সংবাদ প্রতিদিন ডিডিটাল ডেস্ক: কোথাও উড়ছে ১০০ কোটি, কোথাওবা দ্বিগুণ। ফেল কড়ি তোল বিধায়ক। ভোটের জটিল অঙ্কে এই সমীকরণেই লাফিযে বাড়ছে টাকার অঙ্কও। অকুস্থল আপাতত কর্ণাটক। গোড়ায় অভিযোগটা তুলেছিলেন জেডিএস নেতা কুমারস্বামীই। সরকার গড়ার দাবি জানানোর পর তোপ দেগে বলেছিলেন, তাঁদের বিধায়কদের দলে টানতে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে চাইছে বিজেপি। আজ জেডিএসের আরেক নেতার অভিযোগ আরও গুরুতর। জি টি দেবেগৌড়া অভিযোগ করছেন, ‘১০০ কোটি নয়, বিধায়কদের দাম ধার্য করা হচ্ছে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত।’ যদিও দেবেগৌড়ার দাবি, তাঁদের দলের বিধায়করা একত্রিত আছেন, বিজেপির প্রলোভনে পা দেবেন না কেউই। একা জেডিএস নয়, কর্ণাটকে কংগ্রেস বিধায়কদেরও কোটি কোটি টাকায় কেনার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠছে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, বিধায়ক কেনার জন্য এত টাকা বিজেপি পাচ্ছে কোথায়? এই টাকা আদৌ হিসেবভুক্ত টাকা, নাকি হিসেবে বহির্ভূত কালো টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে ঘোড়া কেনাবেচায়? প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল।
[একক বৃহত্তম দল আরজেডি, বিহারে সরকার গড়ার দাবিতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ তেজস্বী]
ক্ষমতায় আসার আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ যে আদৌ নেওয়া হয়নি তা নয়। রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস নথিভুক্ত করা এখন বাধ্যতামূলক। ২০০০ টাকার বেশি চাঁদা এখন নগদে দেওয়া যায় না। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত করতেও নেওয়া হয়েছে একাধিক উদ্যোগ। লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের জন্য প্রার্থীপিছু খরচের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। লোকসভার ক্ষেত্রে তা প্রতিনিধি পিছু ৭০ লক্ষ, এবং বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিপিছু সর্বোচ্চ ২৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করা যায় প্রচারে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ করার একটা প্রয়াস করেছিল সরকার।
[‘কর্ণাটকে অসাংবিধানিক কাজ করেছেন রাজ্যপাল’, সুপ্রিম রায়ের পর তোপ রাহুলের]
কিন্তু সরকারের সেই প্রয়াসকে বুড়ো আঙুল দেখাল কর্ণাটক। নির্বাচনে দেখা গেল সেই কোটি কোটি টাকা ওড়ানোর পুরনো খেলা। সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী অরাজনৈতিক সংস্থার করা সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হয়ে গেল কর্ণাটকে। কন্নড়ভূমে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। প্রশ্ন উঠছে যদি, সব রাজনৈতিক দলের খরচের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে এই বিপূল পরিমাণ টাকা এল কোথা থেকে? আরও একটি মজাদার বিষয় হল, অধিকাংশ প্রার্থীরই দাবি, নির্বাচনের জন্য খরচের যে সর্বোচ্চ সীমা (অর্থাৎ ২৮ লক্ষ টাকা) বেঁধে দিয়েছে সরকার তার ৫০ শতাংশও খরচ করেননি তাঁরা। এখনও পর্যন্ত নির্বাচনে খরচ করার জন্য মাত্র ২২০ কোটি টাকার ইলেকট্রোরাল বন্ড কিনেছেন প্রার্থীরা। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত ভোটের প্রচার বাবদ খরচের হিসেব দেখানো হয়েছে ২২০ কোটি টাকা। পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার কর্ণাটকে হাজার হাজার কোটির হিসেব বহির্ভূত অর্থাৎ কালো টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও ঘোড়া কেনাবেচার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার। একাধারে দুর্নীতি এবং কালো টাকা, দুটি মারাত্মক বস্তুই বাসা বেধেছিল বেঙ্গালুরুতে।
[সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা বিজেপির, কর্ণাটকে আস্থা ভোটের নির্দেশ শনিবার]
কালো টাকা আর দুর্নীতির এই হিসেবে চোখ কপালে উঠছে অনেকের। কালো টাকা রুখতেই তো নোট বাতিলের মত কঠোর পদক্ষেপ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতিদমনও। কিন্তু, সরকারে আসার পর সাড়ে চার বছর এবং নোট বাতিলের পর দেড় বছর কেটে গেলেও একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ্বভাবে করা গেল না কেন? সে প্রশ্ন উঠছেই।
The post কর্ণাটকে বিধায়কের দাম ২০০ কোটি! কালো টাকার রমরমায় প্রশ্নে মোদির নোট বাতিল appeared first on Sangbad Pratidin.