প্রিয়াঙ্কা-তিনি একসঙ্গে। কোথায়? মুসৌরির আউটডোরে। একে অপরের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করলেন? রাহুল নাকি মনোবিদের সাহায্য চেয়েছিলেন? নিজেই লিখছেন কফিহাউস-এর জন্য৷
ছোটবেলায় সলমন খান আর মনীষা কৈরালার ব্রেক-আপের গল্প ফিল্ম ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম। তারপর ‘খামোশি’ যখন রিলিজ করে, বিস্মিত হয়ে ভেবেছিলাম ঝগড়া থাকা সত্ত্বেও পার্ট করল কী করে? সে শৈশবে আমার পক্ষে ভাবা কঠিন ছিল একদিন আমিও পর্দার মানুষ হব। এবং কাছাকাছি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমিও যাব। বিচ্ছেদের পর আমি আর প্রিয়াঙ্কা ছবি আগেও করেছি, কিন্তু তখন সম্পর্কে বন্ধুত্ব ছিল। এখন দু’জন দোষারোপের কাঠগড়ার দু’প্রান্তে। যে যার আপেক্ষিক সত্যিকে এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি। কোনটা যে ধ্রুব, সেটা বলা কঠিন। আমি আমার দিকটা দেখছি, ও ওর দিক। এ রকম সময় ‘ব্যোমকেশ’-এ একসঙ্গে অভিনয় করার অফার এল। অজিত আমার অনেক দিনের প্রিয় চরিত্র। অরিন্দমদার (শীল) সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা খুব ভাল। ব্যোমকেশ অর্থাৎ আবির (চট্টোপাধ্যায়) আমার অনেক দিনের বন্ধু। সোহিনীও (সরকার) পরিচিত এবং খুবই ভাল সম্পর্ক।
[ঋতুপর্ণা, দেবশ্রীর থেকে কী উপহার চান? অকপট প্রসেনজিৎ]
সবই তো বোঝা গেল, কিন্তু প্রাক্তনকে নিয়ে করব কী? সে তো শশীকান্ত-র মতো প্রেসে আমাকে বেতালা চাঁটিয়ে চলেছে তবলার ন্যায়। মুসৌরি যাওয়ার কয়েক দিন আগে পর্যন্ত যে আতান্তরে কেটেছে সে বিষয়ে আমার অন্তত সন্দেহ নেই। সে সময় ঈশ্বরের মতো দেখা দিল মনোবিদ বন্ধু। সে বলল, পুরো শুটিং জুড়ে ওকে চেয়ার-টেবিল ভাববি। তা হলে কোনও অসুবিধা হবে না। অবশ্যই ইজিয়ার সেড দ্যান ডান। কিন্তু শুটিংয়ে সারভাইভ করতে আমাকে খুব সাহায্য করেছিল। মুসৌরিতে আমি আর সোহিনী শুটিংয়ের দু’দিন আগে পৌঁছলাম। দু’জনেরই তুমুল খাটনি গেছে। সোহিনীর ‘ভূমিকন্যা’ আর আমার ‘অর্ধাঙ্গিনী’-তে টেলিভিশনে তুমুল খাটছি বলে অরিন্দমদা শুধু রেস্ট নেওয়ানোর জন্য জেদ করে আমাদের নিয়ে এসেছে। আনার পর বলেছে, “আগে ঘুমো, গাঁতিয়ে ঘুমো, বিকেলে ঘুরতে বেরব।”
[‘রাহুল নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে টায়ার্ড হয়ে গেছি’]
ইতিমধ্যে একটি মিষ্টি মেয়ে এসে কেউমেউ করতে শুরু করেছে। মেয়েটির নাম বিবৃতি। তার বক্তব্য, তার ডায়েটের পেঁপে হোটেলের জানালা দিয়ে ঢুকে বাঁদরপ্রবর নিয়ে গেছে। শুধু নিয়েই যায়নি, যাওয়ার পথে গভীর রোম্যান্টিক চোখে তাকিয়ে চুলে বিলি কেটে দিয়ে গেছে। এভাবে যে মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়, তার সঙ্গে জমতে দেরি হয় না। হলও না।
আমি, সোহিনী, অরিন্দমদা, বিবৃতি প্রথমে ল্যান্ডর (Landour) গেলাম। ল্যান্ডর বেকারি পৃথিবীর এমন এক প্রান্তের দোকান যেখানে সময় থমকে গেছে এক শতাব্দী আগে। দোকানের উলটোদিকে ঝুরঝুরে প্রাচীন মারুতি ভ্যান, যেখানে লেখা-উই উইল স্টার্ট হোম ডেলিভারি অ্যাজ সুন অ্যাজ আওয়ার ভেহিক্ল গেটস ফিক্সড। আমাদের বাহনটি সারানো হয়ে গেলেই আমরা হোম ডেলিভারি শুরু করব।
নিচু ছাদের বেকারি, যেখানকার আমন্ড কেকের গন্ধ আমার কলোনিয়াল অতীত ধরে রেখেছে, যেভাবে তোতাপাখির বুকে ধরা থাকে রাক্ষসীর প্রাণ। আর একটি বোর্ডে লেখা-উই ডোন্ট হ্যাভ ওয়াই-ফাই, প্রিটেন্ড ইটস ১৯২০ অ্যান্ড টক উইথ ইচ আদার। আমাদের ওয়াই-ফাই নেই, ধরে নিন এটা ১৯২০ সাল আর একে অন্যের সঙ্গে কথা বলুন।
[‘দশ বছরের সম্পর্ক কিন্তু বিয়ে নিয়ে কিছু বলব না’]
