সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একেই বলে সহমর্মিতা, পাশে থাকা। দিন দুই আগে প্রয়াত সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল বিপিন রাওয়াতের (Bipin Rawat) শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন মানেজেস অ্যাগনেস। নাঃ, নামে চেনার কথা নয়। পরিচয় দিলেই তাঁর বিশেষত্ব প্রকাশ পাবে। গত ৮ তারিখ, তামিলনাড়ুর চপার দুর্ঘটনায় (Chopper crash) জেনারেল রাওয়াতের পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছিল অ্যাগনেসের সেনা অফিসার স্বামীরও। কিন্তু তখনও পর্যন্ত তাঁর দেহ শনাক্ত করা যায়নি। সেই শোক, উদ্বেগ চেপে রেখেই দেশের সেনা সর্বাধিনায়ককে শেষবারের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন অ্যাগনেস। আর রবিবার, তাঁর স্বামী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (Lt Colonel) হরজিন্দর সিংয়ের শেষকৃত্যে সেই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ালেন রাওয়াতের দুই মেয়ে। বোঝালেন, ব্যক্তিগত শোক সরিয়ে বন্ধুর মতো অপরের পাশে থাকাই প্রকৃত সেনাসুলভ আচরণ। রাওয়াতকন্যা কৃতিকা ও তারিণীর এই সহবৎজ্ঞান দেখে প্রশংসার বন্যা নেটদুনিয়ায়।
৮ ডিসেম্বর, ২০২১ দেশের ইতিহাসের এক কালো দিন। তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) কুন্নুরে বায়ুসেনার চপার ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। চপারে ছিলেন দেশের সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াত, ছিলেন তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত, সহকর্মী আরও ১২ জন। চপারের গ্রুপ ক্যাপটেন বরুণ সিং ছাড়া সকলেরই মৃত্যু হয় দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে। বরুণ সিং এখনও হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। নিহতদের তালিকায় ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল হরজিন্দর সিং। কিন্তু চপারটি দুর্ঘটনার পর তাতে আগুন জ্বলে ওঠায় দেহগুলি কোনওটা অর্ধদগ্ধ, কোনওটার সিংহভাগ দগ্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে সময়মতো দেহগুলি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
[আরও পড়ুন: ‘হিন্দুত্ববাদীদের সরিয়ে দেশে প্রকৃত হিন্দুদের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন’, আহ্বান রাহুল গান্ধীর]
১০ তারিখ যখন প্রয়াত জেনারেল রাওয়াতের শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছি, তখনও নিজের স্বামী হরজিন্দর সিংয়ের দেহ শনাক্ত করতে পারেননি তাঁর স্ত্রী মানেজেস অ্যাগনেস। তবু পরোয়া করেননি। ছুটে গিয়েছিলেন একসঙ্গে বাবা-মাকে হারানো রাওয়াতকন্যাদের কাছে। কৃতিকা, তারিণীর হাত ধরেছিলেন নিজের শক্ত হাতে। মানেজেস নিজেও একসময় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। পরে অবসর নেন। তখনও তিনি নিশ্চিত নন যে দিন দুই পর তাঁকেই নিজের স্বামীর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হবে। রবিবার দুপুরে যখন দিল্লির ব্রার স্কোয়্যারে হরজিন্দর-সহ আরও কয়েকজন নিহত সেনার শেষকৃত্য চলছে, সেসময় আচমকাই এসে অ্যাগনেস এবং তাঁর ১২ বছরের মেয়ে প্রীতের হাত ধরলেন কৃতিকা-তারিণী। সবকিছু হারানোর পর যেন তাঁদের উপস্থিতিতেই ভরসা পেলেন একদা সৈনিক মানেজেস এবং লড়াকু মা-বাবার মেয়ে প্রীত। বুঝলেন, জীবনের বৃত্তটায় এভাবেই আরও বেঁধে বেঁধে থাকা যায়।