সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লিওনেল মেসিকে দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপে শনিবার রণক্ষেত্র হয়েছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে সেদিন 'মেসি সাক্ষাতে'র ছবি পোস্ট করায় নেটভুবনের রোষানলে পড়তে হয় শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে। যদিও লাগাতার আক্রমণের শিকার হয়েও গত দু'দিন চুপ ছিলেন অভিনেত্রী, তবে এবার দুই সন্তানকে আক্রমণ করায় বাধ্য হয়ে এক ভিডিও বার্তায় সরব হলেন শুভশ্রী।
ভিডিওতে শুভশ্রী যা বলেছেন, সেটাই পুঙ্খানুপুঙ্ক্ষভাবে তুলে ধরা হল। অভিনেত্রী জানালেন, "যুবভারতীতে মেসিকে নিয়ে যে 'মেস'টা ঘটে গেল, সেটা ব্যাখ্যা করার জন্যই আমি এই ভিডিওটা পোস্ট করছি। গোট ইভেন্টে আমি নিজে আমন্ত্রিত ছিলাম। আমন্ত্রণ পেয়েই আমি হায়াতে গিয়েছিলাম। সিনেদুনিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে আমি এবং কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলাম। সেখানে বড় বড় শিল্পপতি-সহ অনেক বিদ্বজ্জনরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অ্যাক্টিভিটিটাই ছিল মেসি আসবেন, আমাদের সবার সঙ্গে দেখা করবেন এবং ছবি তুলবেন। আমি সাড়ে ৮টা নাগাদ হায়াতে পৌঁছই। দশটা পনেরো নাগাদ আমার সঙ্গে মেসির দেখা হয়। আমি ছবি তুলি এবং যখন আমি বেরিয়ে আসছি তখন ওদের পিআর টিমের তরফ থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়, যদি আমি যুবভারতীতে যাই, তাহলে ওদের খুব সুবিধে হয়। কারণ ওখানেও নানারকম ব্যবস্থাপনা ছিল। মেসির জন্য সেখানে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমাকেই কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে? এই প্রশ্নটা যখন উঠছে, তখন ওদের পিআর টিমই ভালো করে উত্তরটা দিতে পারবে। আমি রাজি হওয়ার পর হায়াত থেকে বেরিয়ে যুবভারতীতে যাই। এবং আমাদের জন্য একটা নির্দিষ্ট তাঁবু ছিল, আমরা সেখানেই বসে মেসির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এর মাঝেই আমার পিআর টিম থেকে সোশাল মিডিয়ায় ছবিগুলি পোস্ট করা হয়। তবে যে সময়ে ছবিগুলি পোস্ট করা হয়েছে, সেসময়ে পোস্ট হয়নি কারণ সেখানে জ্যামার লাগানো ছিল। যাঁরা সেদিন ওখানে ছিলেন, তাঁরা জানেন। সাড়ে ১১টা নাগাদ মেসি ক্রীড়াঙ্গনে ঢোকেন এবং ওঁকে নিয়ে যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়, সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমি নিজেই মেসিকে দেখতে পাচ্ছিলাম না, আপনারা কীভাবে দেখবেন? ওই তাঁবুতে থাকাকালীন আমি নিজে দেখেছি উদ্যোক্তাদের গাফিলতির জন্য কীভাবে একটা সুন্দর ইভেন্ট বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। তারপর ঝামেলা শুরু হল। আমার একটা শুটিংয়ে যাওয়ার ছিল। ততক্ষণে আমার দেরিও হয়ে গিয়েছিল অনেকটা। তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে বেরিয়া আসি।"
অভিনেত্রীর সংযোজন, "বেরনোর সময়ে ফোনে ব্যস্ত ছিলাম। এবং এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠান যে হতে গিয়েও হল না, সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম অনেকের সঙ্গে। এরপর আমি যখন বাণতলায় শুটে পৌঁছেই মেকআপের জন্য চলে যাই। এর মাঝে ছবি পোস্ট হয়েছে কিনা, সেটাও খেয়াল করতে পারিনি। অনেকক্ষণ বাদে জানতে পারি, যুবভারতীতে যে ঘটনার সাক্ষী থেকেছি, সেটা বড় আকার ধারণ করেছে। এবং কোনও না কোনওভাবে আমার নাম সেই বিষয়টার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। তৎক্ষণাৎ ইনস্টাগ্রামে গিয়ে দেখি, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে আমার ছবিগুলি কিছুক্ষণ আগে পোস্ট হয়েছে। এবং সেটাই দুরন্ত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরই শুরু হয় আমাকে ট্রোল করা। আমাকে প্রোপাগান্ডা বানিয়ে. আমাকে অবজেক্ট বানিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু হয়। আপনারা এমন শুরু করলেন যে, আমার জন্যেই হয়তো মেসিকে দেখতে পেলেন না আপনারা। কেউ বলতে পারবেন যে, আমার ছবি তোলার জন্যই আপনারা মেসিকে দেখতে পাননি? আমার ছবিগুলো প্রযুক্তিগত কারণে দেরি করে পোস্ট হয়েছে, তবে এত ট্রোল সত্ত্বেও আমি কিন্তু পোস্ট সরাইনি। কিন্তু আমাকে নিয়ে যে নোংরামি চলছে, সেটার জন্য আমি আপনাদের প্রতি সমব্যথী। আপনারা টাকা দিয়েও স্বপ্নের নায়ককে দেখতে পেলেন না। আর সেই একই অন্যায় আপনারা আমার সাথেও করছেন। আপনারা এই সমাজে আমরা বাস করছি? তবে আমি কিচ্ছু মনে করিনি। কারণ আমার নিজেরও মনে হয়েছিল যে, এত মানুষ কষ্ট করে টাকা খরচ করেও মেসিকে দেখতে পেলেন না, সেক্ষেত্রে আমাকে বাজে কথা বলে যদি কারও মন হালকা হয়, তাহলে হোক। কিন্তু আজকে ভিডিওটা পোস্ট করতে বাধ্য হলাম, কারণ আমার সন্তানদের আক্রমণ করা হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলা হোক। একজন মা হিসেবে আমি সেটা মেনে নেব না।"
