অভিরূপ দাস: নয়ডায় কমেছে। তলানিতে নেমেছে মুম্বই। তথাকথিত আর্থিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুগুলিকে কয়েক যোজন পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে কলকাতা, অন্তত আবাসন বাণিজ্যের নিরিখে। ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার চাহিদায় সারা দেশের মধ্যে আমজনতার নয়নের মণি তিলোত্তমা কলকাতা।
দেশের অন্যতম এক সম্পত্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের সমীক্ষা তেমনটাই বলছে। এই ওয়েবসাইটে ঢুকে বাড়ি, ফ্ল্যাট খোঁজেন ইচ্ছুক ক্রেতারা। সেখানে দেখা গিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে কলকাতায় রেসিডেনসিয়াল ডিমান্ড বা বাড়ি ফ্ল্যাট কেনার চাহিদা বেড়েছে ৬.৫ শতাংশ। সেখানে দিল্লিতে তা কমে গিয়েছে অনেকটাই। তলানিতে ঠেকে এখন তা মাইনাস ১২.৮ শতাংশ। একই অবস্থা গুরগাঁও, মুম্বই, নবি মুম্বইয়ের। গুরগাঁওয়ে বাড়ি ফ্ল্যাট কেনার চাহিদা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। চাহিদা কমে তা মাইনাস ১.৯ শতাংশ। মুম্বই মাইনাস ২.৪ শতাংশ। নবি মুম্বইতে চাহিদা সামান্য বাড়লেও (১.৮ শতাংশ) তা কলকাতার অনেক পিছনে।
[আরও পড়ুন: সাংসদ পদ খারিজের ক’দিন পরই এবার নির্বাচনে লড়ার ক্ষমতা হারালেন আরেক রাহুল গান্ধী!]
শহরের বিশিষ্টরা বলছেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। আছে নিরাপত্তা। পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে বসবাস করা যায়। তাই শহর কলকাতায় ফ্ল্যাট, বাড়ি কেনার চাহিদা বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। কয়েক দশক ধরে কলকাতার বাসিন্দা অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী দত্তর মতে, ‘‘দিল্লি, নয়ডার তুলনায় অনেক নিরাপদ কলকাতা।’’ শুনিয়েছেন নিজের অবাক করা অভিজ্ঞতা। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘একবার দিল্লিতে একটা শপিং মলে গিয়েছিলাম। সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছিল বেরোতে। কেমন একটা ভয় ভয় লাগছিল। নির্ভয়া কাণ্ডের পর দিল্লিতে গেলে এখন গা-ছমছম করে। কিন্তু এ শহরে রাত দশটা বেজে গেলেও কোনও ভয় লাগে না।’’
দেশের অন্যতম আবাসন সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ‘ম্যাজিক ব্রিকসের’ এই সমীক্ষায় খুশি আবাসন ব্যবসায়ীরা। কোভিডে লকডাউনের সময় ধাক্কা খেয়েছিল আবাসন ব্যবসা। ফ্ল্যাট, বাড়ি বিক্রি লাটে উঠেছিল। ‘আনলক’ সময়ে এবার চাহিদা বাড়ছে রকেটের গতিতে। আর তাই রাতে মশা, দিনে মাছির শহরে ফ্ল্যাট, বাড়ি কেনার চাহিদা বেড়ে গিয়েছ কয়েকগুণ। ওই সংস্থার দাবি, প্রতি মাসে সারা দেশ থেকে প্রায় দু’কোটি মানুষ তাদের ওয়েবসাইটে ফ্ল্যাট, বাড়ির খোঁজ করেন। সমীক্ষা অনুযায়ী এই মুহূর্তে ফ্ল্যাট, বাড়ি কেনার চাহিদায় দেশের মধ্যে চার নম্বরে কলকাতা। সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে আমেদাবাদে। তারপর বেঙ্গালুরু, তৃতীয় স্থানে পুণে।
কলকাতা শহরের খোলনলচে বদলে গিয়েছে অনেকটাই। শহরের পার্কিংয়ে আধুনিকতা এসেছে। বেড়েছে সবুজ। কলকাতা পুরসভার উদ্যান এবং পার্কিং বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, এই সমীক্ষাই বলে দিচ্ছে কলকাতা সারা দেশের কাছে অন্যতম পছন্দের। মেয়র পারিষদের কথায়, কোনও শহরে ফ্ল্যাট অথবা বাড়ি কেনার আগে মানুষ মূলত তিনটে জিনিস নজরে রাখে। এক, সে শহরে মহিলারা নিরাপদ কি না। দুই, শহরটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কি না। তিন, বিপদে পড়লে মানুষ কাউকে পাশে পাবে কি না। মেয়র পারিষদের যুক্তি, তিলোত্তমায় মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা অভূতপূর্ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর কলকাতার সৌন্দর্যায়ন বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। যে কারণেই বেড়েছে ফ্ল্যাট কেনার চাহিদা।