বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যখন আশ্রয় দিয়েছে ভারত, তখন উলটো সুর সিপিএমের। হাসিনা সরকারের পতনকে কার্যত একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং তার ফলেই গণ অভুত্থান বলে অভিহিত করলেন কমরেডকুলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পার্টি মনে করে, হাসিনার পরিণতিকে দুর্নীতিগ্রস্থ, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন বলে অভিহিত করেছে। গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে হাসিনা সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপের বলি হয়েছেন প্রায় তিনশো মানুষ। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। হাসিনার দেশত্যাগের পর ঘটনাক্রম দেখে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ট জনতা যখন বিষয়টিকে মৌলবাদী আস্ফালন হিসাবেই দেখছে তখন সিপিএমের উলটো সুর দলের অভ্যন্তরেই নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্তান আড়াআড়ি ভাগ করেছে নিচুতলার নেতৃত্বকে।
পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারতের প্রথমসারির দলগুলির আওয়ামী লিগ ও হাসিনা সম্পর্কে অবস্থান ছিল অভিন্ন। মঙ্গলবার সর্বদলীয় বৈঠকেও ভিন্ন সুর শোনা যায়নি। তবে বৈঠক শেষে তাল কেটে গিয়েছে সিপিএমের প্রতিক্রিয়ায়। তারা হাসিনার পরিণতিতে দুর্নীতিগ্রস্থ, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন বলে অভিহিত করেছে। দেশটিতে দ্রুত গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল ফিরে আসবে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার জয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ভারতের এক নম্বর কমিউনিস্ট পার্টি।
[আরও পড়ুন: ভয়ে ঘুম ছুটেছে ছিটমহলের, বসিরহাটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের গ্রামে বিএসএফের নজরদারি]
প্রসঙ্গত, সিপিএম বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ও ওয়ার্কাস পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি বিগত বহু বছর ধরেই হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে। সিপিএম পলিটব্যুরোর হাসিনার বিষয়ে এমন অবস্থান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এখনও ভারতের কোনও প্রথম সারির দল এই ধরনের বিবৃতি দেয়নি। বিজেপি এবং ভারত সরকার বাংলাদেশের গোটা ঘটনার পিছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রকে ইঙ্গিত করছে। যদিও হাসিনার বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ নিয়ে ভারত আগেও কোনও মন্তব্য করেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রক প্রথম থেকেই বলেছে, বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
[আরও পড়ুন: হাসিনার ভিসা বাতিল আমেরিকার! আরও চাপে মুজিবকন্যা]
অন্যদিকে, কংগ্রেসও হাসিনার পাশে থাকারই বার্তা দিয়েছে। বস্তুত কংগ্রেসের সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধীই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জার্মানিতে থাকা হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে দিল্লিতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। প্রায় ছ’বছর ভারতে কাটিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। প্রথম সারির দলগুলির মধ্যে সিপিএম উলটো সুরে হাসিনার সমালোচনা করে বিবৃতি দেওয়ায় এর রাজনৈতির তাৎপর্য নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সিপিএমের একাংশ বলছে, বাংলায় তৃণমূল সরকারের একই পরিণতি হবে বলে আগামী দিনে প্রচার করবে সিপিএম। তাই হাসিনা সরকার সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে রাখল। তাছাড়া, হাসিনার পতনে ছাত্র-জনতার সক্রিয় অংশগ্রহণকেও বিবেচনায় রেখেছে পার্টি। কিন্তু অন্য অংশের মতে, হাসিনা সরকারের পতনের পর যেভাবে মৌলবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে তাতে জাতি দাঙ্গা আরও বাড়বে। এছাড়া, সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে জামাতের মতো ঘোষিত মৌলবাদী সংগঠনের। পাকিস্তানও সরকারের ওপর কতৃত্ব কায়েক করার চেষ্ঠা করবে। ফলে ভবিষ্যতে এহেন অবস্থান নিয়ে পার্টিকে ফের ক্ষমা চাইতে না হয়।