ইনডেক্স-ভিত্তিক স্ট্র্যাটেজির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার বাতাবরণে নানা জাতীয় সূচক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ইনভেস্টররা। ইতিমধ্যেই চলে এসেছে একগুচ্ছ নতুন জমানার ইনডেক্স। কীভাবে বাজারের অস্থির অবস্থার সঙ্গে আপনি লড়তে পারেন মূলত মাল্টিক্যাপ মোমেন্টাম কোয়ালিটি ইনডেক্স কৌশলকে হাতিয়ার করে? ‘সঞ্চয়’-এর জন্য বিশেষ এই লেখায় জানাচ্ছেন টাটা এআইএ লাইফ ইনসিওরেন্সের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার হর্ষদ পাতিল।
ভারতীয় অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক আঘাতসমূহ সামলে নেওয়ার মত নমনীয়তা দেখিয়েছে। দেশের অর্থনীতির মূল দিকগুলো বাজারের টানাপোড়েন সামলাতে এবং ব্যবহার করতে উৎসাহী লগ্নি কৌশলগুলোর জন্য জোরালো ভিত্তিও জুগিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজারের অস্থিরতা বজায় আছে। তার পিছনে অর্থনৈতিক বদল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক ঘটনার প্রভাব পর্যন্ত বহু বিষয় রয়েছে। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলি বাজারের অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা এবং চিন ও আমেরিকার মতো বড় অর্থনীতির দেশে অর্থনৈতিক নীতির বদল জাতীয় আন্তর্জাতিক উত্তেজনা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
এইসব আন্তর্জাতিক টানাপোড়েন এবং মার্কিন অর্থনৈতিক নীতি–যা বাণিজ্য শুল্কও বাড়িয়ে দিতে পারে– সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ধারায় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ভারতীয় বাজারের অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। এই জটিল পরিবেশে শক্তিশালী লগ্নি সমাধান অবশ্য প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়। সব রকমের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনে ডাইভারসিফিকেশনের সঙ্গে সঙ্গে মোমেন্টাম ও কোয়ালিটি লগ্নির সমন্বয় ঘটানোর মত কৌশল বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। এই কৌশলের লক্ষ্য কেবল বাজারের ঢেউয়ের চূড়ো আর খাদের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলা নয়, লগ্নিকারীদের স্বল্পমেয়াদি লাভ এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্যাপিটাল অ্যাপ্রিসিয়েশন থেকে লাভবান করাও বটে।
পরিমাণগত বিশ্লেষণ: কৌশলগত লগ্নির মেরুদণ্ড
এই কৌশল লগ্নি করার জন্যে পরিমাণগত বিশ্লেষণের উপরে জোরালোভাবে নির্ভর করে। এই পদ্ধতি স্টকের মূল্যায়ন করে তার মূল্য, সহজলভ্যতা, অতীতের দামের প্রবণতা এবং সামগ্রিক আর্থিক স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে। এর মাধ্যমে এই কৌশল এমন স্টক বেছে নেয় যা কেবল অতীতে ভাল পারফর্ম করেছে তা নয়, মৌলিকভাবেও শক্তিশালী এবং ন্যায্য দামের। এই বিস্তারিত বিশ্লেষণ এমন এক পোর্টফোলিও তৈরি করতে সাহায্য করে যা বহুমুখী এবং দীর্ঘমেয়াদি লগ্নি লক্ষ্য নিয়ে তৈরি।
বৃদ্ধি আদায় করতে মোমেন্টাম
মোমেন্টাম লগ্নির লক্ষ্য হল সেই সমস্ত সিকিউরিটিজ যা বাজারের অস্থিরতার তুলনায় সম্প্রতি শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এই কার্যপদ্ধতি সফল স্টকগুলোর স্বল্প মেয়াদে তাদের পারফরম্যান্স ধরে রাখার প্রবণতাকে কাজে লাগায়, লগ্নিগুলিকে বাজারের বর্তমান নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে মিলিয়ে চলে, যাতে বাজারের গড় পারফরম্যান্সের থেকে বেশি পোর্টফোলিও রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঝুঁকি দূর করার পদ্ধতি হিসাবে কোয়ালিটি
লগ্নি প্রক্রিয়ায় ‘কোয়ালিটি’ যোগ করলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা পাওয়া যায়। কোয়ালিটির মূল্যায়ন করা হয় কম ডেট, লগ্নিতে উচ্চমাত্রার রিটার্ন এবং আয়ের স্থিতিশীল বৃদ্ধির মত আর্থিক সূচকগুলি দিয়ে। যে সব কোম্পানি এই দিকগুলোতে ভাল করে তাদের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে তুলনায় ভাল করার প্রবণতা দেখা যায় এবং তাদের দ্রুত মূল্যহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং কোয়ালিটিতে নজর দেওয়া এমন একটা পোর্টফোলিও নিশ্চিত করে যার লক্ষ্য বৃদ্ধি, কিন্তু তার পিছনে শক্তিশালী ফান্ডামেন্টালসও থাকে।
সমস্ত মার্কেট ক্যাপ জুড়ে ডাইভারসিফিকেশন
মাল্টিক্যাপ কৌশলের ভিত্তি হল লার্জ, মিড ও স্মল ক্যাপ স্টকের মধ্যে সার্বিক ডাইভারসিফিকেশন। এই প্রণালী প্রত্যেক সেগমেন্টের আলাদা আলাদা সুবিধাগুলোকে কাজে লাগায়। লার্জ ক্যাপ স্টক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে স্থিতিশীলতা জোগায় আর মিড ও স্মল ক্যাপ স্টক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উচ্চতর বৃদ্ধির সম্ভাবনা জোগায়। এই ক্যাটেগরিগুলোতে লগ্নি ছড়িয়ে রাখলে ঝুঁকিও কমে। আবার বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের বৃদ্ধির ফায়দাও তোলা যায়।
যদিও জুলাই-সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে গতবছরের তুলনায় জিডিপি বৃদ্ধি ৫.৪%-এ নেমে এসেছে, তবু ভারত এখনও সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে চলা মুখ্য অর্থনীতিগুলোর অন্যতম। দেশ অর্থনৈতিক সুপারপাওয়ার হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। দেশের বাজার এখনো জোরদার, জোরালো ফান্ডামেন্টাল দ্বারা চালিত এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বে বেড়ে চলেছে। প্রগতিশীল সংস্কার, ক্রমবর্ধমান প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং সম্প্রসারিত হয়ে চলা ডিজিটাল পরিকাঠামোর ইন্ধন পেয়ে ভারতীয় অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধির পথেই এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।