সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাগাতার বিক্ষোভের জেরে নতিস্বীকার! আরাবল্লীতে আর নতুন করে খননের ইজারা দেওয়া যাবে না। বুধবার বড় নির্দেশ দিল কেন্দ্র। এদিন কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক সংশ্লিষ্ট সমস্ত রাজ্যকে আরাবল্লীতে নতুন করে খননের ইজারা প্রদানের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার নির্দেশ দিয়েছে। আরাবল্লীকে রক্ষা করতে এবং সেখানে অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিত খননকাজ দমন করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
নির্দেশিকায় কেন্দ্র ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ফরেস্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (আইসিএফআরই)-কে আরাবল্লী সংলগ্ন এমন এলাকা চিহ্নিতকরণের নির্দেশ দিয়েছে, যেখানে খননকাজ নিষিদ্ধ করা উচিত। এই অনুশীলনটি পরিবেশগত, ভূতাত্ত্বিক এবং ভূদৃশ্য-স্তরের বিবেচনার ভিত্তিতে করা হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে, আইসিএফআরই-কে সমগ্র আরাবল্লী অঞ্চলের জন্য একটি বিস্তৃত, বিজ্ঞান-ভিত্তিক খনির ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (এমপিএসএম) প্রস্তুত করার দায়িত্ব দিয়েছে মোদি সরকার। গোটা প্রক্রিয়ায় পরিবেশের উপর প্রভাব, পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকাগুলির চিহ্নিতকরণ, পুনরুদ্ধার এবং পুনর্বাসনের রূপরেখা প্রস্তুত করা হবে। সবশেষে খসড়াটি জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানা গিয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ, বর্তমানে চলতে থাকা খননকাজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিতে পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়টিকে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি, মেনে চলতে হবে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ। একইসঙ্গে চলমান খননকার্যগুলি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করারও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
অভিযোগ উঠছে, শিল্পপতি বন্ধুদের পকেট ভরাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ফুসফুস প্রাচীন আরাবল্লী পর্বতমালা ধ্বংসের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে মোদি সরকার। সেই কারণেই কয়লা ও নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত পাথরের অভূত ভাণ্ডার আরাবল্লীতে খননকার্য চালানোর আইনি পথ সুগম করা হয়েছে। বিতর্ক চরম আকার নিতেই বুধবার আরাবল্লীতে নতুন করে খননের ইজারা দেওয়া বন্ধের নির্দেশ নিল কেন্দ্র।
ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে আরাবল্লীর গুরুত্ব অপরিসীম। হরিয়ানা থেকে শুরু করে রাজস্থান, গুজরাট ও দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতমালা জীববৈচিত্র তো বটেই এইসব অঞ্চলের জলের প্রধান উৎস। এখান থেকেই উৎপত্তি চম্বল, সবরমতী ও লুনি মতো নদী। তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রে গুরুতর প্রভাব পড়বে। রাজস্থানের থর মরুভূমির বিস্তৃতি আটকায় আরাবল্লী। এই পর্বতমালা না থাকলে দিল্লিও মরুভূমির কবলে চলে যেত। ফলে পরিবেশকর্মীদের দাবি, আরাবল্লী যদি খনি, রিয়েল এস্টেটের মতো কর্পোরেটদের হাতে পড়ে তবে আরাবল্লি থেকে পাওয়া নিরাপত্তার ৯০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাবে। ভয়ংকর দূষণ তো বটেই সর্বনাশ হবে জীববৈচিত্রের। ভূগর্ভস্থ জলের রিসাইকেল কমে আসবে। জলসংকট চরম আকার নেবে।
