সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম বাজেটের শিরোনাম কী? এক কথায় এনডিএ-র দুই মূল শরিক দলকে সন্তুষ্ট করা। বাজেটে নির্মলা সীতারমণ কার্যত দুহাতে সাজিয়ে দিয়েছেন বিহারকে। দরাজহস্তে দান করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশকেও। অথচ বাংলার ঝুলি কার্যত শূন্য। প্রতিটি ছত্রে বাংলার প্রতি বঞ্চনার ছবি স্পষ্ট। শুধু বাংলা নয়, অন্য বিরোধী শাসিত রাজ্যের ঝুলিও কার্যত শূন্য।
লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কার পর কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার এখন পরনির্ভর। ফলে শরিকি বাধ্যতা ছিলই। বিজেপির দুই শরিক চন্দ্রবাবু নায়ডু (Chandrababu Naidu) এবং নীতীশ কুমারের মূল দাবিই ছিল অন্ধ্র এবং বিহারের জন্য বিশেষ প্যাকেজ। সেকারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও বিশেষ দাবিদাওয়া জানাননি শরিকরা। চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং নীতীশ কুমারের মূল দাবিই ছিল আর্থিক প্যাকেজ। সেটা একপ্রকার বাধ্য হয়েই মেনে নিলেন নির্মলা। অন্যদিকে বাংলার সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের 'বিবাদ' সুবিদিত। সেক্ষেত্রে বাংলার জন্য বাড়তি বরাদ্দের কোনও বাধ্যতাও ছিল না কেন্দ্রের।
[আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বাজেটে কীসের দাম বাড়ল? দামি হল কোন পণ্য?]
বাজেটে(Union Budget 2024) অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, অন্ধ্রের নতুন রাজধানী অমরাবতীর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাড়তি ১৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, আগামী বছরগুলিতে এই ধরনের আরও একাধিক আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্মলা। অন্ধ্রের গ্রামোন্নয়নে ২.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিহারের ক্ষেত্রে নির্মলা আরও উদারহস্ত। বিহারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে মোট ২৬ হাজার কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির করিডোর তৈরি হবে কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের ধাঁচে। বুদ্ধগয়ার উন্নয়নে বাড়তি বরাদ্দ করা হবে। নালন্দাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরার জন্য প্যাকেজ দেবে মোদি সরকার। মজার কথা হল, শরিকদের দখলে থাকা দুই রাজ্যের জন্য নির্মলা যখন এত বড় বড় সব প্রকল্পের নাম ঘোষণা করছেন, তখনও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার লক্ষাধিক কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে বকেয়া পড়ে রয়েছে বলে দাবি করছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারের বাজেটে বন্যা কবলিত একাধিক রাজ্যের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু বিহারের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ করা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, অসমের জন্যও। অথচ ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে টু শব্দটি শোনা গেল না বাজেটে।
[আরও পড়ুন: অন্ধ্রের জন্য বিশেষ প্যাকেজ, বিহারের জন্য কল্পতরু, শরিকদের ঝুলি ভরল নির্মলার বাজেটে]
সার্বিকভাবে প্রাপ্তি সাকুল্যে একটি শিল্প করিডর। অমৃতসর-কলকাতা শিল্প করিডরের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ব ভারতের সার্বিক উন্নয়নে যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তাতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে কলকাতায়। ব্যস ওইটুকুই। স্বাভাবিকভাবেই বাংলার বঞ্চনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "বিহার বা অন্ধ্রের জন্য বরাদ্দে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু যে বাংলা স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই গোটা দেশকে পথ দেখায়, সেই বাংলাকে এভাবে বঞ্চিত করা হল। বাংলার মানুষ আবার জবাব দেবে।"