সব্যসাচী বাগচী: যশস্বী ভব! অনেক বছর পর আবার ক্রিকেটপ্রেমীরা কোনও ভারতীয় ওপেনারকে মারকুটে মেজাজে বাইশ গজের যুদ্ধে বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখলেন। ঠিক এমনভাবেই তো একটা সময় বোলারদের ধ্বংস করতেন বীরেন্দ্র শেহওয়াগ (Virender Sehwag)। বীরু যেমন চাপের মুখে থাকা ভারতীয় দলকে টানতেন, ঠিক সেই ছকেই যশস্বী জসওয়াল (Yashasvi Jaiswal) বিপক্ষের বোলিংকে বুঝে নিলেন। শতরান এল তাঁর আগ্রাসী ইনিংসের সৌজন্যে। আর তাই এই মুম্বইকরের মধ্যে নজফগড়ের নবাবের ছায়া দেখছেন তাঁর ছোটবেলার কোচ জ্বালা সিং (Jwala Singh)।
গত বছরের ১৩ জুলাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের (West Indies) বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় দিন শতরান করেছিলেন যশস্বী। ডমিনিকার বাইশ গজে ঘটেছিল ড্রিম ডেবিউ। এবার কেরিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট খেলতে নেমে করলেন ইংল্যান্ডের (England) বিরুদ্ধে (IND vs ENG) করলেন দ্বিতীয় শতরান। বিশাখাপত্তনমে লাঞ্চ বিরতির আগে অর্ধ শতরান পূর্ণ করেন যশস্বী। দ্বিতীয় সেশনে এক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তিন অঙ্কের রানে পৌঁছে যান ২২ বছরের বাঁহাতি ওপেনার। টম হার্টলিকে লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ঘরের মাঠে প্রথম শতরান পূর্ণ করেন যশস্বী। তরতরিয়ে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) স্কোরবোর্ডে জুড়তে থাকে রান।
আরও পড়ুন: ছয় মেরে সেঞ্চুরি, বিশাখাপত্তনমে জয়সওয়ালই ‘যশস্বী’
এমন মারকুটে শতরান দেখার পর সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে টেলিফোনে যশস্বীর ছোটবেলার কোচ জ্বালা সিং বলেন, “ব্যাট করার সময় আমার ছাত্র একটাই মন্ত্রে বিশ্বাস করে। বল দেখো আর মারো। ওকে দেখে মনে হয় যেন বীরেন্দ্র শেহওয়াগের আধুনিক সংস্করণ! শেহওয়াগ অনেক বড় ক্রিকেটার। তবে আমার ছাত্রও কম কিসের! শুধু মাত্র হ্যান্ড-আই কোওর্ডিশনের উপর ভর করে যশস্বী রান করছে না। সঙ্গে রয়েছে জমাটি ডিফেন্স। এবং একাধিক শট। আর সেইজন্য খুব কম সময়ের মধ্যেই ও টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসাযোগ্য হয়ে উঠেছে।”
জন্ম উত্তরপ্রদেশে। কর্ম মুম্বইয়ে। সেই বিখ্যাত আজাদ ময়দানে। এই মাঠ থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে উঠে এসেছেন শচীন তেণ্ডুলকর, বিনোদ কাম্বলির মতো ক্রিকেটারেরা। স্কুল ক্রিকেটে শচীন এবং কাম্বলির ৬৬৪ রানের জুটি হয়েছিল এই ময়দানেই। সেখানেই ক্রিকেট শেখা শুরু করেছিলেন যশস্বী। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ছোটবেলার লড়াই। সেটাই কি এই তরুণকে আরও উজ্জবিত করেছে?
জ্বালা সিং যোগ করলেন, “অবশ্যই ছোটবেলার সেই লড়াই করার দিনগুলোই যশস্বীকে ‘খারুস’ করে তুলেছে। এবং নিজের মনকে ইস্পাত-কঠিন করে তোলার জন্য আজাদ ময়দানকেই মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিল। অনেকে বলে আমি ওর পাশে না দাঁড়ালে যশস্বী নাকি হারিয়ে যেত! এগুলো সব বাজে কথা। আসলে যশস্বী যে ধরনের ক্রিকেটার ওর বড় মঞ্চে খেলা সময়ের অপেক্ষা ছিল। আমি শুধু অনুঘটকের কাজ করেছি।”
দেশের হয়ে এখনও একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেনি। টি-২০ ফরম্যাটে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। ১৭টি টি-২০ ম্যাচে তাঁর রান ৫০২। ১৬১.৯৩ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে করে ফেলেছেন ১টি শতরান ও ৪টি অর্ধ শতরান। এবার এহেন যশস্বী টেস্ট ক্রিকেটেও তাঁর ‘যশ’ ছড়িয়ে যাচ্ছেন। মনে করাচ্ছেন এক সময় বোলারদের কাছে ত্রাস শেহওয়াগকে!