বক্তা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর উপস্থাপিত ‘উড়নচণ্ডী’-র দুই নবাগত অমর্ত্য রায় আর রাজনন্দিনী পালকে নিয়ে চলল জোর আড্ডা। সঙ্গী কফিহাউস।
অনেকেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চায় নতুনদের কী টিপস দিলেন? কিন্তু আপনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অমর্ত্য আর রাজনন্দিনীর মতো নতুন তারকাদের থেকে কী টিপস নিলেন?
প্রসেনজিৎ: (হাসি) এগজ্যাক্টলি টিপস না। তবে ‘উড়নচণ্ডী’ দেখে মনে হয়েছে অভিনয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ, স্বাভাবিকতা বা যে সাবলীল অভিনয় ওরা দু’জন করেছে, সেটা আমাদের মতো অভিনেতাদের ইন্সপায়ার করবে। দেখে ভেবেছি, এতটা সাবলীল অভিনয় কি আমি করতে পারব? শুধু ওরা দু’জন নয়, ওদের জেনারেশনের প্রত্যেকের কাজ দেখে বলছি।
এটা আপনার মডেস্টি…
প্রসেনজিৎ: না না, ইটস ট্রু। একই রিঅ্যাকশন হয়েছিল শান্তিলালের ছেলের (ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে কাজ করে। আসলে এদের মধ্যে এখনও ফলস কোনও কিছু তৈরি হয়নি। তাই যেটাই করছে তার মধ্যে অন্যান্য কোনও ইনফ্লুয়েন্স বা চাপ নেই।
[ কেন ভারতীয় পরিচালক তৈরি করবে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক? ক্ষুব্ধ ওপার বাংলা ]
সাবলীল অভিনয়ের কারণ কি এটা হতে পারে যে ওরা ছোটবেলা থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে কাছ থেকে দেখেছে, বা ওদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ওদেরকে হেল্প করেছে? যাদের এই ব্যাকগ্রাউন্ডটা নেই সেই অভিনেতারা কি এতটা সাবলীল হতে পারত?
প্রসেনজিৎ: হয়তো পারত না। ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে বেড়ে ওঠাটা যথেষ্ট হেল্প করে। তার মানে এটাও নয় যে তাকে ভাল অভিনেতা, পরিচালক বা সংগীত পরিচালক হতেই হবে। কিন্তু সিনেমার অ্যাম্বিয়েন্স অনেকটা হেল্প করে। আমাকেও করেছে। আমি ছোটবেলা থেকে অনেককে দেখে বড় হয়েছি। আমার ভয় বা জড়তা কেটে গিয়েছে। আর এরা এতটাই ছোট যে এখনকার অভিনেতারা ওদেরকে কম্পিটিটর মনে করে না। তাই কো-অ্যাক্টর, লাইটম্যান, মেকআপ আর্টিস্ট কিংবা ডিরেক্টর সবাই ওদের টিপস দেয়, সাপোর্ট করে। ওরা বড় বা স্টার হয়ে গেলে সেটা কিন্তু পাবে না।
অমর্ত্য আর রাজনন্দিনীকে প্রশ্ন- কী শিখলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে? এই একটু আগে একটা ফোটোশুট হল। শুটের আগে প্রসেনজিৎ বললেন, “ফ্রেমটা একটু দেখে নিই।” এই ছোট্ট জিনিসটাই অনেক অভিনেতারা আজকাল করেন না। এ রকম একজনের জন্য কাজ করার সময় কোথাও কি একটা এক্সট্রা প্রেশার ক্রমাগত চলছিল?
অমর্ত্য: বুম্বা আঙ্কলের এই গুণটা ‘উড়নচণ্ডী’ করার আগেও দেখেছি।
অমর্ত্য, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম আলাপ আপনার কোথায় হয়?
অমর্ত্য: অনেক ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে কোনও পার্টিতে প্রথম দেখা হয় বোধহয়। রিসেন্টলি প্রসেনজিৎ আঙ্কলকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি ‘ফর সিনেমা ওনলি’ দেখানো হয়েছিল একটি বিশেষ স্ক্রিনিংয়ে। তখন অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। অনেক ছবিও তুলেছিলাম।
[ ‘ইন্ডাস্ট্রি বদলাচ্ছে বলেই আমি এখনও টিকে আছি’ ]
আর রাজনন্দিনীর?
