shono
Advertisement
Mahakumbh

বিপণনের কৌশলেই কি কুম্ভ ১৪৪? 'মহা' গণনায় বিস্তর ধন্দ

২০১৪ সালের ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সালের কুম্ভ হয়েছিল ১৪৪ বছরের ব্যবধানে।
Published By: Kishore GhoshPosted: 08:59 AM Feb 25, 2025Updated: 08:59 AM Feb 25, 2025

গৌতম ব্রহ্ম, প্রয়াগরাজ: পঁচিশের কুম্ভ কি সত্যিই ‘মহা’? সত্যিই ১৪৪ বছর পর এই মাহেন্দ্রযোগ?

Advertisement

সংশয় বিস্তর। কারণ, ২০১৪ সালের ১ জুলাই কুম্ভমেলা নিয়ে ক্যাগ যে রিপোর্ট জমা করেছে, তাতে স্পষ্ট, ২০১৩ সালের কুম্ভমেলাই ছিল ১৪৪ বছরের ব্যবধানে হওয়া সেই বিরল মহাকুম্ভ। উত্তরপ্রদেশ সরকারও ২০২৩ সালে ‘গাইডলাইনস ফর ম‌্যানেজিং ক্রাউডস অ‌্যাট ইভেন্টস অফ মাস গ‌্যাদারিং’ নামে ৬০ পাতার ডকুমেন্টে ২০১৩ সালের কুম্ভমেলাকেই ‘মহাকুম্ভ’ বলে উল্লেখ করেছে।

তাহলে, আদিত্যনাথ যোগীর সরকার ২০২৫-এর কুম্ভের গায়ে কেন ১৪৪ বছরের ট‌্যাগ লাগাল? রাজনৈতিক কারণে? নাকি বিপণনের কৌশল?

স্বভাবতই প্রশ্নটা প্রকট! বাস্তবিকই কুম্ভের প্রচারে এবার গোড়া থেকে সুকৌশলে ১৪৪ বছরের মিথ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আখড়া পরিষদের বিভিন্ন অংশকে দিয়ে বলানো হয়েছিল, পঁচিশের কুম্ভ ১৪৪ বছরের ব্যবধানে হওয়া অমৃতযোগে স্পন্দিত। সেই কারণেই এমন বাঁধনভাঙা ভিড় প্রয়াগরাজের সঙ্গমে আছড়ে পড়েছে বলে দাবি বিভিন্ন মহলের। আসলে সবাই এই বিরল মুহূর্তটার সাক্ষী হতে চেয়েছিল। 

অথচ কুম্ভমেলা নিয়ে মান্যতা পাওয়া দু’টি প্রামাণ্য নথি অন্য কথা বলছে।  ২০১৩ সালে প্রকাশিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ‌্যালয়ের গবেষকদের লেখা ‘কুম্ভ মেলা : ম‌্যাপিং দ্য এফিমেরাল মেগা সিটি’ বইতে দাবি করা হয়, ২০০১ সালের কুম্ভমেলাই ছিল ১৪৪ বছরের মহাকুম্ভ। ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টুলি আবার ১৯৮৯ সালের কুম্ভমেলাকে ‘মহাকুম্ভ’ হিসাবে দাবি করেছেন। 
বইয়ের ১২ পাতায় দাবির সপক্ষে পুরোহিতদের বিশ্বাসের প্রসঙ্গ টেনেছেন টুলি। তাহলে কোনটা ঠিক? ১৯৮৯, ২০০১, ২০১৩ না ২০২৫? ১৪৪ বছরের কুম্ভ কোনটা? নাকী বিপণনের কৌশলে ২০৩৭-এর কুম্ভও ‘মহাকুম্ভ’ বলে প্রচার হবে? এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, ১৪৪ বছরের মিথই এবারের কুম্ভমেলার প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। এবারের কুম্ভমেলায় আসা ইস্তক এই উপলব্ধিই হয়েছে।

প্রয়াগরাজ বিমানবন্দরে নেমে শুক্রবার গাড়ি নিয়ে যখন সঙ্গমের পথ ধরলাম তখনই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছিল আজ কপালে দুর্ভোগ আছে। মাইল দেড়েক যাওয়ার পরই শুরু হল প্রাণান্তকর জ্যাম। কাতারে কাতারে সঙ্গমমুখী ভিড়ের মধ্যেই গুঁতোগুঁতি করছে দুই, তিন ও চার চাকা। পায়ের উপর দিয়ে চাকা চলে যাচ্ছে, কখনও গাড়ির পিছনে ধাক্কা দিচ্ছে দু চাকা। তবু কোনও হেলদোল নেই। গোটা কুম্ভে একবারই শুধু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় দেখলাম। স্নান সেরে ফেরার পথে আকবরের ফোর্টের কাছে, খাবার নেওয়ার লাইনে। বাকি সব সেই ১৪৪ বছরের বিশ্বাসের সুতোয় গাঁথা।

সনাতনী ভারতবাসীদের মনে কি এক দুকূল ছাপানো প্লাবন। রবিবার পর্যন্ত ৬২ কোটির বেশি মানুষ এসেছে কুম্ভে। মার্সিডিজ, বিএমডব্লুতে চড়া বিত্তবান গরিব ভ্যানওয়ালার সঙ্গেই অবগাহন করছেন গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর ত্রিবেণীতে যাকে বলে ‘ডাইভ ইন ডিভিনিটি’। জাতি, বর্ণ, বয়স, বিত্ত সব একাকার। শুধু জেগে আছে ১৪৪ বছরের মহাকুম্ভের সাক্ষী থাকার আকুলতা। আসলে, ভারতীয়দের গড় আয়ু ৬৭.৭৪ বছর। সুতরাং ১৪৪ বছর পর কুম্ভ দেখতে গেলে দু’টি জন্মেও হবে না! তাই এই এমন বিরল মেগা ইভেন্টে যাওয়ার আগ্রহ তো তৈরি হবেই। 

এখানকার কেউ তো আর পরের মহাকুম্ভ দেখার জন্য বেঁচে থাকবে না। যেমন ১৮৮১ সালের কেউ বেঁচে নেই। ২০২৫ সালের কুম্ভকে ধরলে তো ওই বছরই ব্রিটিশ শাসনকালে শেষ মহাকুম্ভ হওয়ার কথা। অথচ ১৯১১ সালে এইচ আর নেভিল প্রকাশিত এলাহাবাদ গেজেটে ১৮৮১ সালে কুম্ভমেলা আয়োজনের কোনও উল্লেখ নেই। সেখানে উল্লেখ ১১৯ বছর আগে ১৯০৬ সালে প্রয়াগে কুম্ভমেলার আয়োজন হয়েছিল। তার আগের কোনও তথ্য নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কুম্ভের প্রচারে এবার গোড়া থেকে সুকৌশলে ১৪৪ বছরের মিথ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
  • সনাতনী ভারতবাসীদের মনে কি এক দুকূল ছাপানো প্লাবন।
  • নেভিল প্রকাশিত এলাহাবাদ গেজেটে ১৮৮১ সালে কুম্ভমেলা আয়োজনের কোনও উল্লেখ নেই। 
Advertisement