সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘শাহ জাহান রিজেন্সি’-তে প্রথমবার প্লেব্যাক করলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। আপাতত শুটিংয়ে ব্যস্ত, অতএব মোবাইলে ধরা গেল তাঁকে৷ কথা বললেন শম্পালী মৌলিকের সঙ্গে৷
অনির্বাণ, কীসের শুটিংয়ে ব্যস্ত?
‘হইচই’ থেকে ভ্যালেন্টাইনস ডে-র জন্য কিছু শর্ট ফিচার বানানো হচ্ছে। একটি সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালনা করছেন। সেটার কাজ করছি।
যেটায় জয়া আহসানও আছেন?
হ্যাঁ, ওঁর অপোজিটে আমি আর বিক্রম। আন্তন চেকভের গল্প নিয়ে।
আচ্ছা, ‘ঈগলের চোখ’-এর পর আবার এক ছবিতে আপনারা। এবারে জানতে চাই, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘শাহ জাহান রিজেন্সি’-র ট্রেলারে আপনার গান। কীভাবে ঘটল এই প্লেব্যাক? মানে ‘কিচ্ছু চাইনি আমি…’
এটা ঘটল বলতে, আনইউজুয়াল কাইন্ড অফ অডিশন আমি একবার দিয়েছিলাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে। আনইউজুয়াল কেন বলছি। কারণ, আমরা যখন ‘উমা’-র জন্য হল ভিজিট ইত্যাদি করছিলাম, ‘তখন আবার এ মন জাগে’ গানটা আমি প্রায় সারাদিন ধরেই গুনগুন করতাম। সৃজিতদা শুনে একটু ইমপ্রেস গোছের হয়েছিল যে, বাহ সুন্দর তো! তখন আমাকে বলে যে, ‘তুই গাইবি’? আমি বলি, ‘হ্যাঁ, সুযোগ পেলে কেন গাইব না।’ কিন্তু আমার তো গায়ক হিসেবে কোনও ট্রেনিং নেই। ফলত, খুব কঠিন গানে সাহস করব না ডেফিনেটলি।
তারপর?
তারপরে ‘উমা’ হয়ে গেল। ‘এক যে ছিল রাজা’ হয়ে গেল। ‘শাহ জাহান রিজেন্সি’-র শুটিংয়ের আগে সৃজিতদা ফোন করে বলল যে, ‘এই ছবিতে তোর সিঙ্গিং ডেবিউ হবে’। রাতারাতি আমাকে একটা গান পাঠিয়ে দিল। স্ক্র্যাচ রেকর্ডিং। যে, ‘এই গানটা গাইতে হবে, প্রিপেয়ার করে নে।’ প্রথম যেটা করলাম, দোকানে গিয়ে একটা ইলেকট্রনিক তানপুরা কিনে আনলাম। একটু গলাটলা সেধে নিলাম। তারপর গানটা তুলে ফেললাম। তারপরে একদিন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর স্টুডিওতে যাওয়ার কথা হল, সেখানে গেলাম। ওখানে রেকর্ড করে এলাম। দু’বার রেকর্ডিং হয়েছিল। একটার পর ইন্দ্রদীপদার কিছু নোট্স ছিল গায়কিটা নিয়ে। যে, অ্যাটিটিউড অফ দ্য সং কীরকম হবে। সেটাই বাজছে এখন (হাসি)।
[সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প নিয়ে সামনে এল ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-র ট্রেলার]
গানটার সুর তো প্রসেনের করা?
হ্যাঁ, সুর প্রসেনের। লেখা দীপাংশুর। ‘হুডখোলা কবিতারা’-র যে গানটা ইউটিউবে পাওয়া যায়, ওটা হল প্রসেনের গাওয়া। সেটাই সিনেমার জন্য আমি গাইলাম। ইন্দ্রদীপদা অ্যারেঞ্জ করেছেন ছবির এই গানটা।
আপনার নাটকের গান গাওয়ার তো একটা অভ্যাস ছিল।
হ্যাঁ, অভ্যাস মানে থিয়েটারে অনেক গেয়েছি। তিনটে নাটকে তো বটেই। আমি যেহেতু অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির রোল করতাম, ফলত সেখানে অনেক গান গাইতে হত। টপ্পাও গেয়েছি, আবার পুরাতনী বাংলা গানও। ‘দেবী সর্পমস্তা’ নাটকে প্রায় ছ’সাতটা ফোক গান গাইতাম। গিরিশ কারনাড-এর ‘নাগমন্ডলা’-তে গেয়েছি। ‘তিন পয়সার পালা’-য় গেয়েছি।
স্টেজে গান গাওয়াটা বেশি শক্ত নয় কি? সংশোধনের সুযোগ তো থাকে না।
তবু আমি বলব, না। প্লেব্যাক বেশি শক্ত। তবে সুর বোধ, তাল বোধ না থাকলে যে কোনও গান গাওয়াই শক্ত। স্টেজে একটা এনার্জি নিউক্লিয়াস থাকে, গান-অভিনয় দুই ক্ষেত্রেই। এটা ঠিকই যে, ভুল তাল ধরে ফেললে স্টেজে সেটা আটকানো যাবে না। প্লেব্যাকের ক্ষেত্রে যেহেতু আমি মাইক্রোফোনের সামনে গাইছি, সুর বোধ কতটা সেটা ধরা পড়ে ঠিকঠাকভাবে। নাটকের ক্ষেত্রে কিন্তু দূর থেকে অডিয়েন্স অত সূক্ষ্মভাবে ধরতে পারবেন না। আমি বলব প্লেব্যাক টেকনিক্যালি একটু ডিফিকাল্ট। তবে স্টেজে গান গাওয়াও খুব সহজ ব্যাপার নয়।
আপনার কাছে গানটার ফিডব্যাক কেমন?
