সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার (Indonesia) যাত্রীবাহী বিমানের মর্মান্তিক পরিণতি নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। পাশাপাশি কেন ভেঙে পড়ল বিমান, তার তদন্ত করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের আশঙ্কা, সমুদ্রে আছড়ে পড়ার পরই দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল শ্রীবিজয়া এয়ার সংস্থার বিমান, ‘ফ্লাইট ১৮২’।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নুকায়হো উতোমো নামে এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা এখনও সঠিকভাবে বলতে পারছি না। তবে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ মূলত কাছাকাছি জায়গা থেকেই কিন্তু পাওয়া গিয়েছে। তাই এমনটা হতেই পারে জলে আছড়ে পড়ার পরই সেটি দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে।’’
[আরও পড়ুন: ২৬/১১ হামলায় লাকভিকে দোষী সাব্যস্ত করা হোক, পাকিস্তানের উপর চাপ জারি আমেরিকার]
এর আগে রবিবার বোয়িং ৭৩৭–৫০০ বিমানটির দুটো ব্ল্যাক বক্স–সহ আরও কিছু অংশ জাভা সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেন ডুবুরিরা। জলের ৭৫ ফিট নিচে পাওয়া গিয়েছে ওই ধ্বংসাবশেষ। ইন্দোনেশিয়ান বিমান সংস্থা শ্রীবিজয়া এয়ারের ওই বিমানে যাত্রী এবং কর্মী—সহ ৬২ জন ছিলেন। “ডুবুরির টিম থেকে খবর পাওয়া গিয়েছে যে, জলের তলায় সব কিছু বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। যার জন্য বিমানের কিছু অংশ উদ্ধার করা গিয়েছে। আমরা নিশ্চিত, ওই জায়গাতেই বিমান ভেঙে পড়েছিল,” এক বিবৃতিতে বলেছেন এয়ার চিফ মার্শাল হাদি জাজান্তো। তিনি আরও জানান, ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে বিমানের দেহের টুকরো এবং বিমান রেজিস্ট্রেশন অংশ। তার আগে সমুদ্রের উপর থেকে দেহের অংশ, ছেঁড়া জামাকাপড় এবং ধাতুর টুকরো খুঁজে পেয়েছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। নিখোঁজ বিমানটি খুঁজে পেতে সাহায্য করে নৌবাহিনীর জাহাজের সোনার প্রযুক্তি। শনিবার দুপুরে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার আগে যে জায়গা থেকে শেষ তার সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছিল, সেখান থেকে একটি সিগন্যাল পায় নৌবাহিনীর জাহাজ।
কেন বিমানটি ভেঙে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার পরে কারও বেঁচে থাকার চিহ্নও পাওয়া যায়নি। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। “যদি কেউ বেঁচে থাকেন, তাঁদের খুঁজে বের করার সবরকম চেষ্টা চলছে। সবাই প্রার্থনা করছি, তাঁদের যেন খুঁজে পাওয়া যায়,” বলেছেন তিনি। উইদোদো জানিয়েছেন, জাতীয় পরিবহণ নিরাপত্তা কমিটিকে ব্যাপারটার তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটে নাগাদ জাকার্তা উপকূলের উত্তরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন সেখানকার জেলেরা। সলিহিন নামক এক জেলে সংবাদসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, “প্রচণ্ড বৃষ্টির জন্য ভাল করে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বিস্ফোরণের আওয়াজের পরে বিরাট জলোচ্ছ্বাস দেখলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম সুনামি বা বোমা বিস্ফোরণ। কিন্তু তারপর আমাদের নৌকার আশেপাশে বিমানের টুকরো আর জ্বালানি দেখতে পেলাম।”
[আরও পড়ুন: ‘অনুপ্রবেশ নয়, অন্ধকারে পথ ভুলে ভারতে ঢুকেছে চিনা সৈনিক’, দ্রুত মুক্তির দাবিতে সরব লালফৌজ]
ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রী বুদি কারয়া সুমাদি জানিয়েছেন, এক ঘণ্টা দেরির পরে শনিবার দুপুর ২.৩৬—এ টেক—অফ করেছিল এসজে ১৮২। চার মিনিট পরেই বিমানটি নিখোঁজ হয়ে যায়। শ্রীবিজয়া এয়ারের প্রেসিডেন্ট ডিরেক্টর জেফারসন আরউইন জাউয়েনা জানিয়েছেন, ছাব্বিশ বছর পুরনো ওই বোয়িং ৭৩৭—৫০০ এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থা ব্যবহার করেছে। বিমানটি এখনও উড়ানযোগ্য ছিল। তিনি আরও জানান, খারাপ আবহাওয়ার জন্য বিমানটি দেরি করে ছেড়েছিল। যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য নয়।