঁদের। ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে রাজ্যসভায় বাংলার হয়ে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা একটি আসনও হারাতে চলেছে সিপিএম। আগামী এপ্রিলে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ। তারপর বামেরা ওই আসনে আর কাউকে পাঠাতে পারবে না। বরং সেই জায়গায় একজনকে রাজ্যসভার সাংসদ করতে পারবে গেরুয়া শিবির।
২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের দুহাত ভরে দিয়েছিল রাজ্যবাসী। বাংলায় রীতিমতো লালঝড় বয়ে গিয়েছিল। ২৩৫ টি আসনে জয়লাভ করেছিল বামেরা। কিন্তু ওটাই শেষ। তারপর থেকে জয়ের মুখ দেখতে পায়নি তারা। ২০১১ সালে ২৩৫ একধাক্কায় নেমে এসেছিল ৬২-তে। সময় যত এগিয়েছে লাল ঝান্ডার আসন কমেছে। একইভাবে লোকসভাতেও শূন্য হয়েছে দল। ২০১১ সালে রাজ্যসভার সাংসদ পদে সিপিএমের তরফে ছিলেন একজনই, প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি। ২০১২ সালে সিটু নেতা তপন সেনকে মনোনয়ন দেয় বামেরা। ২০১৪ সালে ঋতব্রত বন্দ্য়োপাধ্যায়কে রাজ্যসভায় পাঠায় দল। পরবর্তীতে দলের শাস্তির মুখে পড়েন তিনি। দল তাঁকে বহিষ্কার করে। এদিকে ২০১৮ সালে মেয়াদ শেষ হয় তপন সেনের। ২০২০ সালে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের আর্জিতে সাড়া দিয়ে রাজ্যসভায় সিপিএমকে সমর্থন করে কংগ্রেস। বাম-কংগ্রেসের যৌথ সমর্থনে রাজ্যসভার সাংসদ হন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে তাঁর সাংসদ পদের মেয়াদ। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এবার আর কাউকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারবে না বামেরা। ফলে লোকসভা, বিধানসভার পর রাজ্যসভাতেও শূন্য হতে চলেছে লালপার্টি।
রাজ্যসভায় শূন্য হওয়ার নেপথ্যে দলের একটা অংশের সুবিধাবাদী মানষিকতাকেই দায়ী করেছে নেতৃত্ব। তবে বিষয়টা অত্যন্ত স্বাভাবিক বলেই দাবি করেছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, "সংসদীয় রাজনীতিতে এমন হয়। হতেই পারে। এক সময়ে বাংলা থেকে লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে বামেদের ৬০ জনেরও বেশি সাংসদ ছিলেন। বামেরা এখন ভোটে জিততে না পারায় সেই সংখ্যা কমতে কমতে শূন্য হয়ে গিয়েছে।" বিকাশের দাবি, সংসদীয় রাজনীতির নিয়মেই বামপন্থীরা ফের নিজেদের হারানো আসন ফিরে পাবেন। উল্লেখ্য, আগামীবছর ২ এপ্রিল রাজ্যসভার পাঁচজন সাংসদের মেয়াদ শেষ হবে। তালিকায় বিকাশরঞ্জন ছাড়া রয়েছেন সুব্রত বক্সি, মৌসম বেনজির নূর, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাকেত গোখলে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যসভার ১৬ আসনের নির্বাচন হয় মোট তিনদফায়। প্রথম দফার ৬ টি রাজ্যসভার সাংসদ পদের নির্বাচনে ৪২ জন বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন হয়। পরবর্তী দু'বারের জন্য ৫০ জন করে বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু বাংলায় বামেদের একজনও বিধায়ক নেই। আগামী এপ্রিলে রাজ্যসভা হবে বামশূন্য। সেই জায়গায় স্থান করে নিতে পারেন বিজেপির আরও একজন।