নিরুফা খাতুন: জিরাফ নিয়ে ধর্মসংকটে আলিপুর চিড়িয়াখানা। সংকটের মূলে জিরাফের উচ্চতা। আলিপুর কর্তৃপক্ষের উপলব্ধি, দিনদিন বেঁটে যাচ্ছে এই চিড়িয়াখানার জিরাফকুল। অথচ উচ্চতাই তো আফ্রিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে চরে বেড়ানো এই প্রাণিকুলের ইউএসপি। বেজায় লম্বা গলা বাড়িয়ে উঁচু উঁচু গলা বাড়িয়ে গাছের মগডাল থেকে জিরাফের পাতা ছিঁড়ে খাওয়া দেখতে সারাক্ষণই খাঁচার সামনে ভিড় কচিকাঁচা-ধেড়েদের। সেই জিরাফই যদি বেঁটে হয়ে যায়, তবে দুশ্চিন্তা তো স্বাভাবিক!
সাধারণত একটি প্রাপ্তবয়স্ক জিরাফের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট হয়। আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের হিসাব বলছে, সে জায়গায় চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া জিরাফ পরিবারের সদস্যদের উচ্চতা দাঁড়াচ্ছে সাকুল্যে ১০ থেকে ১২ ফুট। সেই বেঁটে জিরাফ দেখে মোটেই শিহরিত হচ্ছে না ছেলে ছোকরার দল। হতাশ হয়ে সরে যাচ্ছে অন্য খাঁচার সামনে।
[আরও পড়ুন: প্রযুক্তির কেরামতি, না ভেঙেই কাটোয়ায় উঁচু হচ্ছে তিনতলা বাড়ি]
চিড়িয়াখানার প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, জিরাফের উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণ নিহিত এখানকার প্রজনন সিস্টেমের মধ্যে। পৃথিবীর যে কোনও চিড়িয়াখানায় কোনও প্রাণীর প্রজনন হয় খাঁচায় থাকা বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীর সঙ্গে। সেই প্রজননেই সন্তান জন্মায়। সেই সন্তানদের মধ্যে প্রজননে আসে নতুন প্রজন্ম। এই চক্রবৎ রীতিতেই চিড়িয়াখানার ঘেরাটোপেই বড় হয় পাখি-পশুদের পরিবার। যেমন ১৮৭৫ সালে শুরু হওয়া আলিপুর চিড়িয়াখানায় (Alipore Zoo) প্রথম জিরাফ আনা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। জার্মানি থেকে আনা সেই একজোড়া জিরাফের সন্তান-সন্ততিতেই এখন জিরাফদের ভরা সংসার আলিপুরে। জার্মানি থেকে আনা জিরাফ দম্পতিরই বংশধর এখনকার তৃণা, লক্ষ্মী, মঙ্গল, মুনিয়া, বুবলিরা। ক’দিন আগে ঘর আলো করে ফুটফুটে পুত্রসন্তান এসেছে তৃণা ও মঙ্গলের। নতুন অতিথিকে নিয়ে জিরাফ পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন ১১। যার মধ্যে সাতটি স্ত্রী জিরাফ, চারটি পুরুষ।
সমস্যাটা এখানেই। বিশেষজ্ঞদের মত, একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘ বছর ধরে প্রজনন হচ্ছে একই প্রকৃতির দুই জিনের সঙ্গে। ফলে শরীরবিজ্ঞানের নিয়মেই গুণাবলি হারাচ্ছে নবজাতকেরা। জিরাফের ক্ষেত্রে যা প্রকট হচ্ছে উচ্চতা কমে যাওয়ায়। সমস্যা মেটাতে ৩৬ বছর পর ফের বাইরে থেকে প্রজনন সঙ্গী হিসাবে জিরাফ আনার কথা ভাবতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। সূত্রের খবর, এবারও কথা চলছে জার্মানির এক চিড়িয়াখানার সঙ্গে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মতোই পশুদেরও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে প্রজনন পরবর্তী প্রজন্মে জিনগত সমস্যা আনে। যা এড়াতে অন্তত একই বংশের ছয় প্রজন্মের সঙ্গে প্রজনন না করানোই উচিত। প্রাণী চিকিৎসক উৎপল দাসের মতে, “পশুপাখিদেরও একই জিনের মধ্যে প্রজনন করা হলে জিনগত ত্রুটি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে অনেক শাবকের হাত পায়ে খুঁত দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবন্ধী হয়। জিরাফের ক্ষেত্রে উচ্চতা কমে যায়। জিনগত সমস্যা এড়াতে একই বংশের অন্তত ছয় প্রজন্মের সঙ্গে প্রজনন না হওয়া ভাল।”
[আরও পড়ুন: রোজ রাতে বিয়ারে চুমুক দেওয়ার অভ্যাস? এতেই বাড়ছে মস্তিষ্কের বয়স]
চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, “একই জিনের সঙ্গে প্রজনন হওয়ায় জিরাফের উচ্চতা কমে যাচ্ছে। অথচ এই উচ্চতাই হচ্ছে জিরাফের পরিচয়। জিরাফের উচ্চতা ধরে রাখতে বাইরে থেকে সঙ্গী নিয়ে এসে প্রজনন করা হবে।”