নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: মহাজুটি বনাম মহা বিকাশ আঘাড়ির লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রে এবার লড়াই মুখ্যমন্ত্রীর কুরসি নিয়ে। আপাতত সেদিকেই নজর সকলের। সব কিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবারের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হতে চলেছে। বিজেপি সূত্রে খবর, দেবেন্দ্র ফড়ণবিসের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। অর্থাৎ মসনদ থেকে সরতে হচ্ছে একনাথ শিণ্ডেকে। যে সম্ভাবনা শনিবার ভোটগণনার একেবারে শুরুর ট্রেন্ড থেকেই জোরাল হতে শুরু করেছিল।
২৬ নভেম্বর মহারাষ্ট্র বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা মহারাষ্ট্রের নেতা বিনোদ তাওড়ে শনিবার বলেছেন, “আমাদের ২৬ নভেম্বরের মধ্যে সরকার গঠন করতে হবে। কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন সেই সিদ্ধান্ত বিজেপি, শিবসেনা (শিণ্ডে) এবং অজিত পাওয়ারের দল যৌথভাবে নেবে। আজ রাত বা আগামিকাল আমরা সিদ্ধান্ত নেব কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন।” এর পর গতকাল সন্ধ্যার পর একে একে সভাপতি জে পি নাড্ডা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-সহ প্রথম সারির নেতা, মন্ত্রীরা আসতে শুরু করেন। সাতটার পরে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে বিজেপির সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দলের প্রথম সারির নেতাদের বৈঠকে মহরাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফড়ণবিসের নাম নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তাঁর সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাজুটি জোট ক্ষমতা দখলের দিকে এগিয়ে যেতেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হতে চলেছেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগেই শিবসেনা ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানকারী বর্তমানে বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র প্রেম শুক্লার কথায়, “বিজেপির এত ভালো ফল সাম্প্রতিককালে হয়নি। প্রায় এক যুগ আগে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের হার ৯০ শতাংশের উপরে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই এত ভালো ফলের পর যদি দলের কেউ মুখ্যমন্ত্রী পদে না বসেন, তাহলে কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে।” ভোটের ফল সামনে আসার পরে শিণ্ডে একবারও মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেননি। তবে, তাল কেটেছেন অজিত পাওয়ারের স্ত্রী সুনেত্রা পাওয়ার। তাঁর মন্তব্য, “বারামতীর মানুষ চায় অজিত মুখ্যমন্ত্রী হোক, আমিও তাই চাই। এখন দেখা যাক কী হয়।” আবার ফড়নবিশের মা সরিতা তাঁর ছেলেই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে দাবি করেছেন।
তবে বাস্তব পরিস্থিতি যা, তাতে অজিত পওয়ারের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। লড়াই আসলে শিণ্ডে বনাম ফড়ণবিসের। প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে মহাজুটির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কে তা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন খোদ ফড়ণবিসই। তিনি বলেন, ”আমাদের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণার প্রয়োজন নেই। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এখানেই বসে আছেন। মহা বিকাশ আঘাড়ি এখনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা করেনি। কেননা ওরা বিশ্বাসই করে না নির্বাচনের পরে ওদের মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসবে। আমি পওয়ার সাহেবকে চ্যালেঞ্জ করছি নিজেদের মুখ ঘোষণা করতে।” সেই সময় ফড়ণবিস কারও নাম না করলেও তাঁরই পাশে বসে থাকা একনাথ শিণ্ডেকেই যে তিনি ইঙ্গিত করছেন তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। আসলে তখনও বিজেপির ধারণা ছিল না, ভোটের ফলাফল গেরুয়া শিবিরের পক্ষে কতটা যেতে পারে। কিন্তু শনিবার সকালে গণনা শুরু হতেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। সরকার গড়তে হলে অজিত পওয়ার কিংবা একনাথ শিণ্ডে শিবিরের উপরে অতটা নির্ভর করতে হচ্ছে না বিজেপির। ফলে শিণ্ডে কিংবা অজিত, নয় মসনদে ফিরতে পারেন ফড়ণবিসই। এই সম্ভাবনা ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। বিজেপি সূত্রের দাবিও সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।