রাজনন্দিনী: প্রথম দেখাটা আমার মনে নেই। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় যে মূহুর্ত যা মনে পড়ে তা হল ফোনে একটা কথোপকথন। ‘উড়নচণ্ডী’ নিয়েই। তখন বুম্বা আঙ্কল যে পরামর্শটা দেন, বুঝতে পারছিলাম ইট ওয়াজ কামিং ফ্রম হিজ হার্ট। উনি যা বলছিলেন সেটা আমাকে স্ট্রেংথ দিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছিল।
উনি কি আপনাকে এই ইন্ডাস্ট্রির প্রোজ অ্যান্ড কন্স নিয়ে বলছিলেন?
রাজনন্দিনী: একদমই তাই। এবং সাবজেক্টিভ পয়েন্ট অফ ভিউ রেখে কথাগুলো বলছিলেন। বলেছিলেন, “এটা তোমার সিদ্ধান্ত। তোমাকেই লাস্ট কলটা নিতে হবে।”
আবার সেই প্রশ্নতেই আসি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রোডাকশন হাউস থেকে শুরু হচ্ছে আপনাদের কেরিয়ার। কোথাও কি এক্সট্রা প্রেশার ছিল? না কি এটাই অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ হিসেবে কাজ করেছিল?
অমর্ত্য: প্রেশার নয়, এটা অ্যাডেড অ্যাডভান্টেজ। যে ডেডিকেশন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নিজের প্রতিটি কাজে দিয়ে থাকেন, সেটা আমার মতো নতুন অভিনেতাকে ইন্সপায়ার করে। যিনি ইন্টারভিউতে বলতে পারেন “চব্বিশ ঘণ্টা আমি সিনেমা নিয়ে থাকি,” তাঁর কাছে অনেক শেখার থাকে। ফোটোশুটের সময় দেখলেন না সাদা ডায়েরিটা লাইটের সামনে ফেলে আলোটা কী ভাবে বাড়িয়ে নিল প্রসেনজিৎ আঙ্কল। কতটা সিনেমার মধ্যে থাকলে লোকটা এটা ভাবে।
[ সিসিডি-বারিস্তার যুগেও ইতিহাসের আভিজাত্যে গর্বিত ‘ফেভারিট কেবিন’ ]
পরের প্রশ্ন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। ‘উড়নচণ্ডী’ রোড ফিল্ম। অনেকেই বলে রোড ফিল্ম বেশ রিস্কি। পুরো ছবি আউটডোর, ওয়েদারের সমস্যা থাকে। ক্রাউড কন্ট্রোল নিয়ে সমস্যা হয়। এই ছবিরও পুরোটাই একটা ট্রাককে ঘিরে শুটিং। পরিচালক অভিষেক সাহা যখন স্ক্রিপ্টটা শোনান, এ সব ঝামেলার কথা মনে হয়নি? এর চেয়ে অনেক সেফ ছিল কোনও ঘরোয়া ছবি বানানো।
প্রসেনজিৎ: (হাসি) আমি আগাগোড়াই একটু আনসেফ খেলতে ভালবাসি। আই লাভ টু প্লে ইন অ্যান অ্যাবনর্মাল সিচুয়েশন। একটু অন্য রকম কিছু করতে চাই। প্রপার রোড ফিল্ম এখানে অনেক দিন হয়নি, তাই রোড ফিল্ম করার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আরেকটা কারণ হচ্ছে এটার গল্প। স্ক্রিপ্ট শুনে আমি কিছুজনকে বলি স্ক্রিপ্টটা শুনতে। তাদের সবার গল্পটা দুর্দান্ত লাগে। এই ছবিতে এমন কিছু চরিত্র আছে যা সচরাচর বাংলা ছবিতে দেখতে পাই না। এবং শেষ যে কারণের জন্য স্ক্রিপ্টটা এত পছন্দের তা হল এটি তিন নারীর উত্তরণের গল্প। ছবিটার জন্য চরিত্র বাছতে প্রায় ছ’মাস লেগেছে। শেষ কাস্টিং চিত্রাদি (চিত্রা সেন)।
শুনেছিলাম চল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ‘উড়নচণ্ডী’-র শুটিং হয়েছে। একটা ট্রাকের মধ্যে। আপনার মা এক সময়ের কমার্শিয়াল ছবির নামী হিরোইন ইন্দ্রাণী দত্ত। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, আপনার মায়ের কেরিয়ারে ‘উড়নচণ্ডী’-র মতো কোনও ছবি নেই যেখানে অভিনয়ের স্কোপ অনেকটা, যেখানে হিরোইন হিসেবে আপনাকে গাছ ধরে নাচতে হচ্ছে না। ডু ইউ ফিল লাকি অ্যাজ অ্যান অ্যাক্ট্রেস?
রাজনন্দিনী: ওঁর জীবনেও যথেষ্ট স্ট্রাগল ছিল। ওঁর জীবনে কিন্তু ইন্দ্রাণী দত্ত বলে কেউ ছিল না। আমার মা পাঁচ বছর বয়সে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে পাননি। তাই বুম্বা আঙ্কল বা আমার মা কিংবা অমর্ত্যর মায়ের নিজস্ব স্ট্রাগল ছিল। আমাদের হয়তো ফিজিক্যালি স্ট্রাগলটা বেশি করতে হয়েছে। কিন্তু চারিদিক থেকে আমাদের ভীষণ সাপোর্ট ছিল। আমি যদি ছবি রিলিজের একটা অথবা একশোটা কমপ্লিমেন্টও পাই, অল ক্রেডিট গোজ টু টুম্পাদি (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) আর অভিষেকদা (অভিষেক সাহা)।
[ নওয়াজকে ডিরেক্ট করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং, কেন একথা তন্নিষ্ঠার মুখে? ]
রিলিজের আগে কতটা নার্ভাস রাজনন্দিনী?
রাজনন্দিনী: যতটা প্রেশার মনে হচ্ছে ততটা সম্মানিতও হচ্ছি। নবাগতা হিসেবে যে চরিত্রটা পেয়েছি, মনে হয় না এমন চরিত্র দিয়ে কেউ কেরিয়ার শুরু করতে পারে বলে। অনেকটা এক্সপিরিয়েন্স, এক্সপোজার পাওয়ার পর মানুষ এমন চরিত্র করার বিশ্বাস অর্জন করতে পারে। এটা একটা বিশাল বড় দায়িত্বও। একবার শুটিংয়ে শরীর খুব খারাপ হয়ে পড়ে। বুম্বা আঙ্কল ফোন করে খোঁজ নেন এবং আমাকে বোঝান শরীর ঠিক রেখে শুটিং করাটা আমার রেসপন্সিবিলিটি, অন্য কারও নয়।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক যে ছিল রাজা’-তেও অভিনয় করেছেন। আপনার গুড ফ্রেন্ড সৃজিত অভিনয় নিয়ে টিপস দিয়েছিলেন?
রাজনন্দিনী: হ্যাঁ। হি ইজ আ ভেরি গুড অ্যাক্টর হিমসেলফ। ‘এক যে ছিল রাজা’ শুটিংয়ের সময় সবাই মিলে বসে কথা বলতাম। হি হ্যাজ আ লট অফ ইনসাইট। অজান্তে আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে সৃজিত।
৩ অগাস্ট ‘উড়নচণ্ডী’ রিলিজ হল, প্রিমিয়ার শেষে সবাই ওঁদের প্রশংসা করল। কিন্তু শনিবার, ৪ অগাস্ট সকালে আপনি ওঁদের কী টিপস দেবেন? বলবেন কি, আজকে সারা দিন আর ফেসবুক কী টুইটার দেখিস না?
প্রসেনজিৎ: জানি না ছবির ভাগ্য কী। তবে আমি ভীষণ কনফিডেন্ট যে বাংলা সিনেমা দু’জন ভাল অভিনেতা পেয়ে যাবে ‘উড়নচণ্ডী’র পর। নোবডি ক্যান স্টপ দেম। আমি এটা বুঝতে পারি। মিমি বা সোহিনীকে দেখে বুঝেছিলাম এরা লম্বা খেলবে। অমর্ত্য আর রাজনন্দিনীকে নিয়েও ‘কফিহাউস’-এর পাতায় সেই প্রেডিকশনটা করে রাখলাম। আর টুইটার, ফেসবুক নিয়ে ছাড়াও ওদের যে কথাটা আমি বারবার বলি তা হল নিজেদের সাকসেসটা নিয়ে বেশি ভেবো না, ওটা জাস্ট সুইচ অফ করে দাও। শুধু মনে রেখো, তোমাদের নেক্সট ফিল্ম উইল বি ইওর ফার্স্ট ফিল্ম। এটাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সারভাইভ করার সেরা মন্ত্র।
The post ‘অমর্ত্য-রাজনন্দিনী দু’জনেই লম্বা ইনিংস খেলবে’ appeared first on Sangbad Pratidin.