রোজ একশো টাকার সিপ (সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) চালু করেছে এলআইসি মিউচুয়াল ফান্ড। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও, শ্রী রবি কুমার ঝা জানালেন, স্বল্প সঞ্চয়ী মানুষ তথা নবাগত লগ্নিকারীরা এমন “পকেট সিপ” ব্যবহার করে ধীরে ধীরে সাশ্রয়ের পথে এগিয়ে যেতে পারেন। “সব মিলিয়ে আমাদের পকেট সিপ সঞ্চয়ীদের জন্য খুব সুবিধাজনক,” বললেন তিনি। নীলাঞ্জন দে’র সঙ্গে কথোপকথনে।
প্র. ছোট সিপের পদ্ধতি কি সাধারণ সিপের মতোই?
উ. হ্যাঁ, এখানেও রুপি কস্ট অ্যাভারেজিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে। কেবলমাত্র দিনে একশো টাকা বাঁচাতে পারলেই এখানে নথিভুক্ত করা যাবে। আমাদের ফান্ডগুলির ক্ষেত্রে আগে নূন্যতম ডেলি সিপ ছিল ৩০০ টাকা, তা থেকে কমিয়ে আমরা ব্যাপারটি অনেক সহজ করে দিয়েছি। সাধারণ সিপের সঙ্গে পদ্ধতিগত পার্থক্য নেই। শুধু ডেলি নয়, মান্থলি সিপের নূন্যতম পরিমাণও কমিয়ে এনে ২০০ টাকা করা হয়েছে। আর কোয়ার্টারলি সিপের কিস্তি ১,০০০ টাকায় নামিয়ে এনেছি আমরা। আমাদের উদ্দেশ্য, নতুন বিনিয়োগকারীদের পথ আরও সুগম করা, এবং নানা স্তরের মানুষকে সম্পদ গঠন করতে সাহায্য করা। পকেট সিপ তা করতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি।
প্র. আগামিদিনে নতুন কী ফান্ড প্রত্যাশা করতে পারেন লগ্নিকারীরা?
উ. আমাদের প্রোডাক্ট রেঞ্জ বাড়ছে। এখন নানা ধরনের প্রকল্প পরিচালনা করছি আমরা, তবে বিনিয়োগকারীরা অনেকেই নতুন প্রকল্পের খেঁাজে থাকেন। যঁারা ডাইভারসিফায়েড ফান্ড চান, তাঁদের জন্য আছে একাধিক ভাল বিকল্পের সন্ধান। হয়তো তঁাদের জন্য আমরা মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ধরনের ফান্ডের প্রস্তাব আনব, তবে এই বিষয়ে এখনই বিশদে কিছু বলার নেই। এই মুহূর্তে যা বলতে পারি তা হল, আমাদের ব্রাঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সম্পর্কিত। আগামিদিনে আরও সম্প্রসারণ দেখতে পাবেন আমাদের গ্রাহকরা। ডিস্ট্রিবিউটারদের সঙ্গেও সম্পর্ক দৃঢ়তর করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য মোট অ্যাসেট অান্ডার ম্যানেজমেন্টের পরিমাণ বাড়ানো, এবং একই সঙ্গে ইনভেস্টরদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখা।
প্র. মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে তো এখন অনেক নতুন প্রজন্মের প্যাসিভ প্রকল্প এসেছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
উ. ঠিকই বলেছেন, ইনডেক্স ফান্ড এবং এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের পরিসর বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ইদানীং ট্রেন্ড দেখে মনে হচ্ছে প্যাসিভ নিয়ে লগ্নিকারীরা বেশ উৎসাহী। আগামিদিনেও এই ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনা আছে। প্যাসিভের যে নিজস্ব আকর্ষণ আছে তা এড়িয়ে যেতে পারি না আমরা। তবে অ্যাক্টিভ এবং প্যাসিভ, এই দুই বিকল্পই থাকবে, দুটির স্বাতন্ত্র্য অটুট থাকবে আমার মতে। দুই শ্রেণীর প্রকল্পেই যে অ্যাসেটের পরিমাণ বাড়ছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে। আর নানা ধরনের ইনডেক্স প্রোডাক্টের প্রস্তাবও আসছে আজকাল। বৈচিত্র্য বাড়লে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন, কারণ তাঁদের মতে বিভিন্ন “অপশন” থাকবে। এক শ্রেণীর নতুন লগ্নিকারী হয়তো মূলত প্যাসিভ পন্থায় বিশ্বাসী হবেন। তবে ইনডেক্সকে হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চালাবেন অ্যাক্টিভ ফান্ড ম্যানেজাররা। লগ্নিকারীরা চাইবেন যথাযথ রিটার্ন, ভালো পারফর্ম্যান্স তথা পরিষেবা। এই সবই দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাব আমরা।
প্র. বাজারে অস্থিরতা আছেই। কী ধরনের বিনিয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন?
উ. দেখুন, ভোলাটিলিটি তো থাকবেই, আর তার প্রভাবও কম হবে না। আজকের যুগে অস্থিরতা থাকবে না, এমন আশা করাই যাবে না। কাজেই ইনভেস্টরদের এমন পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিনিয়োগ করতে হবে। আমার মতে, ডাইভারসিফাই করার কোনও বিকল্প নেই – এর মাধ্যমে নানা ধরনের অ্যাসেট ক্লাসে নিজের রিস্ক ছড়িয়ে দেওয়া উচিত হবে। বিভিন্ন কৌশল মেনে চলেন ফান্ড ম্যানেজাররা, নিজের ঝুঁকি নেওয়ার সমতার সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
যদি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হয়, তাহলে আলাদাভাবে আমি ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ডের কথা উল্লেখ করতে চাই। ‘ব্যাফ’ বেশ উপযোগী অনেক ইনভেস্টরের জন্য। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে লগ্নিকারীদের একটি বড় অংশ ব্যালেন্সড পোর্টফোলিও বেছে নিচ্ছেন, তাতে সুরক্ষা বেশি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ভ্যালু ফান্ডের কথা বলতে চাই। এখানেও যথেষ্ট কারণ আছে বেছে নেওয়ার স্বপক্ষে। অনিশ্চয়তার বাতাবরণে এই শ্রেণির প্রকল্পে লগ্নি করতে পারবেন, তবে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। সিপের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সম্পদ গঠনের কোনও বিকল্প হয় না, তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য সিপ-ই সবথেকে ভালো পন্থা বলে মনে করা হয়। আমরাও এই বক্তব্যটি সমর্থন করি।