গৌতম ব্রহ্ম: ফুসফুস বিকল। কাজ করছিল না হার্ট। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। পঁচাত্তরের নুয়ে পড়া শরীর হাল ছেড়ে দিয়েছিল। সবাই ভেবেছিলেন, এই বোধহয় সব শেষ। কিন্তু হাল ছাড়েননি ডাক্তারবাবুরা। বরং চুয়াল্লিশ হাজার টাকা দামের একটি ইঞ্জেকশন দিয়ে রোগীকে কার্যত যমদুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনলেন। নয়া নজির গড়ল বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতাল।
গৌরী চক্রবর্তী। বেহালার জয়শ্রী পার্কের বছর পঁচাত্তরের বাসিন্দা। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ থেকে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে ডাক্তার দীপালি বোসের অধীনে ভরতি হন তিনি। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে। ফুসফুস কাজ করছে না। রক্তে দ্রুত কমছে অক্সিজেনের মাত্রা। এই সব ক্ষেত্রে সাধারণত রোগীকে সুপার স্পেশ্যালিটি কোনও হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করেই দায় সারেন মহকুমা হাসপাতাল।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় ভেজাল দুধের কারবারে ধৃত ৩, বড় চক্রের হদিশে পুলিশ]
কিন্তু বিদ্যাসাগর হাসপাতাল তা করেনি। বরং চ্যালেঞ্জটা গ্রহণই করে ফেলেন আইসিইউ ইনচার্জ ডাক্তার শুভ্র ভট্টাচার্য। তিনি গৌরীদেবীকে ‘হাই ডিপেডেন্সি ইউনিডট’ (এইচডিইউ)-এ নিয়ে গিয়ে মরণপন চেষ্টা শুরু করেন। সুপারের সঙ্গে কথা বলে ৪৩,৯০০ টাকা দামের একটি ইঞ্জেকশনের ব্যবস্থা করেন। শুভ্রবাবু জানিয়েছন, “ওই ইঞ্জেকশনটিই প্রাণ বাঁচিয়েছে গৌরীদেবীর। আমরা যদি ওঁকে হার্টের চিকিৎসার জন্য বড় হাসপাতালে পাঠাতাম, তাহলে হয়তো আর বাঁচাতে পারতাম না। কারণ, ‘গোল্ডেন আওয়ার’ পার হয়ে যেত।”
জানা গিয়েছে, ওই চুয়াল্লিশ হাজারি ইঞ্জেকশনের জন্য গৌরীদেবীর পরিবারকে এক পয়সাও খরচ করতে হয়নি। সরকারি হাসপাতাল এখন বিনামূল্যেই এই মহার্ঘ্য ওষুধ দিচ্ছে রোগীদের। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ঢেলে সাজা হয়েছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিষেবা। তাই এই চ্যালেঞ্জটা ডাক্তারবাবুরা নিতে পেরেছেন, জানালেন সুপার ডা. রঞ্জিতকুমার দাস।
[আরও পড়ুন: স্পায়ের আড়ালে রমরমিয়ে মধুচক্রের আসর, পুলিশের জালে দুই খদ্দের-সহ ৫]
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের উদ্যোগে নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ায় খুশি গৌরীদেবীর পরিবার। বেহালার জয়শ্রী পার্কে তাঁর বাড়ি। কিন্তু সিওপিডি’র রোগী হওয়ায় দুই মেয়ের বাড়িতে পালা করে থাকেন। মেয়ে অনুরাধা সেন জানালেন, “ঘটনার দিন মায়ের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল এই বুঝি প্রাণটা বেরিয়ে যাবে। আপনারা তো জানেন, বেহালার যানজট কত ভয়ংকর। তাই ঝুঁকি না নিয়ে আমরা বাড়ির কাছের বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাই। ভাবিনি, এত ভাল পরিষেবা পাব।” একটি ইঞ্জেকশনেই গৌরীদেবীকে দ্রুত সুস্থতার পথে ফিরিয়ে নতুন নজির গড়ল বিদ্যাসাগর হাসপাতাল। ভরসা জোগাল আরও অনেক মরণাপন্ন রোগীকে।
The post চুয়াল্লিশ হাজারি ইঞ্জেকশনেই জীবনের পথে ফিরলেন বৃদ্ধা, নজির সরকারি হাসপাতালের appeared first on Sangbad Pratidin.