নিশ্চিত রিটার্ন এবং ক্ষেত্রবিশেষে কর ছাড়। জোড়া এই কারণে স্বল্প সঞ্চয়, হালে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাকুরিজীবী- বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক স্তরের মানুষের জন্যই প্রাসঙ্গিক এবং উপযোগী। প্রয়োজন বুঝে এই ধরনের প্রকল্পে লগ্নি করা যেতে পারে। ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের জন্য এমনই তিনটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প বেছে দিলেন শান্তনু গাঙ্গুলি।
পোর্টফোলিও শব্দটি সাধারণত শেয়ার, বন্ড এবং ডিবেঞ্চারের সমষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বৃহৎ অর্থের শুধু স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প দিয়েই একটি ঝুঁকিহীন পোর্টফোলিও গঠন করা যেতে পারে। সাধারণ নাগরিক বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করে নির্বিবাদে নিশ্চিত রিটার্ন পেতে পারেন। স্বল্প সঞ্চয় আজকের দিনেও ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ী, পেশাদার ব্যক্তি এমনকি চাকুরিজীবীদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক দু’টি প্রধান কারণে– নিশ্চিত রিটার্ন ও ক্ষেত্রবিশেষে কর ছাড়।
সরকার বিভিন্ন প্রয়োজনের নিরিখে অনেক রকম স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছে। একটু গভীরে গেলে দেখা যাবে, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পই স্বতন্ত্র। বয়স্ক নাগরিকদের জন্য যেমন নির্দিষ্ট প্রকল্প আছে, তেমনি কন্যা সন্তানের বাবা-মায়েরা স্বল্প সঞ্চয়ের জন্য সুকন্যা প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেন। অর্থাৎ বিভিন্ন আর্থ সামাজিক স্তরের এবং প্রবীণ নাগরিকরা এই ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী। এখানেই এই প্রকল্পগুলির সার্থকতা। কোনও ব্যক্তি এই জাতীয় একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি স্বল্প সঞ্চয় পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারেন অতি সহজে। আমি তিনটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প ১) পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF), ২) ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC), এবং ৩) সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিম (SCSS) এ বিনিয়োগ নিয়ে লিখছি। আপনিও ভেবে দেখতে পারেন।
PPF
শর্তাবলী : ১) সর্বনিম্ন লক-ইন পিরিয়ড ১৫ বছর, অর্থাৎ বিনিয়োগকারী ১৫ বছর বাদে সুদ-সহ পুরো টাকা তুলতে পারবেন। তার আগে নয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ৫ বছর বাদে আংশিক টাকা তোলা যেতে পারে।
২) সুদের বর্তমান হার ৭.১% (তবে এই হার কমতে, বাড়তে পারে)।
সুবিধা : ১) সুদ পুরো করমুক্ত। আর কোনও প্রকল্পে এই সুবিধা নেই।
২) ১,৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগের উপর আয়কর আইনের 80C ধারা অনুযায়ী কর মকুব।
৩) ১৫ বছর পার হয়ে গেলেও টাকা তোলা বাধ্যতামূলক নয়। আপনার জমানো টাকার উপর আপনি করবিহীন সুদ পেতে থাকবেন। অনেকটা পেনশনের মতো, কিন্তু কোনও ট্যাক্স দেওয়ার বালাই নেই।
অসুবিধা : ১) লম্বা লক-ইন পিরিয়ড
NSC
শর্তাবলী : ১) লক-ইন পিরিয়ড ৫ বছর, অর্থাৎ বিনিয়োগকারী ৫ বছর বাদে সুদ-সহ পুরো টাকা তুলতে পারবেন।
২) সুদের বর্তমান হার ৬.৮% (তবে এই হার অর্থনীতির নিয়মে কমা, বাড়া করতে পারে)
সুবিধা : ১) ১,৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগের ওপর আয়কর আইনের 80C ধারা অনুযায়ী কর মকুব।
অসুবিধা : ১) সুদ কর মুক্ত নয়। সুদ এর উপর আয় করের স্ল্যাব অনুযায়ী কর প্রযোজ্য।
SCSS
শর্তাবলী : ১) এই প্রকল্পটি ৬০ বছর বা ৬০ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তি, যাঁরা কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (VRS-এর ক্ষেত্রে ৫৫ বছরের পর)।
২) এই প্রকল্পে অবসরকালীন প্রাপ্তি থেকে সর্বাধিক ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
৩) বিনিয়োগ এর উপর বর্তমানে ৭.৪% সুদ পাওয়া যায় ৫ বছর পর্যন্ত এবং তারপর আরও ৩ বছর বিনিয়োগ নবীকরণ করা যেতে পারে।
সুবিধা : ১) ১,৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগের ওপর আয়কর আইনের 80C ধারা অনুযায়ী কর মকুব।
২) সুদের হার খুব আকর্ষণীয় এবং কোয়ার্টারলি (ত্রৈমাসিক) প্রদান করা হয়।
অসুবিধা : ১) সুদ এর ওপর আয় কর আইনের স্ল্যাব অনুযায়ী কর প্রযোজ্য।
বাকি লগ্নির সঙ্গে তুলনা করলে ৫ বছরের মেয়াদ শেষে PPF এর ক্ষেত্রে কিছু টাকা বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু লক-ইন পিরিয়ড ১০ বছর বেশি। PPF এর মূল সুবিধা সুদ করশূন্য-এটাই PPF-কে অনেক আগে রাখে।
(লেখক ফাইন্যান্সের অধ্যাপক, জয়পুরিয়া ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, ইন্দোর)