সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিলুপ্তপ্রায় বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক বিচরণভূমি পূর্ব লাদাখ। জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে সেই অঞ্চলেই এবার অস্ত্রভাণ্ডার ও পরিকাঠামোগত নির্মাণকাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হল কেন্দ্রকে। লাদাখের হিমশৈলে চিনা আগ্রাসন রুখতে এই নির্মাণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণ বিভাগের তরফে।
২০২০ সালে গালোয়ান ঘাঁটিতে ভারত ও চিন সেনার সংঘর্ষের পর সীমান্ত সমস্যা মেটাতে দফায় দফায় বৈঠক করেছে দুই দেশ। ৫৪ মাস ধরে লাগাতার সেই বৈঠক চলার পর সম্প্রতি সীমান্ত থেকে সেনা সরাতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, চিনকে ভরসা করা যায় না। এই পরিস্থিতিতে লাদাখ নিয়ে সতর্ক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। জানা গিয়েছে, পূর্ব লাদাখে সেনা উপস্থিতি বাড়াতে ও অস্ত্রভাণ্ডার নির্মাণ করতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র। এর জন্য বেছে নেওয়া হয় চাংথাং ও কারাকোরাম নুব্রা শায়ক অভয়ারণ্যকে। তবে সমস্যা বাধে এখানকার বন্যপ্রাণ। এই দুই অভয়ারণ্যই লুপ্তপ্রায় বহু প্রাণীর স্বাভাবিক বিচরণভূমি।
২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর এই অঞ্চলে অস্ত্রভাণ্ডার তৈরি করতে কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণ বিভাগের স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে অনুমতি চায় প্রতিরক্ষামন্ত্রক। জাতীয় নিরাপত্তা বনাম বন্যপ্রাণ, এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা করতে সঙ্গে গত ২১ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই অঞ্চলের বন্যপ্রাণের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা। সেইমতো চিন সীমান্তবর্তী লাদাখের ওই অংশে অস্ত্রভাণ্ডার গড়ার অনুমতিতে সিলমোহর দেওয়া হয়। এখানে অস্ত্রভাণ্ডার তৈরি হলে যে কোনওরকম কঠিন পরিস্থিতিতে দ্রুত এখান থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা যাবে সেনাকে।
তবে প্রান্তিক ওই অঞ্চলে জাতীয় বন্যপ্রাণ বিভাগের তরফে প্রতিরক্ষামূলক নির্মাণ কাজের সবুজ সংকেত মেলায় ক্ষুব্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা। তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। জানা যায়, লাদাখের চাংথাং অভয়ারণ্য বহু বিলুপ্ত প্রাণীর আবাসস্থল। এখানে পাওয়া যায় তিব্বতি অ্যান্টিলোপ, তিব্বতি বন্য গাধা, তুষারচিতা, তিব্বতি নেকড়ে এবং অসংখ্য প্রজাতির পাখি। এছাড়া কারাকোরাম নুব্রা শায়ক অভয়ারণ্যে রয়েছে, তিব্বতি গাজেল, সাইবেরিয়ান ইবেক্স, ভারাল (নীল ভেড়া) ও এক বিশেষ প্রজাতির উট। এই অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে অনেক উচুতে হওয়ায় সেভাবে কোনও গাছ নেই ঠিকই। তবে এই অংশ ১৯৭২ সালের বন্যপ্রান সংরক্ষণ আইনের আওতাধীন অভয়ারণ্য। কেন্দ্রের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বন্যপ্রাণের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রেখেই এই অস্ত্রভাণ্ডার গঠন করা হবে।