মনিশংকর চৌধুরি: অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন কংগ্রেস-সহ ভারতের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক নেতারা। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন টানা ১৫ বছর ধরে অসমের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা এই অজাতশত্রু মানুষটি। তাই কয়েকদিন আগে তাঁকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থাতেই সোমবার বিকেল পাঁচটা ৩০ মিনিট নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে চারিদিকে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও একদা সহযোদ্ধা থাকা হিমন্ত বিশ্বশর্মা, সবাই শোকপ্রকাশ করে তরুণ গগৈয়ের পরিবারকে আন্তরিক সমবেদনা জানান। কংগ্রেসে নেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। বর্ষীয়ান এই নেতার প্রয়াণে ভারতীয় রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হল বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী টুইট করেন, ‘শ্রী তরুণ গগৈ জি একজন জনপ্রিয় নেতা ও বর্ষীয়ান প্রশাসক ছিলেন। অসম ও কেন্দ্রের রাজনীতিতে তাঁর অনেক বছরের অভিজ্ঞতা। তাঁর প্রয়াণে আমি শোকস্তব্ধ। শোকের এই মুহূর্তে তাঁর পরিবারের সদস্য ও অনুগামীদের আমি গভীর সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি।’
[আরও পড়ুন: প্রয়াত অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে ]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে তরুণ গগৈ (Tarun Gogoi)-এর মৃত্যু হয়। কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতাল থেকে তাঁর নশ্বর মৃতদেহ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গুয়াহাটির বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ সেখানে প্রাক্তন এই কংগ্রেস নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাবেন পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ মানুষরা। আগামিকাল সকালে তাঁর মৃতদেহটি নিয়ে যাওয়া হবে শংকরদেব কলাক্ষেত্রে। সেখানে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অসংখ্য গুণগ্রাহী তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন। পরে সেখানে থেকে কালাপাহাড় এলাকায় অবস্থিত গুয়াহাটি মহাশ্মশানে নিয়ে গিয়ে তাঁর মরদেহের শেষকৃত্য করা হবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কংগ্রেসের হয়ে জোরহাট পুরসভার ভোটে জয়ী হয়ে প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন তরুণ গগৈ। আস্তে আস্তে তাঁর দক্ষতা রাজ্য তথা দেশের কংগ্রেস নেতৃত্বের চোখে পড়ে যায়। জহুরির মতো তাঁকে তুলে আনেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তরুণ গগৈ-কে। ২০০১ সালে অসম গণ পরিষদের প্রফুল্ল কুমার মোহন্তকে সরিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শাসন করে অসমের রূপ বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর সময়ে হিংসার ঘটনাও অনেক কম ঘটেছিল। সেভাবে ওঠেনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও। তাঁর ঘনিষ্ঠদের কথায়, উনি ঝুঁকি নিতে জানতে আর জয়ীও হতেন। অনেক প্রলোভন এলেও কোনওদিন কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করেননি। তাই যতদিন অসম তথা উত্তর-পূর্বের কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে আলোচনা হবে সবার উপরে জ্বলজ্বল করবে তরুণ গগৈ-এর নাম। পাশাপাশি পিভি নরসিংমা রাওয়ের আমলে তিনি যেভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে ছিলেন। অসম-সহ গোটা উত্তর-পূর্বের জন্য যেভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে এসেছিলেন। আজও তার সুফল ভোগ করছেন মানুষ।