সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ডেরা সাচা সওদা সংগঠনের প্রধান ও স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় বিশেষ সিবিআই আদালত আজ রায় দান করতে পারে। ওই মামলার রায় দানকে ঘিরে থমথমে চণ্ডীগড়। পুলিশের অনুমান, অভিযুক্তর প্রায় দেড় লক্ষ সমর্থক ধারাল অস্ত্রশস্ত্র-সহ পাঁচকুলার বিভিন্ন সরকারি আবাসনের ক্যাম্পাস ও ভবনে জড়ো হয়েছে। এই হাই প্রোফাইল মামলার রায় ঘোষণা হলে পাঞ্জাব ও চণ্ডীগড়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই এলাকায় নামানো হয়েছে সেনা, অধাসেনা। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী।
[প্র্যাকটিস করতেন কপিল দেব, কেন সেই স্টেডিয়াম জেলে পরিণত হচ্ছে?]
অভিযুক্ত ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা কেন্দ্রের কাছে কার্যত অ্যাসিড টেস্ট। শুক্রবার থেকেই চণ্ডীগড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা সীমিত করা হয়েছে। পাঁচকুলায় ২৫ কলাম সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, নামানো হয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি অধাসেনা। ৭০০-রও বেশি সরকারি বাস চলবে না আজ, বাতিল হয়েছে অন্তত ২৫টি ট্রেন। ডেরার সদর দপ্তর সিরসাতেও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত স্কুল, কলেজ ও সরকারি দপ্তর। কোনও অবস্থাতেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনিত ঘটতে দেওয়া যাবে না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোহর লাল খাট্টার সরকার।
সবমিলিয়ে চণ্ডীগড় এই মুহূর্তে যেন বারুদের স্তুপের উপর রয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ডেরা প্রধান গুরমিত এক ভিডিও বার্তায় তাঁর সমর্থকদের নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। তিনি বলেছেন, ‘আইনকে সকলের সম্মান করা উচিত।’ এদিনের রায় দানকে ঘিরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও আংশিক বনধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিরসাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আংশিক কারফিউ জারি করা হয়েছে সংলগ্ন তিনটি গ্রামেও। হরিয়ানা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার প্রভজ্যোত সিং জানিয়েছেন, পুলিশ ও অধাসেনা এলাকায় ফ্ল্যাগ মার্চ করছে। কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেনাকে ডাকা হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দারা গ্রামে গ্রামে রেইকি চালাচ্ছেন। কোথাও অস্ত্র লুকিয়ে রাখার খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে। চণ্ডীগড়ের সেক্টর ১৬ ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী জেলে পরিণত করা হয়েছে। কোনও ডেরা সদস্য অশান্তি তৈরির চেষ্টা করলেই তাকে ওই জেলে ঢোকানো হবে।
২০০২-তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এক মহিলা ডেরা প্রধান গুরমিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন। চিঠিতে দাবি করা হয়, ওই ধর্মগুরু তাঁর আশ্রমের মহিলাদের সঙ্গে উদ্দাম যৌনতা চালান। হিন্দিতে লেখা তিন পাতার সেই চিঠি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল সেই সময়। ওই চিঠি যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে, সেখান থেকে সিবিআই ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশে। কিন্তু কোনওপক্ষই সেভাবে উদ্যোগী হয়নি। অবশেষে হাই কোর্টই এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তকারী অফিসারদের আশ্রমে ঢুকতেই দেয়নি ডেরা সদস্যরা। ২০০২-এর ২৪ সেপ্টেম্বর এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর চণ্ডীগড় সিবিআই ডেরা প্রধান গুরমিতের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা রুজু করে। কিন্তু এই মামলার গতি বারবার রুদ্ধ হয়েছে। অবশেষে ২০০৭-এ দুই নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করে সিবিআই। ২০০৭-এ বিশেষ সিবিআই আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়। মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচকুলাতে। আজ সেখানেই হবে রায় দান।
স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিমের বিরুদ্ধে অবৈধ যৌনাচারের অভিযোগ অবশ্য কোনওদিনই মানতে চাননি তাঁর ভক্তরা। প্রায় ৪০০ জন ভক্তের অন্ডকোষ কেটে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে। দু’টি বলিউড সিনেমায় অভিনয় করেছেন গুরমিত। নিজেই পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন। শুধু তাই নয়, গান গেয়েছেন, কোরিওগ্রাফি করেছেন এমনকী চিত্রনাট্যও নিজে লিখেছেন বলে দাবি করেন এই ধর্মগুরু। তাঁর বিরুদ্ধে আশ্রমের ৪০-৪৫ জন যুবতীর সঙ্গে নিয়মিত যৌনাচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মূল অভিযোগকারিনীকে নিজের বিশেষ ‘গুহা’য় ডেকে নিয়ে গিয়ে টিভি দেখতে দেখতে পাশে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে বিতর্কিত ওই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে।
The post ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, থমথমে চণ্ডীগড়ে মোতায়েন সেনা ও পুলিশ appeared first on Sangbad Pratidin.