ল্যান্ডর বেকারিতেই প্রচুর খাওয়া হয়ে গেছিল। কিন্তু অরিন্দমদার ইউনিটে ‘খাওয়া বেশি হয়েছে’ বলাটা রীতিমতো অন্যায়, blasphemous. তাই গজগজে পেট নিয়েই দলমা’স নামক তিব্বতি রেস্তরাঁয় ঢুকলাম। এবং সত্যিই ওখানকার গরম শুয়োরের থুকপা এতটাই সুস্বাদু যে সে নিজগুণেই আপনার পেটে জায়গা করে নেবে। কিন্তু একদিন ঘুরেই বুঝলাম, ফুটবল বিশ্বকাপের যে জ্বর নিয়ে শহর ছেড়েছিলাম তার স্পর্শ থেকে এই পাহাড়ি জনপদটি বঞ্চিত। কোথাও কোনও ফ্ল্যাগ নেই। কোনও যুবক-যুবতী প্রিয় দলের জার্সি পরে ঘুরছে না। বিশ্বকাপের জ্বর নিয়ে ঢুকল আবির আর ঋষি। আবির আমারই মতো আর্জেন্টাইন। ঋষি জার্মান। পদ্মদা, আমাদের লেখক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তারস্বরে ব্রাজিলের জন্য চেল্লাচ্ছে। অরিন্দমদা’র যাবতীয় মনোযোগ সিনেমায় থাকলেও খেলার আপডেট রাখে এবং সময় মতো টিটকিরি মারতে ছাড়ে না। আমার ছোটবেলার প্রিয় সিরিয়াল ‘স্বাভিমান’-এর করণ, হর্ষ ছায়ার সঙ্গে ওখানে আলাপ হল। ছোটবেলার হিরোরা মনে অনেক বেশি রেখাপাত করে। তাই হর্ষজির সঙ্গে আলাপ খুব স্পেশ্যাল। আর একটা সত্যি এ মুহূর্তে স্বীকার করে নেওয়া ভাল- আমরা দু’জনেই হাওয়া ও ধোঁয়ায় ভাল থাকি। সেটাও ভাবের আর এক সূত্র। ধোঁয়ার কথায় বলি, আপনাদের প্রিয়, গুণধর আবির চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল আমার স্মোকিং থামানো। ব্যোমকেশ আর অজিতের যে সম্পর্ক আপনারা দেখবেন, তা অনেকটাই ব্যক্তিগত জীবনের এক্সটেনশন মাত্র। আমি ওই বিপদের সময় আবিরকে আমার যাবতীয় প্রবলেম বলতাম। মন খুলে বলতে পারতাম ওকে। জানতাম ও জাজ করে না আমাকে। আর ওকে বলা মানে ওকেই বলা। আর কেউ জানবে না।
[‘সুনীলদা নেই তাই সর্বত্র নুন কম মনে হয়’]
আমি, আবির, সোহিনী অর্ধেক জায়গায় একসঙ্গে যেতাম (খুব সম্ভবত অরিন্দমদা প্ল্যান্ড ইট দ্যাট ওয়ে) আর দারুণ মজার ছোট ছোট খেলা খেলতাম। সব ক’টা খেলাই ইন্ডাস্ট্রি ইনসাইডারদের নিয়ে, তাই এখানে বলতে পারব না। জার্মানি এ বারের বিশ্বকাপে আমাদের যতটা হতাশ করেছে, ততটাই চমকেছে জার্মান সাপোর্টার ঋষি। ঋষিকে (অর্জুন) আমরা যারা চিনি তারা জানি ও কতটা ইনোসেন্ট। ওকে অঞ্জনদা (দত্ত) সব থেকে বেশি র্যাগিং করেছে। তবে আমরা কেউই কম যাইনি। আবির আর অরিন্দমদাও ওকে পাগল করে দিয়েছে।
সৌরসেনী আর সুপ্রভাত ওদের সংলাপ বলায় একটা অদ্ভুত নোয়াখালির ডায়ালেক্ট এনেছে, সেটা যথেষ্ট কঠিন। তবে অঞ্জনদাকে অভিনয় করতে দেখা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ইট ওয়াজ পোয়েট্রি ইন মোশন। সিরিয়ালের শুটিং করতে আমায় কলকাতা ফিরতে হয়েছিল। সেই ফাঁকে আমার দু’জন কাছের বন্ধু রিম্পি (অনিন্দিতা) আর ইন্দ্রাশিস পার্ট করে গেছে। ওদের সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি।
[ছবির জন্য গান তৈরি করতে আগ্রহী রাঘব, চান দায়িত্ব]
অভিনেতাদের যে যত্নে রাখা উচিত এবং সম্ভব, সেটা অরিন্দমদার কাজে, অরিন্দমদার কাছে এলে টের পাওয়া যায়। মুড ক্রিয়েট করার জন্য মিউজিক বাজানো থেকে অ্যাক্টরকে একা ছেড়ে দেওয়ার স্পেস-সবটাই অরিন্দমদা নিজে জানেন বলে কাজ করতে সুবিধা হয়।
দেখুন, ঋত্বিক (চক্রবর্তী) আর অপুদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) দু’জনেই দারুণ। অজিত হিসেবে অনবদ্য। কিন্তু তুলনা করার সময় আমরা অনেক সময় কে. কে. রায়নার অজিতকে ভুলে যাই। উনিও খুব ভাল অভিনেতা কিন্তু। আমি লড়ে গেছি নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে। বাকি বিচার আপনাদের। হ্যাঁ, যা, অজিতের মতো আমিও লিখি একটুআধটু। আর মুসৌরির টেবিল-চেয়ার খুবই সুন্দর। এখনও।
The post ‘প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মনোবিদের সাহায্য চেয়েছিলাম’ appeared first on Sangbad Pratidin.