সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাস দেড়েক আগের কথা। শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ। তার পর পদ্মা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। সরকার পতন হয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে এসেছেন ভারতে। দেশের উত্তর প্রান্তে যখন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, তখন দক্ষিণে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে চুরমার হয়েছে বাংলাদেশ। সোশাল মিডিয়া উত্তাল। খেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে তাতে স্পর্শ লেগেছে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতির।
ভারতে আসার আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে এসেছিলেন শান্তরা। স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজিত ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ভারতের মাটিতে রোহিতদের হারাবেন, এমন আত্মবিশ্বাস ধরা পড়েছিল তাঁদের গলায়। ওপার বাংলার ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যেও 'হুঙ্কার'ও শোনা গিয়েছিল। সেই 'ব্যাঘ্রগর্জন' যে এখন থেমেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। এখন পালটা দিচ্ছেন ভারতের ভক্তরা।
সেদিকে তাকানো গেলে ক্রিকেট সংক্রান্ত কটাক্ষ ছাড়াও জড়িয়ে থাকছে সমসাময়িক রাজনীতির প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে কড়া নজর ছিল ভারতীয়দের, আরও স্পষ্ট করে বললে বাঙালিদের। ভার্চুয়াল জগতে যে দুদেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে, সেটা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। এখন কেউ তুলে নিয়ে আসছেন ইলিশ মাছের প্রসঙ্গও। সপ্তাহ খানেক আগেই মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছিলেন, "আমরা ভারতে কোনও ইলিশ পাঠাতে পারব না। এটা দামি মাছ।" কেউ মাছ পাঠাতে না চাইলে জোর কিছু করার নেই। কিন্তু পালটা উত্তর তো দেওয়াই যায়। ভারতের টেস্ট জয় যেন তারই রাস্তা করে দিল।
কটাক্ষ করা হচ্ছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ও সমন্বয়কদেরও। যেভাবে 'নতুন বাংলাদেশ'কে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন সে দেশের সমর্থকরা, সোশাল মিডিয়ায় ধরা পড়েছিল আগ্রাসন, তার সমস্ত উত্তর ফেরত যাচ্ছে ভারতের ভক্তদের তরফ থেকে। ব্যঙ্গাত্মকভাবে অনেকে লিখছেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম ভারতের কাছে পরাজয় হল।" এমনকী জাতীয় সঙ্গীত বদলানোর যে বক্তব্য ওপারে ইতিউতি উঁকি দিচ্ছে, সেই প্রস্তাব নিয়ে কটাক্ষ জারি। স্পষ্টতই, সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুদেশের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটাই যেন বাইরে এল ভারতের টেস্টজয়কে কেন্দ্র করে।
তাতে কি ক্রিকেটের 'জেন্টলম্যান' বিষয়টা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? সেদিকে অবশ্য আপাতত কারওর নজর নেই। বাইশ গজ পার করে তা এখন দুদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সাধারণ জনগণের আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রিকেটও সেখানে একটা মাধ্যম। সামনেই দ্বিতীয় টেস্ট। সেই ম্যাচের ফল যে ভারতের দিকেই হেলবে, তা এখন থেকেই অনুমান করতে শুরু করেছে ক্রিকেটমহল। তাতে যে সোশাল মিডিয়া ফের উত্তাল হয়ে উঠবে, তার দেওয়াললিখন এখন থেকেই পড়ে ফেলা যায়।