সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আকাশ থেকে চক্কর কাটতে কাটতে বিমানটা যখন মাটিতে পড়ল, তখনও বোঝার উপায় ছিল না, জায়গাটা ঠিক কোথায়৷ সূত্রের খবর, আশপাশে ভিড় জমানো গ্রামবাসীদের উইং কমান্ডার অভিনন্দন প্রশ্ন করেন, ‘এটা কোথায়? ভারত নাকি পাকিস্তান?’ উত্তর আসে ‘এটি কিলান।’ মারমুখী জনতাকে বলেন, ‘একটু জল হবে?’ কিন্তু তা না করে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশস্তি ও জয়ধ্বনি শুরু করে দেয় তারা। ঘন ঘন স্লোগান ওঠে, ‘আল্লা হু আকবর’। অভিনন্দন বুঝতে পারেন আসলে শত্রু দেশের মাটিতে এসে পড়েছেন তিনি৷ দৌঁড়ে কাছের একটি পুকুরে ঝাঁপ দেন ভারতীয় বায়ুসেনার ওই পাইলট৷ তখন তাঁকে ঘিরে রয়েছে হিংস্র জনতা৷ কিন্তু ওই চরম মুহূর্তেও মাথা ঠান্ডা রাখেন অভিনন্দন৷ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, জীবন গেলেও দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেবেন না৷ যেকোনও মূল্যে দেশকে রক্ষা করতে হবে৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে থাকা সমস্ত নথি লোপাট করে ফেলেন ভারতীয় বায়ুসেনার এই জওয়ান৷ তাঁর কাছে থাকা গোপন কাগজপত্র, নথি গিলে ফেলেন তিনি৷ আর কিছু পুকুরের জলে ভিজিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন৷ শত্রু দেশের চোখে চোখ রেখে দেশ সম্পর্কিত তথ্য দিতে অস্বীকার করেন উইং কমান্ডার৷ অভিনন্দন বর্তমানের শৌর্য মুগ্ধ করেছে পাক সেনাকে৷
[সন্ত্রাস চালাতে কোন পথে টাকার জোগান জইশ-ই-মহম্মদের, মিলল উৎস]
অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিতে চলেছে পাকিস্তান। অভিনন্দনকে যুদ্ধবন্দি দশা থেকে মুক্তি দিয়ে সরকারিভাবে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে শুক্রবার৷ সূত্রের খবর, এদিন দুপুরেই ওয়াঘা বর্ডার দিয়ে ফিরতে পারেন উইং কমান্ডার৷ পাকিস্তান বন্দি হওয়ার পর থেকে অভিনন্দনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই, তাঁকে নিয়ে বীরপুজো শুরু হয়েছে গোটা দেশে। পাক সেনার হেফাজতে থাকার সময় চায়ের কাপ হাতে যেভাবে দৃপ্ত ভঙ্গিতে তিনি চোখে চোখ রেখে অনড় ভঙ্গিতে জবাব দিয়েছেন তাতে অভিনন্দনের নামে জয়ধ্বনি উঠেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালেও। তাঁর মুক্তির দাবিতে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুক্তি নিশ্চিত হতেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যায় অভিনন্দন ও তাঁর পরিবার। বন্দিদশায় পাক সেনার প্রশ্নের জবাবে অভিনন্দন বার বার জোরাল গলায় বলেছেন, ‘আই অ্যাম নট সাপোসড টু টেল ইউ’ (এটা আমার তো বলার কথা নয়)। তাঁর দৃপ্ত ভঙ্গির এই কথাটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। লোকের মুখে মুখে ফিরছে কথাটি। ভারত-পাক সংক্রান্ত পোস্ট হওয়া যে কোনও খবরে বেশিরভাগ মানুষ স্মাইলি দিয়ে বা অ্যাটিটিউড দেখিয়ে পোস্ট করছেন ‘অভিনন্দন বাণীটি’।
[জইশ নিয়ে আরও বিপাকে পাকিস্তান, কড়া বার্তা দিল আমেরিকা ]
তামিল বায়ুসেনা অফিসারের এই অনড় জেদি মনোভাবে গর্বিত তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল সিমহাকুট্টি বর্তমান। দেশপ্রেম ও বীরত্বের বিপুল উদাহরণ হয়ে ওঠা অভিনন্দনের ফেরার পথ চেয়ে রয়েছেন তিনি। ছেলেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন প্রাক্তন এই এয়ার মার্শাল।
The post ধরা পড়েও মাথা ঠান্ডা রাখেন অভিনন্দন, দেশের সুরক্ষায় করেছিলেন এই কাজটি appeared first on Sangbad Pratidin.