সোমনাথ রায়, উদয়পুর: মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে আমজনতার। গত কয়েক সপ্তাহে জ্বালানির দাম সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম হাজার টাকা অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে ডলারের নিরিখে টাকার পতন হয়েছে রেকর্ড হারে। ধস নেমেছে শেয়ার বাজারেও। দেশের অর্থনীতির এই খারাপ পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠছে ধর্ম-জাত, মন্দির-মসজিদ। এবার রাজনীতির এই চলতি অভিমুখ বদলাতে চায় কংগ্রেস (Congress)। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের তিন দিনের ‘চিন্তন শিবিরে’ সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেশের অর্থনীতির ভেঙে পড়া হালকেই এবার ফোকাস করবে দল। এই লাইনেই চেপে ধরা হবে দিল্লির বিজেপি (BJP) সরকারকে। সেই ইঙ্গিত দিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম (P Chidambaram)। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিকে এতদিন উত্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও স্বীকার করেছে রাহুল-সোনিয়ার দল।
শনিবার উদয়পুরের চিন্তন শিবিরের দ্বিতীয় দিনে দলের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে করেন চিদম্বরম। সেখানে তিনি মেনে নেন, মোদি সরকারের হাজারও ব্যর্থতার পরেও মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে দল। এইসঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা। তাঁর মতে দেশের অর্থনীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা রীতিমতো উদ্বেগের।
[আরও পড়ুন: ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, নাম ঘোষণার পরই প্রকাশ্যে গোষ্ঠীকোন্দল]
সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা বলেন, গত আট বছর ধরেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধি শ্লথ। অন্যদিকে কেন্দ্রের উদাসীনতায় মহামারী পরবর্তী সময়েও অর্থনীতিতে গতি আসেনি। বরং পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে আর্থিক সম্পর্কের ব্যাপক পর্যালোচনার প্রয়োজন৷ চিদম্বরম মনে করেন, ২০১৭ সালে মোদি সরকারের আনা জিএসটি ছিল একটি অতি দুর্বল আইন। যা এখন সকলের কাছেই স্পষ্ট।
এদিন অতীত ঘেঁটে কংগ্রেস নেতা বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯১ সালে উদারীকরণের মাধ্যমে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। যার ফলে দেশে প্রভুত সম্পদ সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন উদ্যোগের জন্য ইতিবাচক আবহ তৈরি হয়েছিল। একটি বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয়েছিল। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ চাকরি তৈরি হয়। রপ্তানি বাণিজ্য সুবিধাজনক অবস্থা অর্জন করেছিল ভারত। ১০ বছরের সময়কালের মধ্যে ২৭ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছিল।
[আরও পড়ুন: রান্নায় ‘নুন বেশি’, মারধর করে স্ত্রীর মাথা কামিয়ে দিল স্বামী!]
কংগ্রেস নেতার মতে, উলটো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মোদি সরকারের আমলে। নয়া সরকারের অর্থনৈতিক নীতি সামাজিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে। জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্রের শিকার। তথ্য দিয়ে চিদাম্বরম বলেন, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এখন ১০১। পুষ্টির ঘাটতিতে ভুগছে দেশের বিরাট অংশের শিশু ও নারী। চিদাম্বরমের এদিনের কথায় স্পষ্ট, কংগ্রেস চাইছে আগামী দিনে দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ইস্যু। বিজেপি ধুয়ো দেওয়া জাত-র্ধম, মন্দির-মসজিদ দূরে সরতে চাইছে দল।