মাল্টি অ্যাসেটের ধারণা সম্বন্ধে খোলসা করে বললেন লগ্নি পরামর্শদাতা তথা লক্ষ্মী ফিনান্স ট্রেডার্সের কর্ণধার দিলীপ কুমার দে। কেন এই জাতীয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করবেন? কী ধরনের খুঁটিনাটির দিকে খেয়াল রাখা উচিত হবে? প্রশ্নোত্তরে নীলাঞ্জন দে
প্র. মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডে কেন লগ্নি করা যেতে পারে?
উ. দেখুন, এই শ্রেণির প্রকল্পে ফান্ড ম্যানেজাররা একাধিক অ্যাসেস্ট ক্লাসের সমন্বয় রক্ষা করেন। ইক্যুইটি এবং ডেট তো থাকেই। এই দুই সাবেক ও পুরোনো অ্যাসেটের সঙ্গে যোগ হয় সোনা এবং রূপো। এছাড়াও REIT অথবা রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট থাকতে পারে। কীভাবে এতগুলো অ্যাসেট ক্লাসের বিন্যাস হবে তা ঠিক করেন ফান্ড ম্যানেজার। এই মিশ্রণেই লুকিয়ে আছে পারফর্ম্যান্সের চাবিকাঠি। ভু-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন পরিস্থিতি বুঝে এবং অবশ্যই নির্দিষ্টি কৌশলের ভিত্তিতে, পোর্টফোলিওর চরিত্র সাজিয়ে নেওয়া হয়। প্রয়োজনে ফান্ড ম্যানেজার গোল্ড এবং সিলভারের অংশ কমিয়ে-বাড়িয়ে নিতে পারেন। এই দুটির কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে, কারণ রিটার্ন অনেক ক্ষেত্রে প্রেশাস মেটালসের ভূমিকার উপর নির্ভর করবে। সাধারণ ইনভেস্টরদের বলব, আপনারা মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডের বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝে নিন উপযুক্ত পরামর্শদাতাদের সঙ্গে আলোচনার করে। তার পর নিজের অ্যালোকেশন কেমন হবে তা নির্ধারণ করুন। আমার বিশ্বাস একাধিক অ্যাসেট ক্লাসের সমন্বয় আপনাদের জন্য যথাযথ হবে।
প্র. ভালো ফান্ড বেছে নিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাবেন সাধারণ ইনভেস্টর?
উ. আমার মতে সবাইকার হাতে প্রধানত দুটি অস্ত্র আছে, যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এক, ওয়ানটাইম ইনভেস্টমেন্ট বা এককালীন লগ্নি। তার মানে একসঙ্গে, একত্রে “বাল্ক” টাকা আপনি লগ্নি করছেন। দুই, সম্পদ ধীরে ধীরে বাড়ানোর স্বপক্ষে যুক্তি যদি বিশ্বাস করেন, তাহলে সিপ করুন। সংসারের বাজেটের মধ্যে সিপের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখুন কিছু টাকা। এই নিয়ে আলাদাভাবে আর কিছু বলছি না। ইদানিং সিপের জনপ্রিয়তা নিয়েও নতুন বক্তব্য রাখছি না। তবে বলি সিপ যদি দীর্ঘকাল ধরে করতে থাকেন, তাহলে সম্পদ গঠনের পক্ষে তা সহায়ক হবে। আমার মতো এককালীন লগ্নি করার পর তার সঙ্গে নিয়মিতভাবে সিপ যোগ করুন। সিপ সবসময় সুশৃঙ্খল বিনিয়োগের এবং ইউনিটের দাম গড় মূল্যের মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায়। টপ আপের ব্যবস্থা তো থাকেই, তার সদ্ব্যাবহার করুন, সুবিধা হবে আপনারই। এই পদ্ধতি মেনে চললে, ধারাবাহিকভাবে লগ্নি করে গেলে, সুফল পাবেন বলে আমি মনে করি।
প্র. মাল্টি অ্যাসেট প্রকল্পগুলো থেকে কি প্রত্যাশা করতে পারেন লগ্নিকারী?
উ. এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া উচিত হবে না। বুঝতেই পারছেন এই বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি অথবা গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। কোথায়, কোন অ্যাসেট কিভাবে পারফর্ম করে তার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। মনে করিতে হবে, ইক্যুটির অংশই প্রধান – অর্থাৎ, সাধারণ মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডে ইক্যুইটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে হ্যাঁ, ফিক্সড ইনকামের সঙ্গে গোল্ড এবং সিলভার এই কম্বিনেশনও ফলপ্রসু হতে পারে। কার্যক্ষেত্রে কোন অ্যাসেট কখন ইতিবাচক ভূমিকায় বিশেষভাবে থাকে, পরখ করতে হবে। অবশ্য বিগত সাইকেলে তা কেমন ফলাফল দিয়েছে তা ভবিষ্যতের নির্ধারক হতে পারে না।
পুরনো পারফরম্যান্স দেখে বিনিয়োগ করা, অন্য শর্ত উপেক্ষা করে, এই কৌশলের বিরুদ্ধে আমি। ইদানিং দেখতে পাচ্ছি যে সোনা সম্বন্ধে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এবং তা সঙ্গত কারণেই বাড়ছে বোঝা যাচ্ছে। আগামিদিনে যদি এই ট্রেন্ড চলতে থাকে তাহলে সোনার কারণেই লগ্নি হওয়া অসম্ভব নয়। তবে মাল্টি অ্যাসেট পোর্টফোলিওর ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি শ্রেণির অ্যাসেটের উপর নির্ভরশীল কেউ হবে না। সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজারের স্ট্র্যাটেজির উপর সবকিছু নির্ভর করবে। ইক্যুইটি অংশ, এখানে বলে রাখা উচিত, যেন যথেষ্ট ডাইভারসিফায়েড হয়। সেক্ষেত্রে একাধিক সেক্টর “ক্রিটিকাল” ভূমিকা নেবে।