আমার কাছে প্রথম যেটা স্টানিং লাগল, কোনও দিন অভিনয়ের জন্য এত প্রম্পট এবং এত সংখ্যক মানুষের কাছে প্রতিক্রিয়া পাইনি। নিশ্চয়ই কিছু মানুষ তাঁদের ভাললাগার কথা জানিয়েছেন আমাকে, অভিনয়ের ক্ষেত্রেও। কিন্তু এত দ্রুত রিঅ্যাকশন পাইনি। থিয়েটারেও না, সিনেমাতেও না। আমার ওই বিশ্বাসটাই আরও দৃঢ় করল যে, সুর অনেক বেশি কানেক্ট করে। সুর অনেক রিচেব্ল। অভিনয় অনেক মাল্টিলেয়ার্ড ব্যাপার। এক-একজনের ভাল লাগে, কারও বা ততটা ভাল লাগে না। সুরের একটা ইউনিভার্সাল অ্যাপিল আছে।
[শহুরে জীবনের চালচিত্র ফুটে উঠল ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-র পোস্টারে]
এবারে তো মেয়েরা আরও বেশি করে আপনার প্রেমে পড়বে?
হ্যাঁ, তাই মনে হচ্ছে (হাসি)।
‘শাহ জাহান রিজেন্সি’-র ট্রেলারটা দেখেছি। খুব ফ্রেশ দেখাচ্ছে আপনাকে। কারণ এর আগে তো একটু ডার্ক শেডের চরিত্রেই বেশি দেখেছি আপনাকে। এইটা বেশ খোলামেলা লাগল।
আমি একটু চাইছিও অন্য ধরনের রোল করতে। কারণ ‘শাহ জাহান রিজেন্সি’ বছরের প্রথম রিলিজ আমার। তারপরে অঞ্জনদার ‘ফাইনালি ভালবাসা’। তারপরে আসবে রিনাদির ‘ঘরে বাইরে আজ’। এরপরে আছে ‘অপারেশন রাইটার্স’। সেটার এখনও শুটিং শুরু হয়নি। হবে। ২০১৯-এ আমার চরিত্রগুলো একটু আলাদা, ওই ডার্ক মনোটনি থেকে বেরতে চাইছি। ঠিক মনোটনি বলব না। কারণ ‘ধনঞ্জয়’ আর ‘উমা’-র ‘মহীতোষ শুর’ তো এক নয়। কিন্তু ওই অন্ধকার, খারাপ লোকের রোল থেকে বেরতে চাইছি।
‘শাহ জাহান রিজেন্সি’-তে আপনি ‘মিস্টার পাকড়াশি’, মানে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের করা রোলে তো?
আমার চরিত্রের নাম ‘অর্ণব সরকার’। হ্যাঁ, ওই আগের ছবিতে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় করেছিলেন।
এবং এই প্রথমবার আপনি স্বস্তিকার বিপরীতে। কীরকম লাগল ওঁর সঙ্গে কাজ করে?
