শুভঙ্কর বসু: আপ পদাতিক এক্সপ্রেস ধরে শিলিগুড়ি যাচ্ছেন বীরেনবাবু। জরুরি কাজ। ট্রেন ছাড়ার আধ ঘণ্টা আগে প্ল্যাটফর্মে হাজির। কিন্তু ট্রেন কই! ভিড় ঠেলে কোনওমতে এনকোয়ারির ঘুলঘুলিতে মুখটা ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দাদা, আপ পদাতিকের খবর কী?’ উত্তর এল, “বলা যাচ্ছে না। পাঁচ-ছ’ ঘণ্টা লেট আছে।”
[প্রয়োজন নেই কাগজের নথির, সরকারি কাজকর্ম এবার ডিজিটাল ডকুমেন্টেই]
এদিকে পরদিন সকালের মধ্যে শিলিগুড়ি পৌঁছতেই হবে। কিন্তু উপায় নেই। অগত্যা যাত্রা পণ্ড। উপরন্তু কড়কড়ে কয়েকশো টাকা গচ্চা। এক্ষেত্রে তাঁর নিজের যে কোনও দোষ ছিল না তার একটা প্রমাণ অন্তত রাখার জন্য বীরেন হাঁটা দিলেন স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের দিকে। একটা লিখিত অভিযোগ করতে। এবং স্টেশনের ম্যানেজারের বক্তব্য শুনে তিনি তো হাঁ! কেন? মারমুখী যাত্রীর অভিযোগ শুনে পাল্টা গলা চড়ানো দূরের কথা, স্টেশন ম্যানেজার বরং হাসিমুখে আশ্বাস দিলেন, “আপনার টাকা মার যাবে কেন? ট্রেন লেটের জন্য যাত্রা বাতিল হলে টিকিটের দাম বিলক্ষণ ফেরত পাবেন।” এমনও হয় নাকি! হ্যাঁ হয়। টার্মিনাল স্টেশন থেকে দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়তে তিন ঘণ্টা বা তার বেশি দেরি হওয়ার কারণে কেউ যদি সংরক্ষিত আসনের যাত্রা বাতিল করতে চান, তাহলে টিকিটের পুরো দাম তিনি ফেরত পাবেন। কিছুদিন আগে চালু হওয়া রেলমন্ত্রকের নতুন নিয়ম অন্তত তাই বলছে। বীরেনবাবুর মতো অসংখ্য লোক ব্যাপারটা জানেনই না। সম্প্রতি লোকসভায় প্রশ্নোত্তর কালে এই নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছে। লোকসভায় তথ্য পেশ করে এটি জানিয়েছে খোদ রেলমন্ত্রকই। তাতেই বিষয়টি এসেছে প্রচারের আলোয়। বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট যাত্রী রেলের যেকোনও রিজার্ভেশন কাউন্টারে গিয়ে টিকিট জমা করলেই টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, নিয়মটি প্রযোজ্য শুধুমাত্র টার্মিনাল স্টেশনের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ যেখান থেকে ট্রেনটি ছাড়ছে। মাঝপথে লেট হলে ক্ষতিপূরণের কোনও সংস্থান এখনও নেই। যদিও মাঝপথে ট্রেন দেরির কারণে কোনও লিঙ্কিং ট্রেন মিস হলে পরবর্তী ট্রেনের টিকিট কাটার সময় ৫০ শতাংশ ছাড় মেলে। কিন্তু তা শুধু অনলাইন টিকিটের জন্যই। সেক্ষত্রে লিঙ্কিং ট্রেন ছাড়ার আগেই অনলাইনে টিকিটটি বাতিল করতে হবে। বীরেনবাবু স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। আমযাত্রীর অবশ্য অনুযোগ, মাঝপথে দেরিতেই বেশি ভোগান্তি হয়। তার পূর্ণ সুরাহা কবে হবে?