ভুললে চলবে না, ভারত বর্তমানে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। পরবর্তীতে এর আরও অগ্রগতি হবে। এই পরিস্থিতিতে কোন উপায়ে ভারতীয়রা সৃষ্টি করতে পারেন আদর্শ সম্পদ? গোড়ার কী কী কথা না জানলেই নয়? জানাচ্ছেন ওয়েলথ কোচ সুকুমার মন্ডল
আজকের ভারতবর্ষ পৃথিবীর দ্রুততম অর্থনীতিগুলোর অন্যতম। আসুন এই কথাটি মনে রেখে আমাদের নিজেদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় আলোচনা করি। জুন ২০২৪, বিশ্ব-ব্যাঙ্কের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, আজকের ভারতবর্ষ পৃথিবীর দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই দেশের গড় বাৎসরিক জিডিপি বৃদ্ধি পরবর্তী তিন অর্থবর্ষব্যাপী ৬.৭০ শতাংশ হারে থাকবে।
আমাদের দেশ এখন পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির রাষ্ট্র এবং বর্তমান সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে দেশকে তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির রাষ্ট্র হিসাবে উন্নীত করতে চায়। আর এই পরিবর্তনশীল উন্নয়নে মধ্যবিত্ত ভারতীয়রা নিশ্চিতভাবে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এহেন পরিস্থিতিতে সম্পদ সৃষ্টির অন্যতম উপায় হল, প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি শেয়ারে বিনিয়োগের পরিবর্তে আরও কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং আরও বিজ্ঞানসম্মতভাবে ঝুঁকিকে বৈচিত্র্যের মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের কথা ভাবতে পারি। কারণ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকির মাত্রা পরিবর্তন করিয়ে দক্ষ ফান্ড ম্যানেজারের কুশলী সিদ্ধান্তের ফলে মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় বেশি উদ্বৃত্ত সৃষ্টির মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টি করে চলে।
[আরও পড়ুন: উৎসাহ বাড়ছে ফার্মা স্টক নিয়ে, বিনিয়োগ করতে পারেন আপনিও]
অবশ্যই স্মরণে রাখা দরকার, সম্পদ সৃষ্টিতে বিনিয়োগের মেয়াদ বা সময়কাল সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য এবং দুঃখজনক ঘটনা হল সম্পদ সৃষ্টির এই আকাঙ্ক্ষায় আমরা প্রায়শই ওই গুরুত্বপূর্ণ মেয়াদ বা সময়কাল অতিবাহিত করতে চাই না, যা কি না সম্পদ সৃষ্টির মস্ত বড় অন্তরায়।
প্রসঙ্গত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল– ‘‘বিনিয়োগ কেবলমাত্র অর্থনীতির বিশ্লেষণ নয়...মানুষ অর্থ বিনিয়োগে কেমন আচরণ করে সেটাও অত্যন্ত বিচার্য।’’
একটু অনুধাবন করলে আমরা বুঝি যে, মানুষের যে কোনও আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় তার পূর্ব বশবর্তী ধারণা থেকে। সুতরাং আমাদের এই বশবর্তী ধারণাকে আরও যুক্তিগ্রাহ্য ও বিজ্ঞানসম্মত করার জন্য আমাদের পক্ষপাত বা বায়াস (bias) সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। এবং ওই পক্ষপাতমূলক আচরণ বা বায়াস-কে বিভিন্ন উন্নত অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগ-আচরণে (Investment Behaviour) আরও দক্ষ হতে পারি।
[আরও পড়ুন: রিটার্নের খুঁটিনাটি, ৩ জরুরি বিষয় জেনে নিন]
এখন জানা দরকার, অতিপ্রয়োজনীয় কী কী আচরণের কারণে আমাদের সম্পদ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে :
১. বয়সের সঙ্গে জীবনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অভাব।
২. আবেগ বা বাধ্যবাধকতা দ্বারা সিদ্ধান্ত বহন করা।
৩. বাজারের অস্থিরতা ও তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্যারামিটার সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকা।
৪. আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক পরামর্শের জন্য একজন অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পরামর্শ না নেওয়া।
পরিশেষে বিনিয়োগ বা সম্পদ সৃষ্টিতে মেয়াদ বা সময়কালের ভূমিকা বুঝতে আমরা পৃথিবীর অন্যতম পথ-প্রদর্শক বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের বিনিয়োগ যাত্রা পর্যালোচনা করতে পারি।
তিনি বিনিয়োগ শুরু করেন মাত্র ১১ বছর বয়সে এবং নিট সম্পদের ৯৯ শতাংশ তৈরি হয় তার বয়সের ৫০ বছর পেরোনোর পর। আসুন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ সৃষ্টির এই মহান সন্ধিক্ষণে আমরা নিজেরা আরও উন্নত হওয়ার অঙ্গীকার করি।