অ্যাকচুয়ালি আমি খুবই আগ্রহী ছিলাম যে আমি স্বস্তিকার সঙ্গে অভিনয় করব। ওকে ভীষণই পছন্দ করি, মানে ওর অভিনয়ের অ্যাডমায়ারার আমি। শেষ পাঁচ-সাত বছরে স্বস্তিকার কোনও কাজই আমার ফেলে দেওয়ার মতো মনে হয়নি। এতটাই ভাল অভিনয় করছে, প্রায় সমস্ত চরিত্রে। যেমন হয় না, ঋত্বিকদার সঙ্গে অভিনয় করতে ইচ্ছে করে। তেমন স্বস্তিকার সঙ্গেও করত। অপুদা বা অঞ্জনদার সঙ্গেও ইচ্ছে করে। এটা করে দেখেছি অ্যাক্টর হিসেবে খুব গ্রো করা যায়। অ্যাকচুয়ালি এর আগে একটা ছবিতে স্বস্তিকার সঙ্গে কাজ করেছিলাম, কিন্তু আনফরচুনেটলি সেই ছবিটা শেষ হয়নি। আটকে যায়। তারপরে যখন এই ‘শাহ জাহান রিজেন্সি’-র সুযোগটা আসে, খুবই আনন্দিত বোধ করি। এবং অভিনয় করতে গিয়েও সেটা দেখলাম। আমার সঙ্গে ওর আলাপ অনেকদিনের। স্বস্তিকা আমার থিয়েটার দেখতে আসত। অলমোস্ট আমার সব থিয়েটার ওর দেখা। কথাবার্তা ছিলই। আমাকে বলত, তোর সঙ্গে একটা পার্ট করি চল। আমিও বলতাম, দেখো কেউ দিচ্ছেই না। এইরকম। এবার হল, আমি তো খুব এনজয় করেছি।
[নতুন রূপে আসছে ‘চৌরঙ্গী’, প্রকাশ্যে ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-র ফার্স্ট লুক]
এনজয় যে করেছেন, সেটা ট্রেলার আর গানের দৃশ্য দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। এত স্পনটেনিয়াস।
হ্যাঁ, ঠিকই।
কিছু বিছানা দৃশ্যও রয়েছে আপনার আর স্বস্তিকার। খুব ন্যাচারাল মনে হচ্ছে। শুটিংয়ের সময় একটুও নার্ভাস লাগেনি? উলটোদিকে স্বস্তিকার মতো প্রতিষ্ঠিত অ্যাক্টর।
না, সেটা আমি ফিল করিনি। তার কারণ, আমার অনেকগুলো এক্সারসাইজের অভিজ্ঞতা আছে। ইনহিবিশন কাটিয়ে আমি সিনেমায় এসেছি। শুরু থেকেই মানে ‘ঈগলের চোখ’ থেকেই ইনহিবিশন ছিল না। এখন যদি বলেন গ্রাফিক ন্যুডিটি শুট করতে হবে, যদিও সেটাও আমার করা হয়ে গিয়েছে, সিনেমার ক্ষেত্রে। আন্ডারগ্রাউন্ড ফিল্মে। এইখানে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বা অন্য কারও থাকা, সেটা আমার কাছে ম্যাটার করে না। ইনহিবিশন আর নেই। ডিরেক্টর লিখেছেন এবং এইভাবে চাইছেন। এটাই আমার কাজের অংশ। তাই নার্ভাসনেসও নেই। অদম্য সাহস আছে আমার তেমন নয়, এগুলো কাটানোর জন্য ২০০৫ সাল থেকে আমি ট্রেনিং নিয়েছি। সেই কারণে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
দৃশ্যগুলো এখনও পর্যন্ত দেখে মনে হচ্ছে, খুব ইনটেন্স কিছু সিকোয়েন্স তোলা হয়েছে। এইসব দৃশ্যে অভিনয় করার পর কখনও মনে হয়েছে, আপনি স্বস্তিকার প্রেমে পড়ে যেতে পারেন?
না, সেরকম করে মনে হয়নি। সেটা যদি মনে হয়েও থাকে, তাহলে এই দৃশ্যগুলোর জন্য নয়। মানে বলতে চাইছি তার কারণ দৃশ্যগুলো নয়। সিনেমায় এই ধরনের দৃশ্য করতে গেলে সবচেয়ে কম যেটা থাকে, সেটা হচ্ছে প্রেম। এত টেকনিক্যাল জিনিস মেনটেন করতে হয়, ওগুলোই মাথায় থাকে।
[‘রাজকাহিনী’র পর সৃজিত-ঋতুপর্ণার পুনর্মিলন, এবার ‘শাহজাহান রিজেন্সি’]
কিন্তু বললেন যে অন্য কারণে, তো প্রেমে পড়ে যেতে পারেন?
সে তো যে কোনও কারণেই পড়া যায়। ওহ, এই প্রশ্নগুলো করতেই হবে না! (হাসি) স্বস্তিকা আমার খুবই বন্ধুস্থানীয় মানুষ। দীর্ঘদিনের।
বললাম এই জন্য, যে অন স্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা ভাল লাগছে।
ওটা এসেছে আমাদের মধ্যের খুবই ভাল বন্ধুত্বের কারণে।
এই ছবিতে তুখড় সব অভিনেতারা রয়েছেন। বাকিদের থেকে কতটা কেটে বেরিয়ে আসতে পারবেন মনে হয়?
আমি জানি না। ভয়ঙ্কর ভাল সব অ্যাক্টর রয়েছেন। তবে আমার বেশিরভাগ সিন স্বস্তিকার সঙ্গে। বাকিদের সঙ্গে একটা-আধটা করে দৃশ্য।
The post স্বস্তিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? জানালেন অনির্বাণ appeared first on Sangbad Pratidin.