রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন অতি কার্যকর একটি পথ। কিন্তু ইনসুলিন নেওয়ার আগে ও পরে বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখা দরকার। সেগুলিই বুঝিয়ে বললেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সায়ন গুপ্ত।
ডায়াবেটিসে কতটা প্রয়োজন
রোগীর ব্লাড সুগারের মাত্রার উপর কতটা ইনসুলিন প্রয়োজন তা নির্ভর করে। ইনসুলিন নেওয়া শুরু করলে দিনে দু’বার অথবা তার বেশি সময় ব্লাড সুগার মেপে তা লিখে রাখা উচিত। ব্লাড সুগারের মাত্রা দেখেই রোগীর কী ধরনের কিংবা কতটা ইনসুলিন প্রয়োজন সে বিষয়ে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন। ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ করছে কিনা দেখার জন্য রোগীর প্রতিদিন গ্লুকোমিটার দিয়ে ব্লাড সুগারের মাত্রা মাপা জরুরি।
ইনসুলিন মজুত রাখতে
- সূর্যের আলো থেকে দূরে ঘরের তাপমাত্রায় খোলা ইনসুলিন পেন অথবা বোতল রাখা উচিত।
- যে ইনসুলিনের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি ঘরের তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
- যদি ঘরের তাপমাত্রায় রাখা কোনও বোতল ৩০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করা না হয় তাহলে সেটি ফেলে দেওয়া উচিত।
- যে ইনসুলিন ব্যবহার করা হচ্ছে না সেটি ফ্রিজে রাখলেও ‘ফ্রিজার কম্পার্টমেন্ট’-এর দরজা থেকে সরিয়ে রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত গরম জায়গাতেও এই ধরনের ইনসুলিন রাখা উচিত নয়।
পরিষ্কার থাকলেও যদি ইনসুলিন ঘোলাটে হয়ে যায় তাহলে সেটি ফেলে দিয়ে নতুন বোতল ব্যবহার করা উচিত। - একজন রোগীর ইনসুলিন একেবারেই অন্য কাউকে দেওয়া উচিত নয়।
ইনসুলিন ইনজেকশনের নিয়ম
- ইনসুলিন নাভি থেকে ২ ইঞ্চি দূরত্বে দেওয়া উচিত। শেষ ইনসুলিনের অন্তত দুই থেকে তিন আঙুল দূরে।
- ইনসুলিন পেশীতে দিলে ভাল কাজ করে না।
- ইনসুলিন দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বার করে নেওয়া উচিত নয়। ইনজেকশন একবার দেওয়ার পর দশ সেকেন্ড ধরে রাখলে তবে ওই ইনসুলিন শরীরে ঢুকতে পারে।
[আরও পড়ুন: ঘামের দুর্গন্ধ? কোনও রোগের লক্ষণ নয়তো! সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞ]
লাইফস্টাইল পরিবর্তন মাস্ট
ডায়েট- ডায়াবেটিসে পেট খালি রাখা চলবে না। বেশি ইনসুলিন নিয়ে কেউ যদি কম খায় তাহলে ব্লাড সুগার নেমে যেতে পারে। আবার কিছু সরল শর্করা জাতীয় খাবার যেমন আলু, চিজ, বাটার ইত্যাদি তাড়াতাড়ি ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দেয়। তবে কমপ্লেক্স স্টার্চ, বেশি ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে ধীরে ধীরে ব্লাড সুগার বাড়ে। কলা, আম ও তরমুজ বাদ দিয়ে অন্যান্য ফল, সবজি, ফাইবারযুক্ত হোল গ্রেইন ফুড ধীরে ধীরে হজম হয় এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভাল কার্বোহাইড্রেট।
এক্সারসাইজ- সপ্তাহে ৫ দিন দৈনিক ৩০ মিনিট করে এক্সারসাইজ করতে হবে। এছাড়া সারাদিনে নিজেকে শারীরিকভাবে সচল রাখতে হবে। যার জন্য রোজকার জীবনে কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে পারেন। যেমন এলিভেটরের পরিবর্তে সিড়ি দিয়ে ওঠা, জোড়ে হাটা, সাঁতার কাটা, বাইকিং, খেলাধূলা করা এবং এক্সারসাইজ করা।
ইনসুলিন নিলেও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। দৈনন্দিন জীবনে সঠিক ডায়েট, নিয়মিত এক্সারসাইজ, সঠিকভাবে জীবনযাপন করলে রোগীর ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে।