এ বাংলার ছবিতে ডেবিউ করতে চলেছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা (Rafiath Rashid Mithila)। ম্যাকবেথের অনুপ্রেরণায় তৈরি ‘মায়া’ (Mayaa) আসছে আগামী সপ্তাহে। মলাটচরিত্রে তিনি। ছবির প্রচারে শম্পালী মৌলিকের মুখোমুখি দুই বাংলার তারকা।
এদেশে আপনার ডেবিউ ফিল্ম হতে চলেছে ‘মায়া’। ৭ জুলাই রিলিজ। তার আগে নার্ভাস, না এক্সাইটেড?
দু’টোই। তবে আমার মনে হয় এক্সাইটেড বেশি। নার্ভাস-ও লাগছে, যে লোকজন আমার অভিনয় কীভাবে নেবে। তবে এটায় বেশি মনোযোগ দিতে পারছি না। ছবি রিলিজ হচ্ছে আমি এতেই ভীষণ খুশি (হাসি)।
আপনার লুক নিয়ে শুরু থেকেই খুব চর্চা হয়েছে। লুক সেটে নিজের প্রথম দিকে কেমন প্রতিক্রিয়া ছিল?
আমি যখন স্ক্রিপ্ট পড়েছি, নিজেকে ওইরকম ভাবে ভাবতে পারিনি। ছবিতে আমার অনেকগুলো লুক, গ্র্যাজুয়ালি বয়সটা বাড়ছে। ফাইনাল লুকটা যখন দেখি তখনও বুঝিনি। কিন্তু ওই লুক সেটের পরেই আমার ট্রান্সফরমেশন হয়। তার আগে পর্যন্ত ‘মায়া’ কীভাবে তাকাবে, ডায়লগ ডেলিভারি কেমন হবে, পসচার কেমন হবে ভাবছিলাম, কিন্তু অত কানেক্ট করতে পারছিলাম না। লুক সেটের পর মনে হল, আমার ওপর ‘মায়া’ ভর করেছে।
রাজর্ষি দে-র ‘মায়া’ শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথের প্লট থেকে অনুপ্রাণিত, আপনার চরিত্রটা কি লেডি ম্যাকবেথের দ্বিতীয় সত্তা?
হ্যা, অল্টার ইগোই বলতে পারেন। কখনও দেখে মনে হবে উইচ, তারা ভবিষ্যদ্বাণী করে। মায়া-ও তেমন। ম্যাকবেথের গল্পের সঙ্গে এগজ্যাক্ট কানেকশন খুঁজতে গেলে হয়তো শক্ত লাগবে। কারণ, এটা একেবারে নতুন ইন্টারপ্রিটেশন। নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা।
এই ছবিতে তো আপনার বিভিন্ন বয়স…
হ্যাঁ, আমার চরিত্রের একটা ব্যাকস্টোরি আছে। বর্তমান সময়ে দেখানো হচ্ছে, আমার বেশি বয়স। পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা, তান্ত্রিকের মতো দেখতে তাকে। তবে কী করে সে ওই জায়গায় এল, সে কি সত্যিই তান্ত্রিক, নাকি অন্য কেউ? এখানে মায়ার ১৭-১৮ বছর বয়সের গল্পও আছে। ফ্ল্যাশব্যাক, ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ডের মাধ্যমে নন-লিনিয়ার ওয়েতে যায় গল্পটা। মায়ার ত্রিশোর্ধ্ব সময়টাও আছে ছবিতে।
কতটা চ্যালেঞ্জ ফিল করেছেন?
আমি ভীষণ চ্যালেঞ্জ ফিল করেছি। প্রথমত এই বাংলায় এটা আমার প্রথম ছবি। দ্বিতীয়ত, কো-আর্টিস্টদের সঙ্গে আগে কোনওদিন অভিনয় করিনি। তাবড় তাবড় সব অভিনেতা রয়েছেন ছবিতে। সুদীপ্তাদি, তনুশ্রীদি, ছেলেদের মধ্যেও সমস্ত ভাল অভিনেতারা রয়েছেন। এসব কারণে আমি চিন্তিত ছিলাম যে, কী করে ‘জেল’ করবে। তাছাড়া ‘মায়া’ ভীষণ কঠিন একটা চরিত্র। ওর ভিতরে অনেককিছু চলতে থাকে, দেখে বোঝার উপায় নেই ও আসলে কে। তার জন্য পুরো ছবিটা দেখতে হবে। একটু একটু করে মায়া গড়ে ওঠে আমার ভিতরে। তারপর তাকে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারি।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী বলে কি সেট-এ স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পেতেন?
না। আমার সেটা মনে হয় না। রাজর্ষিদা ওইরকম করে বলে আমার মনে হয় না। রাজর্ষিদা সবাইকে সমানভাবে ট্রিট করে। আমি কার বউ সেটা পরের কথা, বরং এই বাংলায় এটা আমার প্রথম ছবি, আমাকে কোনও ট্রিটমেন্ট না দিলেও হত। আমার কোনও প্রত্যাশা ছিল না। যেখানে এত সিনিয়র এবং গুণী অভিনেতারা আছেন। সেখানে আমাকে একদম ইক্যুয়ালি ট্রিট করা হয়েছে। রাজর্ষিদা এরকমই।
[আরও পড়ুন: ‘সঙ্গী বাছুন চুপচাপ!’ নতুন পোস্টে কীসের ইঙ্গিত দিলেন জিতু?]
ম্যাকবেথের অজস্র অ্যাডাপ্টেশন হয়েছে। সাম্প্রতিককালে যেমন অনির্বাণ ভট্টাচার্যর ‘মন্দার’ সিরিজটা ভীষণ ছাপ ফেলেছে দর্শকমনে। সেটা কিন্তু মানুষের মনে রয়ে গেছে। তার জন্য ‘মায়া’-র পক্ষে চাপ হতে পারে?
আমার মনে হয় না। ‘মন্দার’ একেবারে অন্য প্রেক্ষাপটে করা। ভাষা বা দৃষ্টিভঙ্গি এবং যে অঞ্চলের গল্প বলা হয়েছে সেখানে, সেটা কিন্তু আলাদা। আর ‘মায়া’ একেবারেই আলাদা। দর্শক পৃথক করতে পারবে।
‘মন্দার’-এ সোহিনী সরকারকে লেডি ম্যাকবেথের চরিত্রে দেখেছি আমরা। আপনার কেমন লেগেছিল?
অসাধারণ। সোহিনীর অভিনয় আমার খুব ভাল লাগে।
এই বাংলায় আর কী কাজ আসছে?
অর্ণব মিদ্যার ছবিতে ‘মেঘলা’-র চরিত্রে করেছি। ওটা রিলিজ হবে। অরুণাভ খাসনবিশের ‘নীতিশাস্ত্র’ অ্যান্থোলজিতে করেছি। আর অনির্বাণ চক্রবর্তীর ‘অভাগীর স্বর্গ’ করব।
অভিনয় ছাড়া আপনার বৃহত্তর কাজের জায়গা চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টর। প্লাস ভারত-বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত, এই দুটো ব্যালান্স করেন কী করে?
আমি পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে চাইল্ড ডেভলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করছি। আর অভিনয়ও করি প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে। প্রথমটা আমার ফুলটাইম জব এবং প্যাশন, তাই প্রায়োরিটাইজ করতে হয়েছে। সপ্তাহে পাঁচটা দিন দিতে হয়। যে জন্য আমাকে প্রচুর ট্র্যাভেল করতে হয়। আর সপ্তাহান্তে আমার পছন্দের কিছু গল্পে বা চরিত্রে কাজ করেছি। সংখ্যায় বেশি না হলেও কাজগুলো ভাল হয়েছে। যে কারণে আমার পরিচিতি হয়েছে অভিনেত্রী হিসাবে। কলকাতা আমার জীবনে পরে যোগ হয়েছে, গত তিন বছর হল। ফলে একটু কঠিন হয়েছে। কারণ, নতুন জায়গা, নতুন মানুষজনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। ফলে বারবার ঢাকায় গিয়ে কাজ সম্ভব নয়। এবং আমার মেয়ের স্কুল রয়েছে। তাই ঢাকায় কম সময় দিই, কলকাতায় টুকটাক যা কাজ পাই, এইটুকুই করি। শেষ তিন বছরে তেমনটাই করেছি। ঢাকাতেও এর মধ্যে তেমন কাজ করিনি।
‘মায়া’ নিয়ে ঢাকার উৎসাহ কেমন?
খুবই (হাসি)। সবাই জিজ্ঞেস করছে, কী করে দেখবে। ইদের ছুটিতে যারা কলকাতায় থাকবে তারা দেখতে পারবে। বাংলাদেশে এখনই দেখতে পাবে না। পরে কোনও ওটিটিতে এলে দেখতে পাবে।
সৃজিত মুখোপাধ্যায় কী বলছেন রিলিজ নিয়ে?
কী আর বলবে। কিছু বলেনি। সৃজিতের তো রিলিজ হতেই থাকে। ও নিজের রিলিজ নিয়েই এত ব্যস্ত থাকে (হাসি)!
কাজের সূত্রে আপনার বাইরে যাওয়া থাকে। সৃজিতের শুটিংয়ের জন্য প্রচুর বাইরে যাওয়া থাকে। সেক্ষেত্রে কি একসঙ্গে সময় কাটানো কমে গিয়েছে?
হ্যাঁ, এটা ঠিক। আমাকে প্রচুর আফ্রিকা যেতে হয় প্রোজেক্টের জন্য। বাকি সময় আমি কলকাতাতেই থাকি। কারণ, আইরার স্কুল। কিন্তু সৃজিতের কাজ এখন বাইরে হয়ে গেছে বেশি। বরং ওই কলকাতায় কম থাকছে। সেই কারণে খুব একটা সময় কাটানো হচ্ছে না।
যেহেতু পরস্পরকে সময় দেওয়া কমেছে তাই কি বিচ্ছেদের কথা উঠছে বা খবর হচ্ছে মাঝে মধ্যে?
দেখুন, বিচ্ছেদের খবর প্রত্যেক বছর একবার করে আসে, এটা হচ্ছে ‘ওই বাঘ আসবে’, ‘বাঘ আসবে’ টাইপের গল্প। যেদিন সত্যি আসবে, লোকে আল্টিমেটলি জানতে পারবে যে, এবার বাঘ এল! ততদিন পর্যন্ত অকারণে এটা চলবে। আমরা তো কিছু বলছি না, মানুষের স্পেকুলেশন থেকে অনেককিছু লিখছে (হাসি)।