সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার করলে ক্ষমতা দখল করে তালিবান। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ময়দানে নামে চিন। আফগানভূমের খনিজ সম্পদ আহরণে উদ্যোগী হয় কমিউনিস্ট দেশটি। শুধু তাই নয়, প্রথম দেশ হিসাবে তালিবান সরকারকে ‘কূটনৈতিক স্বীকৃতি'ও দেয় বেজিং। ফলে ক্রমেই সেদেশে বাড়ছে চিনের প্রভাব! এই পরিস্থিতিতে কাবুলে বিশেষ প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে ভারত। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, বুধবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছন দিল্লির প্রতিনিধিরা। এই দলে ছিলেন বিদেশমন্ত্রকের যুগ্মসচিব জেপি সিং। এই মুহূর্তে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরানের মতো দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক বিষয়টি সামলানোর দায়িত্ব। এদিন জেপি সিং বৈঠক করেন তালিবানের কার্যনির্বাহী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদের সঙ্গে। বৈঠকের পর তালিবানি মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানায়, "ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা হয়েছে। মানবিক সহায়তা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে এই বৈঠকে। আগামী দিনে দুদেশের মধ্যে আলোচনা আরও বাড়াতে দুপক্ষই সহমত হয়েছে।"
জানা গিয়েছে, এই বৈঠকের পর তালিবানের কার্যনির্বাহী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াকুব প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি দিল্লির আফগান দূতাবাসের জন্য তালিবানের বিদেশমন্ত্রক থেকে কূটনীতিক নিয়োগের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। জেপি সিংকে আশ্বাস দিয়ে ইয়াকুব জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ভারতের বিরুদ্ধে কেউ আফগানিস্তানকে ব্যবহার করতে পারবে না। তালিবানদের সঙ্গে এই বৈঠক সদর্থক হয়েছে বলে জানান দিল্লির প্রতিনিধিরাও। প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বর মাসে দিল্লিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আফগান দূতাবাস। কারণ হিসাবে বিবৃতিতে তালিবানের লাগাতার চাপ ও ভারতের অসহযোগিতাকে উল্লেখ করা হয়েছিল দূতাবাসের তরফে। মনে করা হয়েছিল, দিল্লির সঙ্গে কাবুলের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কার্যত শেষ। কিন্তু দুদেশের সম্পর্কের জটিলতায় ইতি টানতে উদ্যোগী হয় তালিবানরা। ফের দূতাবাস খোলা কথা জানানো হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি দিল্লি। এই মুহূর্তে বিশ্ব মানচিত্রে ভারতের গুরুত্ব কতখানি তা ভালোই জানে তালিবানরা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় ও বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে ভারতের মতামতকে গুরুত্ব দেয় বিভিন্ন দেশ। তাই বন্ধুত্বের হাত বাড়িতে ভারতের থেকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি চায় তারা। কারণ রাশিয়া ও পাকিস্তান, চিন কাবুলে তাদের দূতাবাস খুলে রাখলেও ২০২১ সালে আফগানভূমে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর অন্য কোনও দেশ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মহিলাদের অধিকার হনন করার জন্য মোল্লা আখুন্দজাদার সরকার সমালোচিত হয়েছে। তাই ভারতের সমর্থন তালিবানদের কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, কূটনৈতিক দিক বা নিরাপত্তা দিক দিয়ে আফগানিস্তানও ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে চিন ও রাশিয়ার হাতে তামাক খাচ্ছে তালিবান বলেও একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে। ফলে তালিবানকে চিন স্বীকৃতি দেওয়ায় উদ্বিগ্ন ভারত। আফগানিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে দিল্লির। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সাতটি খনি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানিয়েছিল তালিবান শাসকরা। যে যে সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাবুলের চুক্তি হয়েছে সেগুলোকে স্থানীয় কোম্পানি বলে দাবি করলেও কোম্পানিগুলোর শিকর রয়েছে চিনে। তাই ব্যবসার কথা মাথায় রেখে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় দিল্লি। এছাড়াও রয়েছে ইরানের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে অবস্থিত চাবাহার বন্দর। যা ইরান, আফগানিস্তান ও মধ্য এশীয় দেশগুলোকে বাণিজ্য পরিবহণে যুক্ত করেছে। সম্প্রতি তেহরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর নিয়ে ১০ বছরের চুক্তি করে দিল্লি। কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হলে এই চাবাহার বন্দর দিয়ে ভারতের বাণিজ্যের পথ আরও সুগম হবে।