সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্কুলের ফি-বৃদ্ধির চাপে সন্তানের নতুন ক্লাসে ওঠা মানেই আতঙ্ক অভিভাবকদের। নতুন শিক্ষবর্ষ শুরু হতেই স্কুলের ফি দেখে চক্ষু চড়কগাছ হচ্ছে তাঁদের। দেশের সব রাজ্যেই বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলের ফি গত তিন বছরের মধ্যে ৫০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে একটি রিপোর্টে।
লোকালসার্কলস নামে একটি কমিউনিটির সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৩১ হাজার অভিভাবক। ভারতের ৩০৯ জেলায় সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার সেই রিপোর্টেই উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের সন্তানদের স্কুল গত তিন বছরে ৫০-৮০ শতাংশ ফি বৃদ্ধি করেছে। ৮ শতাংশের দাবি, সন্তানদের স্কুলের বেতন গত তিন বছরে বেড়েছে ৩০-৫০ শতাংশ। ৯৩ শতাংশ অভিভাবক বেসরকারি স্কুলের এই ফি-দৌরাত্ম্য নিয়ে রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার স্কুলগুলিকে ফি বাড়ানো নিয়ে কড়া নির্দেশ ও সঠিক নিয়মাবলি মানার নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি এমন হয় না। উল্লেখ্য, ভারতের মধ্যে শুধুমাত্র তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে স্কুলের ফি বাড়ানো নিয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা জারি করা আছে। সমীক্ষায় শুধুমাত্র সাত শতাংশ অভিভাবক ফি বৃদ্ধি নিয়ে তাদের রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা ও পদক্ষেপে খুশি বলে জানান।
বেঙ্গালুরুতে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে স্কুলগুলিতে ১০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফি বেড়েছে। হায়দরাবাদে বেসরকারি স্কুলের প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিভাগে ভর্তির সময় স্কুলগুলি গত শিক্ষাবর্ষের চেয়ে দ্বিগুণ চাইছে। প্রায় সব রাজ্যেই সরকারি স্কুলে পড়াশোনার মান আগের চেয়ে কমেছে। পাশাপাশি, ছেলেমেয়েকে ইংরেজিতে দক্ষ করার লক্ষ্যে বেশিরভাগ বাবা-মাই বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের বেসরকারি স্কুলে পড়াতে চান। সেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চলছে ফি বৃদ্ধি নিয়ে অরাজকতা। তার মধ্যে যে সব স্কুলে আন্তর্জাতিক পাঠ্যসূচি পড়ানো হয় তারা প্রিমিয়াম ফি নিচ্ছে বলে অভিযোগ। ধনীরাই একমাত্র স্বচ্ছন্দে সেই ফি দিতে পারছেন। মধ্যবিত্ত ও আর্থিক দুর্বলরা কখনও কখনও ধার নিয়ে সন্তানের স্কুলের ফি মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
পাঁচ বছর আগে করোনার ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি দুর্বল হতেই বেশিরভাগ মানুষের রোজগার কমেছিল। বেসরকারি চাকুরিজীবীদের অনেকেই অর্ধেক বেতনে চাকরি করছিলেন। সেই পরিস্থিতি সামলে ওঠার আগেই সন্তানের স্কুলের দৌলতে সেভিংস পর্যন্ত ভাঙতে হয়েছে বহু নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তকে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-'১৯ সালে ২৬.০২ কোটি ছেলেমেয়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩-'২৪-এর রিপোর্ট, স্কুলে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় এক কোটি কমে গিয়েছে। এর পরই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতিই এর জন্য দায়ী? না কি এই বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ জরুরি?
