সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জিএসটি জমানায় চাপ বাড়তে চলেছে মধ্যবিত্তের হেঁশেলে৷ জিএসটি কাউন্সিলে প্রস্তাবিত চারস্তরীয় কর কাঠামোয় ভোজ্য তেল, মশলা, মুরগির মাংসের দাম বাড়বে বলেই এখনও পর্যন্ত হিসাব মিলছে৷ কারণ, এই সব পণ্যগুলিতে করের হার বৃদ্ধি পাবে৷ দূষণ সৃষ্টি করে এমন সামগ্রীরও কর বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে দাম বাড়বে গ্যাস ওভেনেরও৷ অন্যদিকে, টিভি সেট, এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর ও ওয়াশিং মেশিনের মতো বিলাস দ্রব্য এবং বিউটি কেয়ার, যেমন শ্যাম্পু-সাবানের উপর কর কমার জন্য সেগুলির দাম সস্তা হতে পারে৷ নেশাদ্রব্যের উপর সেস বসানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়বে৷
কেন্দ্র আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে নয়া প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা, পণ্য ও পরিষেবা কর, সারা দেশে চালু করতে চলেছে৷ এর ফলে দেশের সর্বত্র পণ্য ও পরিষেবা করের হার হবে অভিন্ন৷ চলতি সপ্তাহে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে করের হার নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আলোচনায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তবে চার স্তরের করের হার নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে৷ সূত্রের খবর, অ-সরকারি ভাবে দুই তরফে সেটা অনেকটা মেনেও নেওয়া হয়েছে৷ সর্বনিম্ন করের হার ধার্য করার প্রস্তাব হয়েছে ৬ শতাংশ৷ দু’টি মাঝারি মানের স্তর হবে ১২ এবং ১৮ শতাংশ৷ সর্বোচ্চ করের হার ধার্য করার প্রস্তাব হয়েছে ২৬ শতাংশ৷ এই করের হার ধার্য হবে বেশিরভাগ এফএমসিজি-র উপর৷ এছাড়াও নেশাদ্রব্য ও দূষণ সৃষ্টি করে, এমন দ্রব্যের উপর সেস বসানোর প্রস্তাব হয়েছে৷
কেন্দ্রের মতে, চারস্তরীয় কর কাঠামোর প্রভাব পড়বে খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে৷ কারণ, এর জন্য মুরগির মাংস, নারকেল তেলের দাম বাড়বে৷ এই দ্রব্যগুলিতে বর্তমানে করের হার ৪ শতাংশ৷ জিএসটি জমানায় বেড়ে এই করের হার হবে ৬ শতাংশ৷ দাম বাড়বে রিফাইন তেল, সরষের তেল ও বাদাম তেলের৷ এই ক্ষেত্রে বতর্মান করের হার ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৬ শতাংশ৷ রান্নায় ব্যবহৃত কিছু অত্যাবশ্যক মশলা যেমন, হলুদ, জিরার করের হার বর্তমান ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হতে পারে ৬ শতাংশ এবং ধনে, গোলমরিচ ও সরষের ক্ষেত্রে বর্তমান ৫ শতাংশ কর বেড়ে হবে ৬ শতাংশ৷ তাই সেক্ষেত্রেও দ্রব্যগুলির দাম বাড়বে৷
রান্নাঘরে টান পড়লেও ঘর সাজাবার বা বিলাস দ্রব্যের দাম সস্তা হতে পারে জিএসটি জমানায়৷ কারণ টিভি সেট, এয়ারকন্ডিশন, ওয়াশিং মেশিন, ইনভার্টার, রেফ্রিজারেটর, বৈদ্যুতিক পাখা, রান্নার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে করের হার বর্তমানে ধার্য ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২৬ শতাংশ হবে৷ সেই সঙ্গে বিউটি কেয়ার দ্রব্য, যেমন–পারফিউম, শেভিং ক্রিম, ট্যালকম পাউডার, হেয়ার অয়েল, শ্যাম্পু, সাবান ইত্যাদির দাম কমবে৷ বর্তমানে এই সামগ্রীর উপরে করের হার ২৯ শতাংশ৷ জিএসটি জমানায় তা-ও কমবে৷
প্রস্তাবিত করের হারে গ্যাস ওভেন, গ্যাস বার্নার, গৃহে ব্যবহৃত কীট প্রতিরোধক সরঞ্জাম দামি হবে৷ কারণ এই সব ক্ষেত্রে বর্তমানে করের হার ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৬ শতাংশ হবে৷ চার স্তরের কর কাঠামোয় যে সব সামগ্রীতে বর্তমানে করের হার ৩-৬ শতাংশ, তাকে ৬ শতাংশের দলে নিয়ে আসার প্রস্তাব হয়েছে৷
অন্যদিকে, যে ক্ষেত্রে করের হার ৯-১৫ শতাংশ সেগুলিকে ১২ শতাংশের দলে ফেলা হবে৷ ১৫-২০ শতাংশ করের হার, এমন সামগ্রী ফেলা হবে ১৮ শতাংশের তালিকায়৷ যে পণ্যগুলিতে বর্তমানে ২১ শতাংশের বেশি করের হার, জিএসটি জামানায় সেগুলিকে ২৬ শতাংশের তালিকায় নিয়ে আসা হবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে৷
আগামী মাসে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা আলোচনার মাধ্যমে করের হার ঠিক করবেন৷ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ৩-৪ নভেম্বর৷ উল্লেখ্য, ২০১৭-র ১ এপ্রিল থেকে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) ব্যবস্থা চালু হলে রাজ্যগুলির কর বাবদ আয় থেকে যে ক্ষতি হবে, তা প্রথম পাঁচ বছর কেন্দ্রের পূরণ করার কথা৷ সেই অর্থ আসবে বিলাস ও নেশাদ্রব্যের সেস থেকে৷ সেই দিক থেকে চূড়ান্ত ক্ষেত্রে এই দ্রব্যগুলির দামে কম-বেশি তারতম্য হতে পারে৷
The post জিএসটিতে চাপ বাড়বে রান্নাঘরে, সস্তা হবে টিভি-এসি appeared first on Sangbad Pratidin.