সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জাতীয় সরোবর পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ। রুখাশুখা মানভূমের বুকে একটুকরো স্নিগ্ধ সরোবর। এর সৌন্দর্যের হাতছানি এড়াতে পারেন খুব কম মানুষ। কিন্তু সেই মোহময়ী সাহেব বাঁধেই গত দু,তিনদিন ধরে মাছের মড়ক। জলাশয়ে মরে ভেসে উঠছে রুই, কাতলা, মৃগেল সহ চারাপোনা। শহর পুরুলিয়ার নর্থ লেক রোডের দিকে এই জলাশয়ের জল সবুজ হয়ে গিয়েছে। সেই শ্যাওলা জলেই ভেসে উঠছে মরা মাছ।
তাহলে কি সাহেব বাঁধের জলে বিষ? প্রশ্নটা উঠছেই। কারণ, অতীতে এই সরোবরের জল একাধিকবার পরীক্ষা করা হয়েছে। তার রিপোর্টে নিরাপদ নয় বলে জানায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। তবে বর্তমানে পুরুলিয়া পুরসভা এই প্রস্তাবিত জাতীয় সরোবরের দিকে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা নজর রেখেছে। তাছাড়া নগর বিনোদন ও বনায়ন বিভাগ এই সরোবরকে ঘিরে সৌন্দর্যায়নের কাজ করছে। কিন্তু এরই মধ্যে এই ঘটনা চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে পুরুলিয়া পুরসভার। তারা বিষয়টিকে একেবারেই হালকাভাবে নিচ্ছে না। বুধবার পুরুলিয়া পুরসভা মৎস্য দপ্তর ও ওই নগর বিনোদন-বনায়ন বিভাগকে নিয়ে জলাশয়ের ওই এলাকা পর্যবেক্ষণ করে। পুরুলিয়ার উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডলের কথায়, “কেন এইরকম হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে বলা হয়েছে, জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য।”
[আরও পড়ুন: ‘বাদুড় থেকে ছড়াচ্ছে করোনা’, বাঙালি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় স্বীকৃতি মার্কিন মেডিক্যাল জার্নালের]
অবিভক্ত মানভূমের কমিশনার কর্নেল টিকলে এই জনপদের পানীয় জলের জন্য ১৮৩৮ সালে জেলখানার কয়েদিদের দিয়ে এই জলশয় খনন কাজ শুরু করান। ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত এই কাজ চলে। এই সরোবরের আরও একটি নামও রয়েছে। নিবারণ সায়র। জেলার বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের স্মৃতিতে এই নাম হয়। এই সাহেব বাঁধের মোট এলাকা ৯২.৮৪৮ একর। বর্তমানে জলাশয়ের এলাকা ৭৫.৮৪ একর। কয়েক বছর আগেও অর্থাৎ জাতীয় সরোবর ঘোষণার পরেও এই জলাশয়ের অবস্থা ছিল বেহাল।
[আরও পড়ুন: লকডাউনের বন্ধু গাছ-ফুল-পাখিরা, ছোট্ট বাগানই যেন বিকেলের বৈঠকখানা শিক্ষিকার]
তবে বর্তমানে পুরসভা এই জলাশয়ে থাকা কচুরিপানা পরিষ্কার করে শ্রী ফিরিয়েছে। এখন আর এই সরোবরে গ্রে হিরণ, পারপেল হিরণ, গ্রিন সানের মত পরিযায়ীরা ডানা ঝাপটায় না। আসলে সাহেব বাঁধ এখন পর্যটনের অন্যতম অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তাই জাতীয় সরোবরে ভেসে বেড়ায় শিকারা। কিন্তু এই জলাশয়ে মাছের মড়ক নিয়ে ধন্দে পুরসভা। আপাতত পর্যটকের ভিড় নেই, তাই সাহেব বাঁধের এই চেহারা তাঁদের চোখে পড়েনি। নইলে আনন্দের বদলে এই দৃশ্য তাঁদের বিষণ্ণই করে তুলত হয়ত।
ছবি: সুনীতা সিং।
The post সাহেব বাঁধের স্বচ্ছ জলে মাছের মড়ক! জাতীয় সরোবরের ঘটনায় চিন্তিত প্রশাসন appeared first on Sangbad Pratidin.