রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: এক যুগ আগের আইপিএল ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের গুহায় ঢুকে সিংহ শিকার করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। সিএসকে-র ১৯০ রান তাড়া করতে নেমে নাইট ওপেনার মনবিন্দর সিং বিসলা শুরুতেই সুর বেঁধে দিয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন সেবারের ফাইনালের মহানায়ক। জাক ক্যালিস প্রয়োজনের সময়ে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন।
শেষের দিকে শাকিব আল হাসান ও মনোজ তিওয়ারি নাইটদের জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। মনোজ তিওয়ারিই দুটো বাউন্ডারি মেরে কেকেআরকে জয় এনে দেন। সেবারের আইপিএল জেতার বীজ রোপন করার পিছনে অবশ্য ছিল অন্য এক কাহিনি। ২০১২ সালের আইপিএলের আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ভারত। ওই সফরটা একেবারেই মনে রাখার মতো ছিল না টিম ইন্ডিয়ার।
[আরও পড়ুন: ‘বোলাররাই ফেরাতে পারে সেই সোনার রাত’, বললেন বারো বছর আগের ফাইনালের নায়ক বিসলা]
কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর অস্ট্রেলিয়া সফরের দুঃস্বপ্নের স্মৃতি মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। বিজয় দাহিয়াকে ফোন করে নিজের লক্ষ্য শেয়ার করেছিলেন। দাহিয়াকে বলেছিলেন, ২০১২ সালের আইপিএল জিততে চান তিনি। পরে দলের সবাইকে তাঁর লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন। আইপিএলে কেকেআর-কে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে দুর্বিষহ অস্ট্রেলিয়া সফরের স্মৃতি মুছে ফেলা যাবে মন থেকে। ২০১২-র কেকেআরের সিংহগর্জনের পিছনের কাহিনি ছিল এটাই। তার পরের ঘটনা ইতিহাস। ধোনির সিএসকের বিরুদ্ধে ফাইনালে বাউন্ডারি মেরে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করার পরে বাংলার ছেলে মনোজ তিওয়ারির ব্যাট হাতে সে কী দৌড়!
ফের চিপকেই এবারের ফাইনাল (IPL Final 2024)। কেকেআরের সামনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (KKR vs SRH)। গৌতম গম্ভীর এবার দলের মেন্টর। তাঁর হাতে পড়ে বদলে গিয়েছে কেকেআর। এক যুগ আগের মায়াবী সেই রাত কি কলকাতা শিবির ফেরাতে পারবে চিপকে? কী বলছেন বারো বছর আগের কাপজয়ী দলের সোনার ছেলেরা?
মনোজ তিওয়ারি: ২০১২-র চিপককে কখনও ভুলতে পারব না। মনে আছে, দুটো বাউন্ডারি মেরে আমিই শেষ পর্যন্ত জিতিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর শাহরুখ খানের উৎসব এখনও মনে আছে। দেখছিলাম, শাহরুখ চিপকের গ্যালারি টপকে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। পরে শুনেছিলাম, শাহরুখ আসলে রেলিংয়ের উপর দাঁড়িয়ে উৎসব করতে চাইছিলেন। ম্যাচটায় চার নম্বরে ব্যাট করতে যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু আমার আগে পাওয়ার হিটারদের পাঠানো নয়। তবে মাঠে নামি যখন, ঠিক করেছিলাম, জিতিয়ে মাঠ ছাড়ব। এবারের টিমটার মধ্যেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মশলা প্রচুর রয়েছে। ২০১২-র চিপক আবার ফিরতেই পারে। এবারের টিমে ফ্লেক্সিবিলিটি দেখতে পাচ্ছি। গত কয়েক বছর রাসেলের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে আমরা প্রচুর কথা বলতাম। ব্যাটিং অর্ডারে পরে নামানো নিয়ে সমালোচনা করতাম। কিন্তু এবার দেখছি, টপ অর্ডার ভালো রান তুলে দিলে রাসেল আগে ব্যাট করতে যাচ্ছে। তবে সব সাফল্যের কৃতিত্ব একা গম্ভীরের নয়। ও ফিরে আসায় অবশ্যই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত, অভিষেক নায়ার, শ্রেয়স আইয়ারদের কথাও বলতে হবে।
লক্ষ্মীরতন শুক্লা: ভাবলে এখনও স্বপ্নের মতোই লাগে। বারোটা বছর যে কেটে গিয়েছে, মনেই হয় না। পরিষ্কার বলছি, এবারের টিমেও ২০১২-র চ্যাম্পিয়ন টিমের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। একটা দল হিসেবে খেলতে শুরু করেছে টিমটা। কোনো একজন বা দু'জনের উপর নির্ভরশীল নয়। আর একটা টিম যখন দলগত ভাবে খেলতে শুরু করে, তখন তাদের থামানো খুব মুশকিল হয়ে যায়। এই যে ফিল সল্ট চলে গেল, যে গ্রুপ পর্বে অসামান্য খেলেছে, তার কোনও প্রভাব টিমে পড়তে দেখলেন? আসলে গম্ভীর এসে টিমের বিশ্বাসটাই বদলে দিয়েছে। টিমের সবচেয়ে জুনিয়র ক্রিকেটারও বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছে যে, মাঠে নামলে ঠিক লড়ে নেবে।
মনবিন্দর সিং বিসলা (৮৯ করে ২০১২ ফাইনালের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ): ফাইনালে প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, কেকেআর চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। আমি লিখে দিতে পারি। তার কারণ, টিমটা এককাট্টা হয়ে খেলতে শুরু করেছে। আসলে ড্রেসিংরুমে গম্ভীরের মতো নেতা থাকলে টিমের চেহারাই বদলে যায়। কী জানেন, গম্ভীর এমন একজন চরিত্র যে নিজে যা পারবে না, কখনও আপনার কাছে চাইবে না। আগে নিজে করবে, তারপর টিমকে বলবে তোমরা করে দেখাও। ২০১২-র ফাইনালে আমি ৮৯ করেছিলাম। কিন্তু আমার চেয়েও বেশি কৃতিত্ব নাইট সাপোর্ট স্টাফদের। গম্ভীরের। ফাইনালের আগের কয়েকটা ম্যাচে খেলানো হয়নি আমায়। কিন্তু ফাইনাল খেলানো হয়। ভরসা রাখা হয়। আইপিএল টিমগুলো কিন্তু এতটা ভরসা দেখায় না আনক্যাপড প্লেয়ারদের প্রতি। কেকেআর যতটা দেখায়।