সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিয়েতে পণ হিসেবে জমি-প্রচুর সোনা-গাড়ি পেয়েও খুশি ছিলেন না কেরলের সরকারি দপ্তরের কর্মী। যৌতুক হিসেবে প্রাপ্ত গাড়ি নিয়ে প্রায়শই স্ত্রীকে কটাক্ষ করতেন তিনি। সেই মানসিক অত্যাচারের সীমা এতটাই ছাড়িয়েছিল যে শেষপর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় ওই সরকারি আধিকারিকের স্ত্রীকে। ২০২১ সালের এই আত্মহত্যার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল কেরল (Kerala) প্রশাসন। পণপ্রথার বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টা অনশন করেছিলেন দক্ষিণের এই রাজ্যের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ। গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলা দেওয়া এই মামলার রায়দান আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার। তার আগে অবশ্য অভিযুক্ত সরকারি কর্মীর জামিন খারিজ করে হাজতে পাঠানো হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁর চাকরিও।
২০২০ সালের মে মাসে কেরলের পরিবহণ দপ্তরের পদস্থ আধিকারিক কিরণ কুমারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়ুয়া বিস্ময় ভি নায়ার (Vismaya dowry death)। বিয়ের সময় বিস্ময়ের বাবা ত্রিভিকারমান নায়ার যৌতুক হিসেবে ১.২৫ একর জমি, ১০০ ভরি সোনা দিয়েছিলেন। সঙ্গে ১১ লক্ষ টাকা দামের একটি গাড়িও নবদম্পতিকে উপহার দিয়েছিলেন । কিন্তু গাড়ি নিয়ে মোটেও খুশি ছিলেন না পেশায় অ্যাডিশনাল ভেহিক্যালস ইন্সপেক্টর কিরণ কুমার। যা নিয়ে মাঝেসাঝেই স্ত্রী বিস্ময়কে কটাক্ষ করতেন। সেই কটাক্ষ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল শেষপর্যন্ত ২০২১ সালে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বিস্ময়। তার পরই অভিযোগের আঙুল ওঠে কিরণের দিকে।
[আরও পড়ুন: ২৩ বছর পর কলকাতায় ডলফিনমুখী বিশাল বিমান, জানেন এয়ারবাসটির বিশেষত্ব?]
অভিযোগ ওঠার পরই কিরণের সরকারি পদ কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা করা হয়। ৫০০ পাতার চার্জশিটে বিস্ময়ের আত্মহত্যার জন্য কিরণকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, কিরণের লাগাতার মানসিক অত্যাচারের জন্যই এই পথ বেছে নিয়েছিলেন বিস্ময়। এই ঘটনায় কেরলে তোলপাড় শুরু হয়। যৌতুকবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে। রাজভবনে ২৪ ঘণ্টা অনশন করেন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পড়ুয়াদের থেকে আন্ডার টেকিং নিতে বলা হয়। যেখানে ভবিষ্যতে পণ না নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করবেন পড়ুয়ারা। তার পরেও যদি কোনও পড়ুয়ার বিরুদ্ধে যৌতুক নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে তাঁর ডিগ্রি বাতিল করবে বিশ্ববিদ্যালয়।
সোমবার কিরণকে দোষী সাব্যস্ত করেছে কেরলের আদালত। জামিন খারিজ করে তাকে হাজতেও পাঠিয়েছে। এবার কোন শাস্তি তার জন্য অপেক্ষা করছে সেটাই দেখার। এ প্রসঙ্গে বলা রাখা দরকার, ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পণের জনম্য মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৮৩ জনের। ২০২১ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ১০টি।