সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: শশী থারুর (Shashi Tharoor)। দিন কয়েক আগে পর্যন্ত তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিশ্চিত মনে হচ্ছিল। যে কোনও ইস্যুতেই তিনি নিজের দল কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলে মোদি সরকারের প্রশংসা করছিলেন। সেই থারুর এবার কেমন যেন সুর বদলে ফেললেন। কেন্দ্রের প্রস্তাবিত 'জিরামজি' বিল নিয়ে মোদি সরকারকে প্রবল সমালোচনায় বিদ্ধ করলেন তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর সাফ কথা, "এভাবে নাম বদল অপ্রয়োজনীয়। গান্ধীকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না।'
মঙ্গলবার সংসদে ১০০ দিনের কাজের মেয়াদবৃদ্ধি এবং প্রকল্পের নামবদল সংক্রান্ত বিলটি লোকসভায় পেশ করেছেন কেন্দ্রের কৃষি এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। মনরেগা বা MGNREGA (Mahatma Gandhi National Rural Employment Guarantee Act)-এর নাম পরিবর্তন করে বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) বা VB-G RAM-G (সংক্ষেপে জি রাম জি) করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। প্রস্তাবিত বিলে ১০০ দিনের কাজের পরিমাণ ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যগুলির উপর চাপ বাড়ছে। তাছাড়া আগে রাজ্যের চাহিদা অনুযায়ী, এই প্রকল্পে বরাদ্দ করা হত। এবার থেকে কেন্দ্র ঠিক করবে কোন রাজ্যে কত বরাদ্দ করা হবে। ফলে সাধারণ শ্রমিকরা ১০০ দিনের কাজ পাবেনই, তেমন কোনও নিশ্চয়তা থাকছে না বলেই দাবি বিরোধীদের। আগে এই বিলে কাজের নিশ্চয়তা ছিল।
শিবরাজ বিল পেশ করার পরেই লোকসভায় শোরগোল শুরু হয়। হাতে গান্ধীর ছবি নিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদদের একাংশ। সংসদে বিলের বিরোধিতায় সরব হন তারা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সৌগত রায়, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীদের মতো এই বিলের বিরোধিতায় সরব হন শশী থারুরও। তাঁর বক্তব্য, "১০০ দিনের প্রকল্প থেকে গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া হলে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই সাধিত হবে না। এটা শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটা একই সঙ্গে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের দর্শনগত বুনিয়াদে আঘাত।" শশীর সাফ কথা, "এভাবে গান্ধীকে মুছে ফেলা যায় না। এভাবে গান্ধীজিকে অসম্মান করার কোনও অধিকার নেই।"
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দীর্ঘদিন বাদে থারুর পার্টিলাইন মেনে কংগ্রেস সাংসদের মতো কথা বলছেন। কিন্তু এই বদল কেন? রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সদ্যই কেরলের স্থানীয় নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে। তাতে ঐতিহাসিক সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। দলের সেই সাফল্যের পরই সম্ভবত থারুর নিজের অবস্থান নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু করেছেন।
